পেঁয়াজের ঝাঁজ ভারতীয় ঘি

  25-11-2017 10:13AM

পিএনএস ডেস্ক: পেঁয়াজের ঝাঁজে গত দুই মাস ধরেই পুরো জাতির নাকাল অবস্থা। বাঙালি জীবনের অনেকটা অনিবার্য অনুষঙ্গ হয়ে ওঠা এ মসলার দাম এমনিতেই আকাশছোঁয়া। পেঁয়াজের এ ঝাঁজকে আরো ঝাঁজালো করতে এবার নতুন করে ‘ঘি’ ঢেলেছে ভারত সরকারের একটি সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশে রফতানির ক্ষেত্রে পেঁয়াজের দাম টনপ্রতি ৪০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে এক লাফে ৮৫০ ডলার করেছে দেশটি। বর্ধিত দর আজ শনিবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন আগেই। দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম এক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। ঢাকার খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ৯০ থেকে ৯৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

জানা যায়, বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাড়তি চাহিদার সুযোগে দ্বিগুণ বাড়তি দামে সর্বনিম্ন রফতানিমূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ভারত। ভারতীয় ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচার কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (ন্যাফেড) এ দর নির্ধারণ করে দেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ শনিবার থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের প্রতি টন পেঁয়াজের সর্বনিম্ন দর ৮৫০ ডলার পরিশোধ করতে হবে। বর্তমানে এ দর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে রয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের জুন মাসে রমজান মাসকে সামনে রেখে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে গেলে ২৫৫ ডলার থেকে এক লাফে ১৭৫ ডলার বাড়িয়ে পেঁয়াজের রফতানিমূল্য ৪৩০ ডলার নির্ধারণ করে দিয়েছিল ন্যাফেড। ভারত সরকারে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দেশে পেঁয়াজের দরকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত মাসে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার পর মাঝে কিছুটা কমেছিল। কিন্তু গতকাল আবার হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে দেশী পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে বলে জানান তারা। গতকাল শুক্রবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে, যা এক দিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। অপর দিকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি, যা এক দিন আগে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ৩০ টাকা।

রাজধানীর খিলগাঁও বাজারে বিক্রেতা মনির হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, এখন শীতকাল। পেঁয়াজের দাম কমার কথা। কারণ কিছু দিন পরই বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসবে। ইতোমধ্যে পেঁয়াজপাতা বিক্রি শুরু হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল পেঁয়াজের দাম না কমে বরং বেড়ে গেছে। সপ্তাহখানেক ধরেই আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রভাবে বেড়েছে দেশী পেঁয়াজের দামও। ভারতীয় কৌশলের কাছে আমরা বারবার মার খাচ্ছি। তারা সুযোগ বুঝেই আমাদের বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।

এ দিকে শীতের ভরা মওসুমে সবজির দাম কাক্সিক্ষত পরিমাণে কমছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উল্টো বেড়ে যাচ্ছে। যে যার মতো করে দাম আদায় করছে। সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ক্রেতাদের গলা কাটছে ইচ্ছেমতো। বাজারভেদে দামের বিস্তর ফারাক রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতের আগাম সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, লাউ, মুলা, শালগমে এখন বাজার ভরপুর। সাথে ঝিঙা, পটোল, করলা, ঢেঁড়স, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা, বেগুন, পাকা ও কাঁচা টমেটো সবকিছুর সরবরাহ রয়েছে পর্যাপ্ত।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, দাম বাড়ার তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে পাকা টমেটো। প্রতি কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি। সে হিসেবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ পণ্যটির দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা। তবে কাঁচা টমেটো গত সপ্তাহের মতোই ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে শিম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও গতকাল ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে। বেগুনের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর পটোল গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ৩০ টাকায় নেমে এলেও গতকাল বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। তবে মুলা আগের মতোই ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শালগম বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। আর ৩০ টাকায় নেমে আসা ধুন্দুলের কেজি আবার বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা। সূত্র: নয়া দিগন্ত

পিএনএস/কামাল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন