ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহে মেতে উঠেছেন তারা

  18-12-2017 09:41AM


পিএনএস ডেস্ক: ডিসেম্বর মাস, বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, স্কুল বন্ধ এখন চলছে ধান কাঁটার মৌসুম। কৃষক কাস্তের টানে চলেছেন মুঠি মুঠি ধানের গোছা। আর গৃহকর্মীরা যেন ধান উড়ানো আর শুকানোর ধান ঢোলায় তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।

এরই ফাঁকে কাঁধে কোঁদাল নিয়ে এ মাঠে-ও-মাঠে এ ক্ষেত ও ক্ষেতে ছুটে চলেছে শিশু থেকে বয়স্করা। ইঁদুরের গর্ত খুঁজে ধানের শীষ সংগ্রহ করতে এদের এই ছুটাছুটি।

আর আমনের এই সময় অসহায় লোকজন ইঁদুরের গর্তে ধান সংগ্রহ করে। তাদের সঙ্গে গ্রামের শিশু থেকে বয়স্করাও যোগ দেয়।

সরজমিনে গেয়ে দেখা যায়, ধান কেটে নেয়ার পর ফসলের মাঠ জুড়ে পড়ে রয়েছে ধান গাছের গোড়া। যা স্থানীয় ভাষায় নাড়া নামে পরিচিত। সেই নাড়ার ফাঁকে রয়েছে ঝরে পড়া সোনালি ধান। কীট-পতঙ্গের আক্রমণে অনেক ধানের শীষের শাখা-প্রশাখা ভেঙে মাটিতে পড়েছে। গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের বউ-ঝি এবং ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে সেই ধান কুড়িয়ে নিচ্ছেন। কেউ হাতে ডালি, চালুন, কারো হাতে বাশিলা, ঝাটা আবার কেউ হাতে ব্যাগ নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। অনেকের কাঁধে কোঁদাল আর কারো হাতে শাবল রয়েছে।

ছোট ছোট ছেলেদের দৃষ্টি কেবল গর্তে, নাড়ার ফাঁক দিয়ে মাটির দিকে ইঁদুরের কেটে নিয়ে যাওয়া ধান। ইঁদুরের গর্ত কিংবা ঝরে পড়া ধান দেখলেই ওদের চোখে-মুখে সোনালি হাসি ফুটে ওঠে। ইঁদুর কৃষকের ক্ষেত থেকে ধানের শীষ কেটে নিয়ে আপদকালীন খাদ্য হিসেবে মাটির নিচে গর্তে মজুদ করে রাখে। ধান কুড়ানিরা সেই গর্ত খুঁড়ে ইঁদুরের খাদ্য বের করে নেয়। এছাড়া মাটি থেকে একটি একটি করে ধান কুড়িয়ে মুঠোয় করে ডালায় ভরে।

মৌসুমের পুরো সময়টায় তারা এভাবেই ধান সংগ্রহ করছেন। এ কাজের সঙ্গে গ্রামের অভাবী-হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন জড়িয়ে পড়েছেন। তারা প্রত্যেকে দৈনিক ৪/৫ কেজি করে ধান সংগ্রহ করছেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোন্নাফ (১০) ও জেসমিন (১০) জানান, তাদের বাবা রিকশাচালক আর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। তাই সংসারে সহযোগিতা করতে স্কুল ছুটি হলেই ধান কুড়াতে মাঠে চলে যায় তারা। ধান কুড়িয়ে এখন জমা করছে তারা। যখন পরিমাণে বেশি হবে তখন তা বিক্রি করা হবে।

উপজেলার একাধিক এলাকার ধানক্ষেতের মালিক জানান, স্কুল ছুটি পর প্রতিদিন ছোট ছোট শিশুরা মাঠে চলে আসে। ধান কাটার পড়ে নাড়ার সঙ্গে দুই এক গোছা ধান থাকলে সেগুলো কুড়িয়ে নেয় তারা।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিধু ভূষণ রায় জানান, ক্ষেতে কীট-পতঙ্গের আক্রমণে অনেক ধানের শীষের শাখা-প্রশাখা ভেঙে মাটিতে পড়ে যায়।

এছাড়া ইঁদুর আপৎকালীন খাদ্য হিসেবে কৃষকের ক্ষেতের ধান কেটে গর্তে মজুদ করে রাখে। স্থানীয় দরিদ্র শ্রেণির শিশুরা ওই ধান মাটি খুঁড়ে বের করে আনছে। এ ধান তাদের পরিবারে কিছুটা হলেও অভাবতাড়াতে সাহায্য করে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন