নীলফামারীতে আধুনিক প্রযুক্তিতে মাশরূম উৎপাদন

  18-10-2017 05:01AM

পিএনএস, নীলফামারী: আধুনিক প্রযুক্তিতে সৈয়দপুরে পুষ্টি ও ঔষধি গুণসম্পন্ন গ্যানো মাশরূম উৎপাদন করে সারাদেশে বাজারজাত করা হচ্ছে। সৈয়দপুর শহরের টেকনিক্যাল কলেজ পাড়ায় ২৪ শতক জমির ওপর ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মাশরূম সেন্টারটি।

বর্তমানে ১ একর জমির ওপর এ কেন্দ্রটিতে রয়েছে ল্যাব, কালচার হাউস ও ওয়ার্কশপ। প্রতিদিন এখানে কাজ করছে ৫০ জন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১৫০ জন শ্রমিক। এখানে গ্যানো মাশরূমের টিস্যু কালচার, মাদার কালচার, প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। এই সকল ঔষধি মাশরূম বিক্ষিপ্ত আকারে সারাদেশে বাজারজাত করা হচ্ছে।

উৎপাদিত গ্যানো মাশরূম নিজস্ব ল্যাবে প্রক্রিয়াজাত করে ক্যাপসুল ও বিভিন্নভাবে প্যাকেটজাত করে বাজারজাত করা হয়। যা এফ গ্যানো জেনারেল, এফ গ্যানো এম, গ্যানো চা, এফ মাশরূম, এফ গ্যনো তেল, ফেসিয়াল ফেস প্যাক নামে বাজারজাত করছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্যানো মাশরূম নিয়ে শ্রমিক কর্মচারীদের কর্মযজ্ঞ। মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পড়ে কাজ করছে ৫০জন নারী শ্রমিক। কেউ ল্যাবে, কেউ কালচারে, কেউবা প্রক্রিয়াজাতে ও প্যাকেজিং কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।

যুগোপযোগী এ মাশরূম উৎপাদন কেন্দ্রটি ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) ফজলে ওয়াহেদ খন্দকার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, হটি কালচার উইং এর পরিচালক কুদরত-এ-গণি, হাজি দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সাইফুল হুদার নেতৃত্বে কৃষি বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

নিয়মিত এটি পরিদর্শন করেন। এছাড়াও সারাদেশ থেকে এ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আসেন।

অনেক প্রবাসীরা দেশে এসে ব্যক্তিগত এবং পরিবারের অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের প্রয়োজনে নিজ উদ্যোগে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন।

নিজস্ব ল্যাবটারীতে উৎপাদিত বিভিন্ন গুণ সম্পন্ন এ গ্যানো মাশরূমের জন্য ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বহু সনদ পেয়েছে।

বাংলাদেশে মাশরূম উৎপাদনে সফলতা, বানিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ, সম্প্রসারণ, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, পুষ্টিপূরণ ও দারিদ্র বিমোচনে অবদানের জন্য কৃষি মন্ত্রনালয় কর্তৃক বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরুস্কার (১৪১৮ বংলা ) সালে অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এছাড়াও সারাদেশে মাশরূম উৎপাদনে শ্রেষ্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ একাডেমি অব এগ্রিকালচার অ্যাওয়ার্ড, সিটি অ্যাওয়ার্ড, স্টার অ্যাওয়ার্ড, তানজিন কালচারাল ফাউন্ডেশন সম্মাননাসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বহু পুরষ্কার ও সুনাম অর্জন করেছে।

মাশরূম চাষে আজিজুলের সফলতা দেখে তার পরামর্শমত কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও সৈয়দপুরে মাশরূম চাষ করে সাবলম্বী হয়েছে অনেক যুবক ও যুবতী।

বাংলাদেশের প্রথম গ্যানো মাশরূম বানিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণে মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী আজিজুল হক জানান, ২০১৫ সালের হরতাল অবরোধের সময় উৎপাদিত ওয়েস্টার মাশরূম প্রায় ৫০ টন নষ্ট হয়ে যায়।

সম্প্রতি ২০১৭ সালের বন্যায় খড়খড়িয়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে গ্যানো মাশরূমের ১লক্ষ স্পন্দ পানিতে ডুবিয়ে নষ্ট হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সরকার আর্থিক সহযোগিতা করলে অবকাঠামো ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজিত করে প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মানের করা সম্ভব।

দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব মাশরুম। পৃথিবীতে ৩ লক্ষ প্রজাতি মাশরূম রয়েছে। তার মধ্যে খাওয়ার উপযোগী ২ হাজার মাশরূম। ঔষধি গুণসম্পন্ন মাশরূম মাত্র দু’শটি। এর মধ্যে গ্যানো ডার্মা/মাশরূম হল প্রথম। সরকার মাশরূম প্রকল্পের ওপর একটু নজর দিলে আমাদের দেশে তৈরী পুষ্টি ও ঔষুধি গুণসম্পন্ন মাশরূম দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।

মাশরূমের সম্পর্কে মাশরূম ইন্সটিটিউটের উপ পরিচালক ড. নিরোদ চন্দ্র সরকার বলেন, গ্যানো মাশরূম মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি নিয়মিত সেবনে টিউমার, ডায়েবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডেঙ্গু, এইচআইভি, যকৃৎ, ক্যান্সার, কিডনি, জন্ডিস, গ্যাস্টিক, আমাশয়সহ বহু রোগ প্রতিরোধ, নিরাময় বা নিয়ন্ত্রণ করে।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন