পাইকগাছায় ৪০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির আশা করছেন চাষীরা

  25-04-2018 08:54PM

পিএনএস, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : খুলনার পাইকগাছায় চলতি মৌসুমে ৪০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির আশা করছেন চাষীরা। এবার ৪১০ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের তরমুজের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২শ হেক্টর বেশি। তরমুজ চাষ লাভ জনক হওয়ায় তিলচাষ থেকে মুুখ ফিরিয়ে নিয়ে কৃষক তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। এদিকে পানির অভাবে তরমুজ চাষ কিছুটা বিঘিœত হলেও ভাল ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন তারা।

সূত্রমতে, উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের ২২নং পোল্ডার ও গড়ইখালী ইউনিয়নের বাইনবাড়ীয়া কুমখালীতে দীর্ঘদিন তরমুজ চাষ হয়ে আসছে। এ এলাকা তরমুজ চাষের জন্য সমৃদ্ধ। এখানকার তরমুজের স্বাদেও রয়েছে ভিন্নতা। অন্যান্য স্থানের চেয়ে এখানকার তরমুজ সুস্বাদু হওয়ায় উৎপাদিত তরমুজ রাজধানী শহর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে। এলাকার শত শত কৃষক তরমুজ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তরমুজ মৌসুমে সেচ ও পরিচর্যায় শত শত নারী ও পুরুষের মৌসুমি কর্মসংস্থান হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্রমতে, উপজেলায় ২১০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার স্থলে ৪১০ হেক্টর জমিতে হাইব্রীড জাতের পাকিজা ও ড্রাগন তরমুজের আবাদ হয়েছে। উন্নত জাতের মধ্যে পাকিজা ৭০ শতাংশ ও ড্রাগন ৩০ শতাংশ। দেলুটি ইউনিয়নের ২২ নং পোল্ডারে ৩৮০ হেক্টর এবং গড়ইখালী ইউনিয়নের বাইনবাড়ীয়া কুমখালী এলাকায় ৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই সেচের জন্য পানির কোনো সমস্যা ছিল না। তবে এবছর তেমন কোনো বৃষ্টি না হওয়ায় শেষ দিকে এসে পানির চরম সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে দেলুটি ইউনিয়নের ২২নং পোল্ডারের তরমুজ চাষিরা চরম বিপাকে পড়েন। খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এ সংকট সৃষ্টি হয়।

কালিনগর গ্রামের মিন্টু বালা জানান-চলতি মৌসুমে আমি ১২ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। খালের জল শুকিয়ে যাওয়ায় মৌসুমের শেষের দিকে এসে পানি নিয়ে মহাবিপাকে রয়েছি। পাইপ দিয়ে কয়েক’শ মিটার দূর থেকে জল এনে সেচ দিতে হচ্ছে। আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে তরমুজ বিক্রির উপযোগী হবে। তিনি আরো বলেন-এ বছর বিঘা প্রতি ৬০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি হবে বলে আশা করছি। পার্বতী সানা জানান-তরমুজ চাষের অপার সম্ভাবনা থাকলেও সুষ্ঠু সেচ ব্যবস্থাপনা না থাকায় তরমুজ চাষ বিঘিœত হচ্ছে। বসতবাড়ির পুকুর থেকে পাইপের মাধ্যমে ক্ষেতের সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ ভাবে জল দেয়া অনেক কঠিন কাজ। লতিকা ও কামনা বালা জানান-তরমুজ চাষ মৌসুমে সেচ ও পরিচর্যায় শ্রমিকের কাজ করে ঘন্টা প্রতি ৫০ টাকা হারে বাড়তি আয় করে থাকি।

চাষী মেঘনা বালা জানান-উৎপাদিত তরমুজ পর্যায় ক্রমে ২ থেকে ৩ বার উত্তোলন করা হয় এবং তা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারী বিক্রি করা হয়ে থাকে। দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান, ২২নং পোল্ডার তরমুজ চাষের জন্য সমৃদ্ধ। গত বছর ২০কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছিল। এ বছর আশা করছি চাষ বেশি হওয়ায় ২২নং পোল্ডার থেকে ৪০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান-তরমুজ চাষ লাভ জনক হওয়ায় তিলচাষ বাদ দিয়ে চাষীরা এখন তরমুজ চাষে ঝুঁকছে। ফলে এ বছর লক্ষমাত্রার চেয়ে ২শ হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। কৃষকদের এ বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ সহ সকল উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। আশা করছি বিগত বছরের চেয়ে এ বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হবে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন