মহাদেবপুরে সফল তার্কি খামারী নয়ন

  20-02-2018 05:47PM

পিএনএস, নওগাঁ প্রতিনিধি : দেখতে কিছুটা ময়ূরের মতো। নিজের রুপের বর্হিপ্রকাশ করতে মাঝে মধ্যে ময়ুরে মতো পেখম মেলে ঘুরে বেড়ানো। একসাথে সবাই ডাকাডাকি। খুবই শান্ত প্রকৃতির প্রাণি। আর এ প্রাণিটির নাম তার্কি। তার্কি মুরগি নামেও পরিচিত।

বাংলাদেশে এ নামটি খুববেশি পরিচিত না হলেও পশ্চিমা দেশগুলোতে এ জাতের মুরগির জনপ্রিয়তা রয়েছে অনেক। ঝুঁকি ও ঝামেলা কম হওয়ায় বেকার ও শিক্ষত যুবকরা এখন তার্কি পালনের দিকে আগ্রহী হচ্ছেন। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভবানিনগর গ্রামের তার্কি খামারী নয়ন। তিনি দীর্ঘদিন ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। চাকুরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে আসেন। এরপর বাড়িতে খামার করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা থেকে গত ৫ মাস আগে ঢাকা থেকে এক মাসের ৫০টি তার্কি বাচ্চা, ১২টি তার্কি মুরগি এবং ৪টি মোরগ (পুরুষ) দিয়ে খামার তৈরী করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছোট বড় সবধরনের তার্কি মুরগি খামারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খামারের পাশে ঘুরে ঘুরে সবুজ ঘাস খাচ্ছিল। পাশেই সংগ্রহ করে রাখা কলমি শাক ছোট ছোট করে কাটছিলেন খামারি। আর মাঝে মধ্যে ময়ুরের মতো পেখম মেলছে এবং একসাথে সবাই ডাকাডাকি করছে। পালনে সুবিধা এবং দেশী মুরগির চেয়ে রোগ-বালাই একবারেই কম।

এছাড়া খাবারের খরচও কম। বাড়তি খাবার বাজার থেকে কিনতে হয়না। প্রকৃতিতে এদের খাবার পাওয়া যায়। অবশ্য দানাদার খাবারের চেয়ে কলমি শাক ও বাধা কপিই বেশি পছন্দ করে এ জাতের মুরগি। একটি বাচ্চা তার্কি ৫-৬ মাস পালনের পর ডিম দেয়া শুরু করে। ৬ মাসে ওজন দাঁড়ায় প্রায় ৭-৮ কেজি। প্রতিটি তার্কির খরচ হয় ৭০০-৮০০টাকা। আর বিক্রি হয় নূন্যতম দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মুরগিতে লাভ আসে প্রায় ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা।

খামারী নয়ন বলেন, দেড় মাস থেকে সমন্বিত খামার তৈরী করার কাজ করছেন। নাম রাখবেন ‘চিশতিয়া খামারবাড়ী’। যেখানে গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগি থাকবে। এলাকার লোকজন এ মুরগি বিষয়ে তেমন ধারনা নাই। যারা দেখতে আসেন তাদের তার্কি বিষয়ে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছি। এখন প্রতিদিন ৪টি করে ডিম পাচ্ছি। প্রতি হালি ডিম ৮০০ টাকায় বিক্রি করেন। বাচ্চা ফুটানোর জন্য অনেকে নিয়ে যাচ্ছেন। নিজেও দেশীয় পদ্ধতিতে বাচ্চা ফুটানোর চেষ্টা করছি। তবে তার্কি সরবরাহ কম থাকায় বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যখন সরবরাহ বেশি হবে তখন দামও কমে আসবে। সবাই পালনের আগ্রহ দেখাবে। এটি উৎপাদনের মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে মাংস। স্ত্রী তানজিলা বলেন, তার্কি মুরগি কলমি শাক, বাধাকপি, ভুট্টা, চাল, ভাতসহ অন্যান্য খাবার খায়। তবে দানাদার খাবারের চেয়ে কলমি শাক ও বাধাকপিই বেশি পছন্দ। পালনের জন্য খুবই সুবিধা। রোগ বালাইও কম। গরু, খাসি ও দেশী হাঁস-মুরগীর চেয়ে এই তার্কির মাংসের স্বাদ বেশি ও চর্বির পরিমান কম। আবার রান্নাও হয় অল্প সময়ের মধ্যে।

নওগাঁ জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: উত্তম কুমার দাস বলেন, পুষ্টির চাহিদা পুরনে তার্কির মাংস থেকে ঘাটতি পূরন সম্ভব। আর এই পুষ্টির উৎস হিসেবে তার্কির গুরুত্ব মুরগী ও হাঁসের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। এটি একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা পুরন করছে।

অন্যদিকে বেকারদের বেকারত্ব দুর করছে। তাই তার্কি মুরগি পালন দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভুমিকা রাখছে বলে মনে করেন। যদি কেউ তার্কি খামার করতে চায় তাহলে তাদের কারিগরী সুযোগ সুবিধা ও পরামর্শ প্রদান করা হবে। নওগাঁ জেলায় প্রায় ৫০টির মতো তার্কি মুরগির খামার আছে। তার্কি মুরগি বিদেশী হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে এর উজ্জল ভবিষ্যৎ লক্ষ্য করা গেছে। তাই তার্কি পালন করে খুব সহজেই নিজের ভাগ্য বদলানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন