মহাদেবপুরে আমন ধানে ফলন বিপর্যয়, দিশেহারা কৃষকরা

  04-12-2017 07:01PM

পিএনএস, মহাদেবপুর ( নওগাঁ ) প্রতিনিধি : নওগাঁয় চলতি আমন মৌসুমের মোটা জাতের ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক- কৃষানীরা। নতুন ধান ঘরে ও হাট-বাজারে উঠতে শুরু করলেও ফলন বিপর্যয়ের কারনে হারিয়ে গেছে কৃষক-কৃষানীর মুখের হাঁসি। লোকসানের মুখে পড়ার আশংখ্যায় দিশেহারা কৃষকরা।

সারা দেশের মানুষের কাছে শস্য ভান্ডার বলে খ্যাত নওগাঁ জেলা। এ জেলায় আমন ধান রোপন মৌসুমের শুরুতেই দেখা দিয়েছিল ভয়াভয় বন্যা। বন্যার কারনে আগাম রোপন কৃত জেলার মান্দা, রানীনগর, আত্রাই, সাপাহার, পতœীতলা ও ধামুরহাট উপজেলায় অনেক মাঠের আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবং বন্যার কারনে এসব উপজেলায় রোপন মৌসুমের একেবারে শেষেরদিকে আমন ধানের চারা রোপন করেন র্কষকরা।

তারপরেও জেলার উপজেলায় কৃষি অফিস ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে জেলার প্রতিটি উপজেলায় শোভা পাচ্ছিল মাঠের পর মাঠ আমন ধানের ক্ষেত।

আমন চাষের মাঝামাঝি সময়ে পচামিনা,প্লাষ্ট,কারেন্টপোকা ও মাজরা পোকার আক্রমন থাকলেও স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে পরামর্শ দেয়ায় কীটনাশক স্প্রে করে পচামিনা ও মাজরা পোকা দমন করতে সক্ষম হয়েছিলেন জেলার কৃষকরা। আর একারনেই বিগত বছরের মত এবারও আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেধে ছিলেন জেলার কৃষক-কৃষানীরা।

এক কথাই রোপন থেকে শুরু করে কাটার সময় পর্যন্ত আমন ধানের ক্ষেত ভালই ছিল, শেষ সময়ে জেলায় মাঠের পর মাঠ সর্বত্রই আমন ক্ষেতের সোনালী ও সবুজ ধানের শীষের সমারহ খাচ্ছিল দোল, আর কৃষক-কৃষানীর মুখেও ফুটে উঠেছিল হাসির ঝিলিক।

বিশেষ করে বাম্পার ফলন হবে এমন আশায় স্বপ্নে বিভোর হয়ে ছিলেন জেলার মহাদেবপুর উপজেলার কৃষকরা, কারন মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি অফিস ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ধান রোপনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাঠে গিয়ে ক্ষেত দেখে কৃষকদের পরামর্শ দেয়ায় এ উপজেলার প্রতিটি মাঠেই ধানের ক্ষেত সবচেয়ে ভালছিল।

মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাশিয়া গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন মন্ডল জানান, আমরা পরিবারের তিন ভাই মিলে মোট ১৭ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। ধানের ক্ষেত ভালই ছিল, কিন্তু ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পর আমরা অবাক হয়েছি কারন, বিগত আমন মৌসুমে প্রতি বিঘায় স্বর্ণা ৫ জাতের ধান সর্বনি¤œ ১৮ থেকে ২২/২৩ মন পর্যন্ত হয়েছিল আর এবারে ১২ মন থেকে ১৫/১৬ মন প্রতি বিঘায় ধানের ফলন হচ্ছে। একই উপজেলার বাগধানা গ্রামের দুলাল হোসেন ও একই মন্তব্য করে বলেন, বিগত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে স্বর্ণা ৫ জাতের ধান বিঘা প্রতি ৫/৬ মন করে ফলন কমেছে। তিনি আরো বলেন, বিঘা প্রতি আমাদের খরচ এবার বাড়লেও ধানের ফলন বিপর্যয় হওয়ায় আমরা কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়ছি।

উপজেলার শিকারপুর গ্রামের কৃষক ময়েজ চৌধুরী বলেন, আমাদের মাঠের ধানের অবস্থা ভাল থাকলেও কাটা-মাড়াইয়ের পর ব্যপক ফলন বিপর্যয় হয়েছে, এমনকি প্রতি বিঘা জমিতে মাত্র ৮/৯ মন থেকে শুরু করে ১২/১৩ মন হাড়ে স্বর্ণা- ৫ জাতের ধান হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বর্তমানে হাট-বাজারে স্বর্ণা ৫ জাতের নতুন ধান প্রতিমন ৮৮০ থেকে ৯২০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে জানিয়ে উপজেলার খোর্দ্দনারায়নপুর গ্রামের কৃষক নজরুল বলেন, বাজারে ধানের দাম না বাড়লে হলে আমরা (কৃষকরা) লোকসানে পরব, কারন হিসেবে তিনি আরো বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এবারের ধান চাষে খরচ বেশী পড়েছে অন্নদিকে প্রতি বিঘায় ৫/৬ মন ধানের ফলন কম হয়েছে জানিয়ে বাজারে প্রতি মন ধান এক হাজারের উপর থাকলে কৃষকরা লোকসানের হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবেন বলেও জানান তিনি।

মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ কে এম মফিদুল ইসলাম জানান,এবারের আমন মৌসুমে মহাদেবপুর উপজেলায় সর্বমোট ২৭ হাজার ৩ শ' ৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছে উপজেলার কৃষকরা। এর মধ্যে মোটা জাতের ১৮ হাজার ৫ হেক্টর ও চিনি/ আতব ৯ হাজার ৩শত হেক্টর। মহাদেবপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডি. কৃষিবিদ আরিফুজ্জামান বলেন, মাঠের ধান গাছ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালই ছিল। তারপরেও ধানের ফলন বিপর্যয়ের কারন হিসেবে তিনি বলেন, বিশেষ করে মোটা জাতের মাঠের ধান গামড়ে বসা শুরু করেছে ও কিছু ধানের শীষ বের হতে শুরু করেছিল আর ঠিক সেই সময়ই ২দিন ব্যাপি বৈরী আবহাওয়া ( ঝড়-বৃষ্টি) হওয়ার কারনে ধানের গাছে-গাছে বাড়ি খাওয়ায় ফলন বিপর্যয় হচ্ছে বলে ধারনা পোষন করেন তিনি। অবশ্য উপজেলার কৃষকরা ও ধানের শীষ বের হওয়ার সময় বৈরী আবহাওয়ার কারনেই ধানের ফলন কমেছে এবং চিতা বেড়েছে বলেই মন্তব্য করেছেন। তবে এ উপজেলায় আতব চিকন ধানের বাম্পার ফলন হবে বলেও কৃষকরা আশা প্রকাশ করেছেন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন