চিরিরবন্দরে লিচুর বাগান যেন ‘মধুর হাঁড়ি’

  29-03-2018 04:17PM

পিএনএস, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দরে সুস্বাদু ও মিষ্টি লিচুর পরিচিতি দেশ জুড়ে। তাই এবার লিচু বাগানে মৌ মাছির বক্স বসিয়ে মধু আহরন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কয়েকজন মৌ চাষি। এর ফলে একদিকে যেমন মৌ চাষিরা মধু সংগ্রহ করে লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে মৌ মাছির মাধ্যমে মুকুলে মুকুলে পরাগায়ন ঘটায় লিচু গাছ মালিকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। এক কথায় বাগানে মৌ চাষ করে চাষিরাও খুশি এবং মালিকরাও খুশি।

চিরিরবন্দরে গড়ে উঠেছে প্রায় ১১ শত লিচু বাগান। লিচু বাগান গুলোতে প্রতি বছর খরচ হয়না এবং অল্প পরিচর্যায় প্রতি বছর মোটা অঙ্কের অর্থ আয় হয় বলে অনেকেই লিচুর বাগান করেছেন। চলতি বছর চিরিরবন্দর উপজেলায় ৫ শত ১০হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। বর্তমানে লিচুর বাগানগুলো মুকুলে ছেয়ে গেছে।

উপজেলার পুন্ট্রি ও ভিয়েল ইউনিয়নের সড়কের পাশ দিয়ে অবস্থিত লিচু বাগান গুলোতে ব্যাপক মুকুল এসেছে। এরমধ্যে ব্যবসায়ী আলহাজ্ব ফেরাজ উদ্দিন ও আলহাজ্ব ওয়াদুদ রহমানের লিচু বাগান গুলোতে প্রায় ২ শতাধিক লিচু গাছ থাকায় সুদুর টাঙ্গাইল,সিরাজগঞ্জ ও সাতক্ষীরা থেকে মো: রাশেদুল ইসলাম বাবলু ও নজরুল ইসলাম সহ ১০ জন মৌচাষি ১৫টি বাগানে ১ শত থেকে ১ শত ৫০টি করে ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির মৌমাছির বক্স বসিয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মৌচাষ করে মধু সংগ্রহ করছেন।

মৌ চাষি দুলাল ইসলাম জানান, বৈজ্ঞানিক উপায়ের উদ্ভাবিত মৌচাষ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন তারা। ওই বাগানে তারা দুই শতাধিক এর বেশি ব্রড ও নিউক্লিয়াস নামের ছোট বড় কাঠের বক্স স্থাপন করেছেন। প্রতিটি বক্সে একটি রানী মৌমাছি, একটি পুরুষ মৌমাছি ও অসংখ্য এপিচ মেইলিফ্রা জাতের কর্মী মৌমাছি রয়েছে। কর্মী মৌমাছিরা মৌ মৌ গন্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে যায় লিচুর মুকুলে। পরে মুকুল হতে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছির দল নিজ নিজ কলোনিতে মৌচাকে এনে জমা করছে। ১০/১৫ দিন অন্তর অন্তর প্রতিটি বক্স হতে চাষিরা ৫/৬ মণ মধু সংগ্রহ করছেন। যে লিচু গাছে মৌমাছির আগমন বেশি হয় সে গাছের মুকুলে পরাগায়ন ভাল হয়। ফলে ওই গাছে বা বাগানে লিচুর যেমন বাম্পার ফলনের সম্ভবনা থাকে, তেমনি মৌ চাষিরা বেশি মধু সংগ্রহ করে বানিজ্যিকভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারে। উপজেলার বিভিন্ন বাগান থেকে মৌ চাষীরা প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ মণ মধু সংগ্রহ করে বাজারজাত করছে।

কাঠের তৈরী শত শত বিশেষ বাক্সের মাধ্যমে মৌ চাষ মধু সংগ্রহ করা দৃশ্য দেখে এলাকাবাসীও উদগ্রীব হয়ে ছুটে আসছেন মধু কেনার জন্য লিচু বাগানে। ক্রেতা দেলোয়ার হোসেন জানান, বাজারে খাঁটি মধু পাওয়া যায়না। তাই স্ব-চোখে নির্ভেজাল মধু সংগ্রহ করতে পেরে তারা নিজেকে ধন্য মনে করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো: মাহমুদুল হাসান জানায়, চলতি বছর প্রতিটি লিচু বাগানে ভালো মুকুল এসেছে। আর এ কারণে প্রচুর মৌ মাছির আগমন দেখা দিয়েছে। লিচু গাছ থেকে মৌ মাছি মধু আহরণের ফলে গাছে গাছে বেশি করে পরাগায়ন হয় এবং শতকরা ২০-৩০ ভাগ লিচুর বেশি ফলন হয়। এতে কৃষক ও মৌচাষী উভয়ই লাভবান হয়ে থাকেন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন