ব্যস্ত চুয়াডাঙ্গার আম চাষীরা

  24-02-2018 10:41AM

পিএনএস ডেস্ক :‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে, আম কুড়াতে সুখ, পাকা জামের মধুর রসে, রঙিন করি মুখ’ - পল্লীকবি জসীমউদ্দিনের ‘মামার বাড়ি’ কবিতার পঙক্তিগুলো এখনো মনে পড়ে। যদিও আম কুড়ানোর সময় এখনও আসেনি। তবে মুকুলের ঘ্রাণ বইতে শুরু করেছে।

চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। ফাল্গুনি হাওয়ায় থোকায় থোকায় দুলছে আমের মুকুল। শীতের শেষে আম গাছের কচি ডগা ভেদ করে সবুজ পাতার ফাঁকে হলদেটে মুকুলগুচ্ছ যেনো উঁকি দিয়ে হাসছে।

বাগানের সুনসান নীরবতা চিরে একটানা গান শোনাচ্ছে মৌমাছি। মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মৌমাছির গুনগুন শব্দে মুখরিত আম বাগান। যে গন্ধ মানুষের মন ও প্রাণকে বিমোহিত করে তুলেছে।

শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্র আমগাছ তার মুকুল নিয়ে হলদে রঙ ধারণ করে সেজেছে এক অপরূপ সাজে। কয়েক দিনের মধ্যে আমের মুকুল পরিণত হবে এক পরিপূর্ণ দানায়। আমের মুকুলে কৃষকের আগামীর স্বপ্ন দোল খাচ্ছে। সেই সোনালি স্বপ্নকে বুকে ধারণ করেই বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত চুয়াডাঙ্গার আম বাগান চাষীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে নানা জাতের আম। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই আম চাষের জমি বাড়ছে। জেলার আম বাগান বা ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা প্রায় প্রতিটি গাছেই কমবেশি মুকুল ধরেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জেলাতে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছিলো। যেখান থেকে আম উৎপাদন হয় এক লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর আমের আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৯২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৯২ হেক্টর জমিতে বেশি আমের আবাদ হয়েছে। যেখান থেকে আম উৎপাদন হবে প্রায় এক লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন আম। এ জেলাতে প্রধান প্রধান আমের আবাদ হচ্ছে, আম্রপালি, লেংড়া, ফজলি, হাড়িভাঙা, মল্লিকা, থাই, গোপালভোগ, বারি ১০, দেশী, বেনারসি সীতাভোগ ইত্যাদি জাতের আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সিংহভাগই আম্রপালি।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়নের হোগলডাঙ্গা গ্রামের চাষী আনিছুজ্জামান জানান, এ বছর আমার আম গাছে প্রচুর পরিমাণে মুকুল ধরেছে। এখন পর্যন্ত আমের মুকুলে কোনো রোগবালাই আক্রমণ করেনি। আবহাওয়াও ভালো। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে আশা করছেন, প্রতিটি আম গাছেই পর্যাপ্ত পরিমাণে আম ধরবে। গত বছর তার সাড়ে ১৫ বিঘা জমিতে আমের বাগান ছিল। যা বিক্রি করেছিলেন সাত লাখ টাকায়। এ বছর ২০ বিঘা আমের বাগান আছে। এলাকাতে ফসলি চাষের জমি রেখে অনেকেই আম বাগান করেছে।

একই ইউনিয়নের নতিপোতা গ্রামের আম চাষি আব্দুর রাজ্জাক জানান, মূলত আমের ফলন ভাল পেতে হলে আমগাছের পরিচর্যা শুরু করতে হয় আম শেষ হওয়ার সাথে সাথে। যেমন- গাছের পুরাতন বোটা ভেঙে ফেলা। বাগানে চাষ ও সেচ দেয়া। পাতা পরিষ্কার রাখা। মুকুল আসার আগে এবং পরে স্প্রে করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক নাঈম আস সাকীব জানান, জেলায় এ বছর আমের উৎপাদন ভালো হবে। কারণ এ বছর আমের মুকুল ধরার সময় প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ এখন পর্যন্ত দেখা দেয়নি। এমনকি তেমন কোনো রোগবালাইও হয়নি। অন্যান্য বছরের তুলনায় বাড়তি সতর্কতাও আছে আমাদের। যদি প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হয় তাহলে কৃষকরা বাম্পার ফলন পাবেন বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, আম চাষে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। যার কারণে অনেকই এ পেশায় এগিয়ে আসছেন। বর্তমানে জেলাতে আবাদি জমিতে আমের চাষ (বাগান) করা হচ্ছে। আমের ভাল ফলন পেতে আমরা কৃষকদের বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিচ্ছি। এ জন্য মাঠ পর্যায়ে আমাদের অফিসাররা কাজ করছেন।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন