মহাদেবপুরে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

  03-09-2020 08:38PM

পিএনএস, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : দেশের উত্তরাঞ্চলের খাদ্যভা-ার খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় অভ্যন্তরীণ সরকারিভাবে খাদ্য গুদামে বোরো মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় গুদামে ধান বিক্রিতে আগ্রহী নন কৃষক। স্থানীয় হাট বাজারে ধান বিক্রি করে অধিক লাভবান হচ্ছেন তারা। তেমনি বাড়তি দামে ধান ক্রয় করায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরও খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করেননি মিলাররা। গত ১৪ মে মহাদেবপুর সদর খাদ্য গুদামে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করেন সংগ্রহ কমিটি। সংগ্রহের শেষ সময় ছিলো ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত। সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে খাদ্য গুদাম কতৃপক্ষ।

এদিকে চাল সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ যে সকল মিলাররা চাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন বা অসহযোগিতা করেছেন সমপনান্তে তাদের বিরুদ্ধে চুক্তিপত্র ও চালকল লাইসেন্স ইস্যু সংক্রান্ত বিধিবিধানসহ প্রাসঙ্গিক আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে মর্মে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাবর চিঠি দিয়েছেন খাদ্য অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ শাখা।

উপজেলার সফাপুর গ্রামের কৃষক মকলেছুর রহমান, তোফাজ্জল হোসেন ও নাটশাল গ্রামের কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বিগত বছরের চেয়ে এবার বাজারে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় সেখানেই ধান বিক্রি করা হয়েছে। সরকার এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান কিনলেও ধান শুকানো, ফ্যানিং করা, ব্যাংক একাউন্ট খোলা, ময়েশ্চারসহ নানা রকম ঝামেলা পোহাতে হয়। ধান দেওয়ার পরও টাকা উঠাতে গিয়ে ধাপে ধাপে ঘুষ দিতে হয়। গুদামে ধান মাপার সময় টাকা দিতে হয়। এছাড়াও ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য এবং নানা হয়রানি হতে হয় কৃষকদের। আর আড়তদারদের নিকট ঝামেলা ছাড়াই মাঠ থেকে কাঁচা ধান কেটে নিয়ে বিক্রি করা যায়। তাই খাদ্য গুদামে ধান না দিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করেছি।

তারা আরও বলেন, প্রকারভেদে প্রতি মণ ধান ৯৫০ থেকে এক হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম পেয়েছি। সরকারি গুদামে ধান দিতে পরিবহন খরচ বেশি। আড়তদারদের কাছে দিলে নিকটবর্তী হওয়ার কারনে খরচ কম হয়। যার কারনে তালিকায় নাম উঠলেও অনেক কৃষক সরকারি গুদামে ধান দেননি।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ মে অভ্যন্তরীণ বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ৪ হাজার মেট্রিকটন ধান, ৩৬ টাকা কেজি দরে মিলারদের নিকট থেকে ১৭ হাজার ১৯ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা কেজি দরে দুই হাজার ৮৮৬ মেট্রিকটন আতব চাল সংগ্রহের উদ্বোধন করা হয়। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে ধান সংগ্রহের লক্ষে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের কৃষক নির্বাচনের জন্য উন্মুক্ত লটারীর মাধ্যমে মোট চার হাজার জন কৃষক নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত প্রতিজন কৃষক এক মেট্রিকটন করে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান দিতে পারবেন। এছাড়া সিদ্ধ চাল সরবরাহে ২৯২ জন মিলার এবং আতব চাল সরবরাহে ১৯ জন মিলারের সাথে চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল সরবরাহের কথা থাকলেও সিদ্ধ চাল মাত্র ৭ হাজার মেট্রিকটন এবং আতপ চাল ৭০০ মেট্রিকটন সরবরাহ করা হয়েছে এবং কৃষকরা মাত্র ৭০০ মেট্রিকটন ধান খাদ্য গুদামে বিক্রি করেছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বোরো মৌসুমে উপজেলায় ২৭ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছিল। এতে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার ৯৫৬ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হয়েছে।

উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি বেলাল উদ্দিন বলেন, চুক্তি অনুযায়ী অনেক মিলার খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করেছেন। বাড়তি দামে ধান ক্রয় করায় সরকারি মূল্যে চাল দিলে মিলারদের অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে। আবার অনেক মিলার দেওলিয়া হয়ে গেছে। খাদ্য বিভাগ ১৫ দিন সময় বৃদ্ধি করেছে। ওই সময়ের মধ্যে অনেকে চাল সরবরাহ করবেন।

মহাদেবপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, উদ্বোধনের পর থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৫৫৬ মেট্রিকটন ধান, ৩ হাজার ৭৪৯ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল এবং ২৭৩ মেট্রিকটন আতব চাল সংগ্রহ হয়েছে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শওকত জামিল বলেন, চুক্তিবদ্ধ মিলারদের বেশ কয়েক দফা চিঠি দিয়েছি এবং দফায় দফায় মুঠোফোনে কল করেছি। তার পরেও কোনো লাভ হয়নি। সম্প্রতি খাদ্য অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ শাখা থেকে মিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটি পত্র পেয়েছি। নির্ধারিত সময় অন্তে পত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পিএনএস/এসআইআর


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন