আমনের বাম্পার ফলন : কৃষক-ক্রেতার স্বার্থ রক্ষা হবে তো?

  19-11-2017 06:52PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : অগ্রহায়ণে কৃষককের ঘরে নতুন ধান আসে। এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন সর্বত্র চোখে পড়ছে। মাঠে পাকা ধানের সমারোহ। নতুন ধান ঘরে তুলছেন কৃষকরা। পরপর বন্যায় ফসলহানির পর এই ধান তাদের মনে আশার সঞ্চার করেছে।

গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার সংবাদ নামক একটি সাপ্তাহিকীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সড়কপথে ঢাকা থেকে ১১ নভেম্বর সিলেটে যাই। যাওয়ার সময় রাস্তার দুপাশে সোনালি ধানের ক্ষেত চোখ জুড়িয়ে দেয়। নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ থেকে সিলেট সর্বত্র মাঠজুড়ে সোনালি ধানের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের কমতি নেই।

১৭ নভেম্বর আরেকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সৈয়দপুর যেতে হয়েছে। বিমান থেকে সোনালি একটি দৃশ্যে চোখ আটকে যায়। সহযাত্রীকে ব্যাপারটি বললে তিনি বলেন, এটি পাকা ধানের ক্ষেত। বিমান যত নিচে আসে ব্যাপারটি ততই স্পষ্ট হয়। সৈয়দপুর থেকে শষ্যভাণ্ডার জমি দিনাজপুর হয়ে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পর্যন্ত রাস্তার দুধারে পাকা ধান আমার মতো কৃষকের সন্তানের চোখ বিন্দুমাত্র এড়ায়নি।

দিনাজপুরের ধানের আবাদ অবাক করে। গাছের নিচেও যে ধান হয়, তা আগে ভাবতে কষ্ট হতো। আমাদের এলাকায় মোটেও হতো না। কিন্তু দিনাজপুরে ধান যেন সাথী ফসল। কোথাও কোথাও গাছ আর ধানের ছড়া সমান প্রায়। কল্পনা করা যায় না- এমন এমন জায়গায়ও ধানের বাম্পার ফলন। সেখানের কৃষকরাও একটু জায়গা অনাবাদি রাখার পক্ষে যে নন, সেটা বোঝা গেছে সড়ক ঘেঁষে থাকা পুরো পথে।

আশা করা যাচ্ছে, এবার ধানের ফলন সব হিসাব পাল্টে দেবে। জানা গেছে, ৯০ দিনের এই ধানের আবাদ হয়েছে বন্যার পর। আরো জানা গেছে, পরপর তিনটি ধানের ফসল হয় এসব জায়গায়। মাঝখানে গোল আলু থেকে শুরু করে শাকসবজি চাষও করেন কেউ কেউ। ধানের ক্ষেত যখন এমন সোনালি আভা ছড়ায় তখন চির বঞ্চিত কৃষকের মনে একটু হলেও আশার সঞ্চার করে।

চালের কেজি যখন ৭৪ টাকায় গিয়ে ঠেকে তখন কৃষকের ধানের গোলা শূন্য। ধান তখন মধ্যসত্তভোগীদের কাছে। কৃষক তখন সুবিধা পায় না। ক্রেতারাও পান না। বাজারে চুল পরিমাণ ঘাটতি না থাকলেও সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে দেয়। আর আমাদের সরকারও চালের দাম দ্বিগুণ করতে ভুলে না। ফলে সিন্ডিকেট মওকা পেয়ে যায়। মাঝখানে কৃষক ও খাদকের কথা ভাবার যেন কেউ নেই।

এবার যখন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা করা যায় বাজারে চালের দামে এর প্রভাব পড়বে। সিন্ডিকেটও আর ক্রেতা সাধারণের পকেট কাটার সুযোগ পাবে না। বাজার মনিটরিং না থাকায় সিন্ডিকেট লাভবান হয়। মাঝখানে উৎপাদনকারী কৃষক ও ক্রেতাসাধারণ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়।

ধানের বাম্পার ফলনের সুবাদে কৃষকের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং পাশাপাশি ক্রেতা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চালের মূল্য রাখা জরুরি। সিন্ডিকেটের ব্যাপারে আগাম সতর্ক থাকা সময়ের দাবি। এককথায় সময় থাকতে দায়িত্বশীলদের কৃষক ও ক্রেতা সাধারণের প্রতি যত্নশীল হওয়ার মোক্ষম সময় এখনই।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন