মহাদেবপুরে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে বাতাসে দুলছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন

  19-10-2020 07:54PM

পিএনএস, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : দেশের উত্তর জনপদের খাদ্য ভা-ার খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে আমন ধানের সোনালী শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। দৃষ্টিসীমা ছাপিয়ে চারিদিকে বিরাজ করছে অপার দুলুনি। আর এ দোলায় লুকিয়ে আছে হাজারো কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। পোকামাকড় ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ ছাড়াই বেড়ে ওঠা ধানের শীষে ভরে গেছে মাঠ। দিগন্তজোড়া সোনালী ফসলের মাঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো বিকশিত করে তুলেছে। উপজেলার হাজারো কৃষক পরিবারের চোখে মুখে এখন স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা কোন বিপর্যয় না ঘটলে কৃষকদের বাড়ির আঙ্গিনা ভড়ে উঠবে সোনালী ধানের হাসিতে।

বর্তমানে শেষ মহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে। নতুন ধান উঠবে কৃষকের গোলায়। ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে চাষীরা বিভোর। গৃরস্থ আর কৃষাণ-কৃষাণীরা গোলা, খলা, আঙ্গিনা পরিষ্কার করায় ব্যস্ত। সরকারের কৃষি বান্ধব কর্মসূচি, কৃষি অফিসের ব্যাপক তৎপরতা, কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম, অনুকূল আবহাওয়া, সার, কীটনাশকসহ বাজারে কৃষি উপকরণের পর্যাপ্ত সরবরাহ, সহনশীল দাম, সহজলভ্যতা ও সেচের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সরবরাহ এবং আবাদ উপযোগী পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনায় চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে এবার আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৩৩৫ হেক্টর। সেখানে আবাদ হয়েছে ২৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৪৫ হেক্টর বেশি। উৎপাদনেও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষকরা তাদের ক্ষেতের ধান কাটার অপেক্ষায় রয়েছে। খুশিতে কৃষক পরিবারসহ ব্যবসায়ীরা। ক্ষেতের মধ্যে পোতা বাঁশের কঁঞ্চি ও গাছের ডালের উপর ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে আছে। সুযোগ বুঝে ধান ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা ওইসব পাখিরা খেয়ে ফেলছে। আবার অনেকে অধিক ধান পাওয়ার আশায় নিজ নিজ জমিতে রাসায়নিক ও জৈব সার প্রয়োগ করছে। কেউ আবার ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছে। তবে কখন নতুন ধান ঘরে তুলবে এ স্বপ্নে বিভোর ওইসব কৃষকরা। তাই প্রতিটি বাড়ি বাড়ি চলছে নতুন ধান ঘরে তোলার নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতি।


উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের কৃষক রহমান বলেন, গত বারের চেয়ে এবার ধান ভাল হয়েছে। আর কয়েকদিন পর কাটা শুরু করা যাবে। তিনি বলেন, ক্ষেতে রোগ-বালাই ও পোকা আক্রমণ করতে পারেনি। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে স্বপ্নের সোনালী ধান যথাসময়ে ঘরে তুলতে পারবো।

সুলতানপুর গ্রামের কৃষক তারেক বলেন, সেচ খরচ এবং শ্রমের অধিক মূল্য ও কৃষি শ্রমিকের কিছু সমস্যা থাকলেও অনুকূল আবহাওয়ায় সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত সার, কীটনাশক ও বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়ায় এ বছর আমন ধান খুবই ভাল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ধান ক্ষেতের পাশে দাঁড়ালে বুক জুড়িয়ে যায়। এ বছর তিন একর জমিতে আমন আবাদ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার অধিক ফলন হবে বলেও আশা করছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের কাজ করে আসছি। কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারে এবং কোন প্রকার সমস্যায় না পড়েন এ জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। আশা করি বিগত মৌসুমের মতো এবারও আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে। এতে কৃষক অনেকটা লাভবান হবে বলেও আশা করছেন তিনি।

পিএনএস/এসআইআর


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন