পেঁয়াজের পাইকারি দর সামান্য কমেছে

  02-11-2017 06:34PM

পিএনএস ডেস্ক : বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি দাম সামান্য কমতে শুরু করেছে। নতুন মৌসুমের অল্পস্বল্প পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় এ প্রবণতা বাজারে দেখা গেছে।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণ হতে সময় লাগবে। তাই দ্রুত দাম না–ও কমতে পারে।

এখন ভারতের বাইরে অন্য কোনো দেশ থেকে আমদানি করে পেঁয়াজের বাজার সামাল দেওয়ার সুযোগ দেখছেন না আমদানিকারকেরা। তাঁদের দাবি, মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে কমপক্ষে দুই মাস সময় লাগবে। পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ নেই। কারণ, দাম সেখানেও চড়া।

পেঁয়াজের দামের ক্ষেত্রে এখন ভরসা শুধু ভারত। দেশটির কয়েকটি রাজ্যে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে সপ্তাহ দু–এক পরে আমদানি শুরু হবে। তখন দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমবে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে তাঁরা এ–ও বলছেন, ভারতে বৃষ্টিতে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে গতকাল বুধবার দেশি পেঁয়াজ আগের দিনের চেয়ে কেজি প্রতি চার-পাঁচ টাকা বেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ দুই থেকে চার টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। গতকাল দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি মানভেদে ৬৫-৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়। অবশ্য এ দর গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৭৫ টাকায় উঠেছিল বলে জানান শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী নারায়ণ চন্দ্র সাহা। তিনি বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ গতকাল কেজিপ্রতি ৪৮-৫২ টাকা দরে বিক্রি হয়, যা আগে ৫২-৫৩ টাকা ছিল।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানেও পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি দু-তিন টাকা কমেছে। অবশ্য খুচরা বাজারে এখনো পেঁয়াজ আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে ৮০-৯০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন।

মৌসুমের শেষ দিকে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ঢাকায় কেজিপ্রতি সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। এবার আগস্ট মাসেই পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম ৭৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল, যা ঈদুল আজহার পরে কমে যায়। গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে এখনকার পর্যায়ে পৌঁছেছে। পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গতকাল আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যসচিব শুভাশীষ বসু। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে পাঁচজন আমদানিকারক উপস্থিত ছিলেন। সেখানে একজন ব্যবসায়ী ভারতে ফোন করে বাণিজ্যসচিবকে শোনান যে পাশের দেশেই প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৩২ রুপি, যা বাংলাদেশে আমদানি করে শ্যামবাজারে আনতে কেজিপ্রতি ৫২ টাকার মতো খরচ পড়বে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামবাজারকেন্দ্রিক আমদানিকারক আবদুল মাজেদ বলেন, ‘বাণিজ্যসচিব আমাদের কাছে পরিস্থিতি জানতে চেয়েছিলেন। আমরা তাঁকে বলেছি দাম আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে খুব বেশি কমবে, সে আশাও করা যায় না।’ তিনি বলেন, সপ্তাহ দু–এক পরে ভারতীয় নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাংলাদেশে আমদানি শুরু হবে। কিন্তু ভারতে বাজার পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, তা এখনো বলা যাচ্ছে না। কারণ, সেখানে বৃষ্টিতে পেঁয়াজের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১৭ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। এর বাইরে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টন আমদানি করা হয়, যার বেশির ভাগ আসে ভারত থেকে। ভারতের পত্রিকা দ্য হিন্দুর এক খবরে গত মঙ্গলবার বলা হয়, দিল্লিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৫০ রুপিতে উঠেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৪ টাকা। দেশটির ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রী রাম বিলাস পাসোয়ান মঙ্গলবার বলেন, এটা মৌসুমি প্রবণতা। নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। দাম কমে যাবে। পাকিস্তানের পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, সেখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ রুপিতে উঠেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৬৩ টাকা।

ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি সম্ভব কি না, জানতে চাইলে আবদুল মাজেদ বলেন, ‘ভারত ছাড়া অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে অনেক সময় লাগে। ব্যবসায়ীরা এ ঝুঁকি এখন নেবে না। সুযোগ থাকলে আমরাই আমদানি করতাম।’

দেশের বাজারে নতুন মৌসুমের ‘মুড়িকাটা’ পেঁয়াজ ওঠার কথা ডিসেম্বরের শুরু থেকে।

পিএনএস : জে এ মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন