মহাদেবপুরে ফসলের মাঠ পেরিয়ে কীটনাশক আজ মানবদেহে

  20-11-2017 06:55PM

পিএনএস, নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুরে কীটনাশকের যথেচ্ছা ব্যবহারের বিরূপ প্রভাব ফসলের মাঠ পেরিয়ে আজ মানবদেহ পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। উৎপাদিত ফসল হয়ে পড়ছে বিষাক্ত, যা গ্রহণের মাধ্যমে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

অন্যদিকে কীটপতঙ্গ দমনের নামে কীটনাশক ব্যবহার পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকির সৃষ্টি করছে। পরিবেশ এবং মানুষের শরীরে জন্য ক্ষতিকারক বিভিন্ন কীটনাশকের বিষাক্ততা সম্পর্কে জানার পরও সমস্ত পৃথিবীতে এগুলো নিষিদ্ধ করে দেওয়া হলেও বাংলাদেশসহ আরও কিছু উন্নয়নশীল দেশে ক্ষতিকর কীটনাশকগুলো আশঙ্কাজনক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত এসব বিষ ও রাসায়নিক প্রয়োগে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি এসব উৎপাদিত ফসল খেলে নানা রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা থাকে।

কীটনাশক ও রাসায়নিকের অতিরিক্ত ব্যবহারে কৃষক সাময়িক লাভবান হলেও এটা সামগ্রিক প্রতিবেশের জন্য ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া বয়ে আনবে। এসব উৎপাদিত ফসল খেলে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসসহ শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন জটিলতা, কিডনি ও লিভারের নানা রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা থাকে।

এছাড়া, গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেওয়ার ঝুঁকিও থেকে যায়। তবে কীটনাশকের যথেষ্ঠ প্রয়োগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেছে মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ।

জানা গেছে, দেশি প্রজাতির বীজের বদলে হাইব্রিড বীজ ব্যবহারের কারণেও কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের প্রয়োগ বাড়ছে। অধিক ফলনের আশায় বাছ-বিচার ছাড়াই কৃষক কীটনাশকের ব্যবহার বাড়াচ্ছেন। কীটনাশকের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির আরেকটি কারণ কৃষিক্ষেত্রে দুর্বল ও অপুষ্ট বীজের উপস্থিতি। দুর্বল বীজের মাধ্যমে ফসলের মাঠে যে দুর্বল চারাগাছের উৎপাদন হয় তা সহজেই কীটপতঙ্গের আক্রমণের শিকার হয়। আর এটা রোধেই কৃষককে ফসলের মাঠে ব্যাপকমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে। কীটনাশক স্প্রে করা সবজি, ফল ও খাদ্যশস্য রান্নার পরও এর বিষ নষ্ট হয় না। কীটনাশক মেশানো খাদ্যের মাধ্যমে এসব বিষ মানুষের শরীরে জমা হতে থাকে। এর ফলে মানুষ ক্রমেই জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। মানুষের রক্তে মিশে যাওয়া এসব বিষের প্রভাব ২০ বছরেও নষ্ট হয় না।

কীটনাশকের রাসায়নিক ক্রিয়ার কারণে ক্রমেই বাড়ছে জটিল রোগীর সংখ্যা, কমছে রোগ প্রতিরোধ ও কর্মক্ষমতা। কারণ এ এলাকায় প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণ ধান, আম ও শাক-সবজি উৎপন্ন হচ্ছে তাতে মেশানো হচ্ছে প্রায় ১৪ কোটি টাকার কীটনাশক। বিপুল পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ফসলি জমি যেমন হারাচ্ছে উর্বরাশক্তি, তেমনি মানুষও আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগ-ব্যাধিতে। প্রায় সব কৃষক কীটনাশক স্প্রে করার সময় তাদের হাত-পা ঢাকার কোন কিছু ব্যবহার করে না মোজা বা গ্লাভস। নিরাপত্তার জন্য চশমা ব্যবহার এবং কাপড় দিয়ে নাক ঢাকা নিয়ে কৃষকদের যথেষ্ট জ্ঞান না থাকায় তারা জমিতে মুক্তভাবে কীটনাশক ব্যবহার করছেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ইচ্ছামতো কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। কতটুকু জমিতে কি পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত, এমনকি ফসল তোলার কতদিন আগে সবজি ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করা উচিত সে ব্যাপারে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোন ধারণা নেই।

এ বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আখতারুজ্জামান আলাল বলেন, কীটনাশক মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন খাদ্যের সঙ্গে কীটনাশক খেলে প্রথমেই পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হতে হয়। হজমে সমস্যা হতে থাকে। আর তা থেকেই অনেকে আক্রান্ত হয় জটিল রোগে। তাই কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।

সবার অক্লান্ত প্রচেষ্টা গণমানুষের সুস্বাস্থ্য ও নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করা এবং কৃষিতে কীটনাশকের ব্যবহার পরিবেশ, মানবদেহ ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিরুপ প্রভাব ফেলছে যার দিকে দৃষ্টিপাত করা উচিত। এ ব্যপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ কে এম মফিদুল ইসলাম জানান, আমরা আইপিএমসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু তারা ধৈর্য্য ধরতে চায় না। তাৎক্ষণিক ফলাফল পেতে কীটনাশক বিক্রেতাদের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে একের পর এক বিভিন্ন কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহার করে। যা জমি ও মানবস্বাস্থ্য উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন