ডায়বেটিস ফুড্স এবং শিশু খাদ্য হিসাবে ’ক্যাসাভার’ কদর বাড়ছে

  16-08-2014 12:50PM

পিএনএস (কামাল পাশা দোজা) : পৃথিবীর ৫০ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য ‘ক্যাসাভার’ খাদ্যমান, পুষ্টি, শর্করার পরিমান, স্বাদ, লঘু ফুড, সহজে প্রক্রিয়াজাতকরন, ইত্যাদি বিষয়ে গবেষনা থেমে নেই।
প্রধান খাদ্য হিসাবে ‘ক্যাসাভা’ মূলত: আফ্রিকার দেশ গুলিতেই সর্বাধিক মানুষের খাদ্য তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছে। গবেষনায় দেখা গেছে গমের আটার চেয়েও ‘ক্যাসাভার’ আটায় খাদ্যমান, পুষ্টিগুন, শর্করার পরিমান অনেক বেশী। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে ডায়বেটিস রোগীদের সামনে মুখরোচক এবং মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারের এক বিশাল ভান্ডার খুলে দিয়েছে ‘ক্যাসাভা ফুড্স’। এটি সহজেই হজম হয় বিধায় লঘুপাচ্য। আর একারনেই শিশু, বৃদ্ধ, রোগী সবার কাছে সমান জনপ্রিয় ‘ক্যাসাভা ফুড্স’।
গমের আটার মধ্যে মিষ্টির উপস্থিতি নেই। কিন্তু প্রাকৃতিক ভাবেই ‘ক্যাসাভার’ আটা হালকা মিষ্টি। যেহেতু কৃত্রিম ভাবে গুড়, চিনি, মধু, স্যাকারিন কিংবা বিভিন্ন মিষ্টি না মিশালেও ‘ক্যাসাভার’ আটা খেতে একটু হালকা মিষ্টি। প্রাকৃতিক ভাবে হালকা-প্রয়োজনীয় মিষ্টি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীরা নির্দ্বিধায় কোন রকম বিধি নিষেধ ছাড়াই নির্বিঘ্নে ‘ক্যাসাভা ফুড্স’ খেতে পারে। আর সেকারনেই পৃথিবীর দেশে দেশে ‘ক্যাসাভা ফুড্স’ ক্রমস: জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ‘ক্যাসাভা’ আটার সাথে প্রয়োজনীয় বেকিং পাউডার, ডিম, ঘি, মধু মিশ্রিত করে হজারো রকম খাবার পিঠা, পুলি, কেক পেষ্ট্রি আর বিভিন্ন আইটেমের মিষ্টি তৈরী হচ্ছে যা কিনা বীতিমত বিস্ময়ের সৃস্টি করেছে। ডায়বেটিস ফুড্স এর পাশা পাশি ‘ক্যাসাভা’ আটা শিশু খাদ্য তৈরীতেও আশাতীত ভূমিকা রাখছে। বহুজাতিক কোম্পানী নেস্লে বিভিন্ন রকম শিশু খাদ্যের আইটেম যে ভাবে তৈরী করছে-তাদের মূল উপাদানে রয়েছে গম, চাউলের গুড়ি। অথচ ‘ক্যাসাভার’ আটা ব্যবহার করে অনায়াসেই বাজারে প্রচলিত শিশু খাদ্যের বিকল্প ‘বেবী ফুড’ তৈরী করা যায়। আর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও শিশু খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ হিসাবে বিশ্বে পরিচিতি পাবে। কারন আমাদের দেশের মাটি, আবহাওয়া, জলবায়ু ইত্যাদি ‘ক্যাসাভা’ চাষের জন্য শতভাগ উপযোগী। শুধু মাত্র উদ্যোগের অভাবেই আমরা পিছিয়ে পড়ছি। অথচ ‘ক্যাসাভা’ নিয়ে আমাদের গর্ব করার অনেক বিষয় আছে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই প্রচুর পরিমানে ‘ক্যাসাভা’ উৎপাদিত হচ্ছে। সমন্বিত উদ্যোগ আর পরিকল্পনার মাধ্যমে অগ্রসর হলে দেশের মানুষের পুষ্টির এক বিরাট অংশ পুরন করবে শর্করার আধার ‘ক্যাসাভা ফুড্স’। চাপ কমবে চাউল-গমের উপর। কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় করে বিদেশ থেকে আর গম আমদানি করতে হবেনা। বরং উৎপাদিত ‘ক্যাসাভা’ দেশের খাদ্যের এক বিরাট চাহিদা পুরনের পাশা পাশি তা বিদেশে রপ্তানী করে দেশ বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে। চা, চামড়া, পাট, গার্মেন্টস এবং জনশক্তির পর ‘ক্যাসাভা’ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এক বিরাট খাতে পরিনত হবে। এক সময়ে এমনকি স্বাধীনতার পরেও দেশের উত্তররাঞ্চলে যে সমস্ত পরিবার অসুখ-বিসুখ থেকে মুক্ত থাকতে কিংবা অধিকতর স্বাস্থ সচেতনতার জন্য সকালে এবং রাত্রে গমের আটার রুটি খেত। তারপর ডাক্তার রাতে রোগীদের লঘু খাবার হিসাবে আটার রুটি খেতে বলতেন। কিন্তু উত্তরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারনা ছিল যারা গরীব – তিন বেলা চাউল কিনতে পারেনা তারাই রাতে রুটি খায়। অবশ্য সে সময়ে আটা এবং চাউলের বাজার দরে আকাশ-পাতাল পার্থক্য ছিল। আটার সের (আশি তোলা) ছিল মাত্র চার থেকে ছয় আনা। আর চাউলের সের ছিল আট আনা থেকে দশ আনা। বার আনা সের ছিল বাসমতি চাউলের। এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়েও এক মণ (৪০) সের বাসমতি চাউলের দাম ছিল মাত্র (৩০) ত্রিশ টাকা। এসব কারনেই সাধারন মানুষ ভাবত আটা বুঝি গরীবদের খাদ্য। আজকে সেই অবস্থা নেই। মানুষ শত ভাগ স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছে। বড় বড় শহর বাদ দিলেও গ্রামগঞ্জের হাটবাজার গুলোতে ভাত পাওয়া না গেলেও রুটি, পরাটা, পাউরুটি, কেক, পেষ্ট্রি, হরেক রকমের বিষ্কুট, ড্রাই কেক অবশ্যই পাওয়া যায়। স্কুলগামী শিশুদের টিফিন বক্সে আটার তৈরী খাবারই স্থান পাচ্ছে অবলীলায়। তারপর রকমারী সেমাই, লাচ্চা, ম্যাকারনী, নুডুল্স, হরেক রকম পিঠা তৈরীতে গ্রামীন জনপদেও এখন গমের আটার বেশ কদর। এমতবস্থায় ‘ক্যাসাভার’ আটা আমাদের খাদ্যের এক বিরাট অংশ পুরন করবে। এব্যপারে সচেতনতা সৃষ্টি আর খাদ্যাভাসের বিষয় গুলি ব্যাপক হারে প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং সচেতন জনগোষ্ঠী এব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলে দেশ এগিয়ে যাবে। বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে। সেই সাথে খাদ্যে দেশ স্বয়ং সম্পূর্নতা অর্জন করবে।

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন