মহাদেবপুরে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছে কৃষকরা

  28-03-2018 07:10PM

পিএনএস, নওগাঁ প্রতিনিধি : ধানের রাজ্য হিসেবে খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় ধান ক্ষেতের মাঝে ১৫-২০ হাত দূরে দূরে গাছের ডাল পোঁতা। সেখানে কিছুক্ষণ পরপর উড়ে এসে বসছে আর ক্ষেতের পোকা ধরে খাচ্ছে নানা জাতের পাখি। এভাবে কীটনাশক ছাড়া সহজেই দমন হচ্ছে পোকা। পোকা দমনের পরিবেশবান্ধব এই পদ্ধতির নাম পার্চিং। পার্চিং ইংরেজী শব্দ। পাখি বসে এমন উঁচু ডাল বা খুঁটির নাম পার্চ। আর পার্চ থেকে পার্চিং নামের উদ্ভব।

ফসলের জমিতে ডাল, কঞ্চি, বাশের খুঁটি এগুলো পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করলে পাখি ক্ষতিকারক পোকার মথ, বাচ্চা, ডিম খেয়ে পোকা দমন করে। ফসলের পোকা দমনের এই পদ্ধতি অত্যান্ত কম ব্যয়বহুল এবং পরিবেশবান্ধব। পার্সিং দুই প্রকার, ডেড পার্সিং ও লাইভ পার্সিং। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্সিং এবং ধইঞ্চা, কলা গাছ ইত্যাদি জীবন্ত পুঁতে দিলে তা হবে লাইভ পার্সিং। কীটনাশক ছাড়াই পোকা দমনের এই পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে ধানের জমিতে পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২৬ হাজার ২'শ ৪৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কৃষকরা ২৭ হাজার ৪'শ ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। এরমধ্যে ২৫ হাজার ২'শ ৩৫ হেক্টর জমিতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকা দমন করেছে কৃষকরা। এতে ফসলের জমিতে কীটনাশক ব্যবহার অনেকাংশে কমে গেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের দাবি, পোকা দমনে এই পদ্ধতি শতকরা ৭৫-৮০ ভাগ কার্যকর।

এ কারণে প্রতি একরে কীটনাশক খাতে চাষিদের খরচ কমেছে এক হাজার টাকারও বেশি। পাশাপাশি কৃষকেরা এই পদ্ধতি ব্যবহার শুরুর পর পাখির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। মহাদেবপুর সদর, উত্তরগ্রাম, খাজুর, হাতুড়, চান্দাশ, সফাপুর, ভিমপুর, রাইগাঁ, চেরাগপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ধান ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার দেখা গেছে। জমিতে পুঁতে দেয়া গাছের ডাল ও বাঁশের কঞ্চিতে শালিক, ফিঙে, বুলবুলিসহ নানা জাতের পাখি এসে বসছে। একটু পরপর ডাল থেকে জমির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছিল পাখিগুলো। যে জমিতে পোকা বেশি সেই জমিতে পাখির আনাগোনাও বেশি।

উপজেলার সভাপুর গ্রামের কৃষক আরাফাত হোসেন বলেন, ধান লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে জমিতে ডাল পুঁতে দিয়েছি, ওই ডালে পাখি বসে পোকা ধরে খেয়ে ফেলে। জমিতে পোকা আক্রমন করতে পারে না। কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না বিধায় উৎপাদন খরচ অনেক কমে গেছে। একই গ্রামের কৃষক ফারুক বলেন, ধান ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির সুফল পাওয়া যাচ্ছে। এতে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একেএম মফিদুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের মাঝে পার্চিং পদ্ধতি সাড়া জাগিয়েছে। কীটনাশক ব্যবহার না করে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় কৃষকদের ফসল উৎপাদনে খরচ কমে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ধান ক্ষেতে বেশি ক্ষতি করে মাজরা পোকা। এই পোকা ধান গাছে গর্ত করে বাচ্চা জন্ম দেয়। একটি মাজরার মথ থেকে ২০০-৩০০ বাচ্চার জন্ম হয়। শুধু একটি পাখির দ্বারা প্রতিমাসে কমপক্ষে দুই লাখের উপরে পোকা ধ্বংস করা সম্ভব।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন