যশোরের ফুলে রঙিন আরেক ফাল্গুন

  14-02-2018 07:10PM

পিএনএস ডেস্ক : পয়লা ফাল্গুন তথা বসন্তবরণ এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে প্রতিবছরই যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী পাইকারি মোকাম ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের পদচারণে সরগরম হয়ে ওঠে। এবারেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। তাই তো এক দিনেই এখানে কেনাবেচা হলো ১০ কোটি টাকার ফুল। গতকাল সোমবার এসব ফুল নিয়ে গেছেন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা।

গদখালী মোকাম থেকে দূর-দূরান্তের পাইকারদের কিনে নেওয়া গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা ও গাঁদা ফুল আজ মঙ্গলবার ও কাল বুধবার সারা দেশের খুচরা বাজারে বিক্রি হবে।

ঝিকরগাছার এই ফুলের মোকামে গতকাল ছিল ফুলচাষি ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে মৌসুমের সবচেয়ে ব্যস্ততম দিন। কারণ, পয়লা ফাল্গুনের আগের দিনই এখানে বছরের সবচেয়ে বড় হাটটি বসে। এদিনই হয় বছরের সর্বোচ্চ কেনাবেচা। বরাবরের মতো এবারেও তা-ই হয়েছে। সাধারণত সকাল আটটার মধ্যে গদখালী মোকামে কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কৃষক ও ব্যাপারীরা ফুল কেনাবেচা করেছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ‘দুটি দিবস (পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস) উপলক্ষে গতকাল সোমবার গদখালী মোকাম থেকে ২০ লাখ গোলাপ, ৫ লাখ জারবেরা, ১৫ লাখ গ্লাডিওলাস, ২ লাখ রজনীগন্ধা এবং ৫ কোটির মতো গাঁদা ফুল সারা দেশের ফুলের বাজারে পাঠানো হয়েছে। এসব ফুলের দাম অন্তত ১০ কোটি টাকা।’ তিনি বলেন, মোট ফুলের ৫০ শতাংশ গেছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে, আর বাকি ৫০ শতাংশ সারা দেশে জেলা শহরগুলোতে।

গদখালী ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির চালানের মাধ্যমে এসব ফুল পাঠানো হয়েছে বলে জানান আবদুর রহিম।

এই মোকামের ব্যবসায়ী ও ফুলচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল প্রতিটি গোলাপ ৬ থেকে ১০ টাকা, জারবেরা ৫ থেকে ৮ টাকা, গ্লাডিওলাস ৫ থেকে ১০ টাকা ও রজনীগন্ধার প্রতিটি ডাঁটা ২ থেকে সাড়ে ৩ টাকা পাইকারি দরে বেচাকেনা হয়েছে।

ঝিকরগাছা উপজেলার পটুয়াপাড়া গ্রামের ফুলচাষি মনজুর আলম বলেন, ‘এ বছর চার বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করেছি। এর মধ্যে গ্লাডিওলাসই বেশি। গত সাত দিনে ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছি।’
গদখালী গ্রামের চাষি আকবর আলী বলেন, ‘পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গত সাত দিনে ভালো দামে গোলাপ বিক্রি হয়েছে।’

পানিসারা গ্রামের আমিনুর রহমান বলেন, ‘আজ (সোমবার) ৮ হাজার জারবেরা ফুল তুলে ঢাকাতে পাঠিয়েছি। কিন্তু জারবেরার দাম আশানুরূপ পাচ্ছি না। ঢাকার খুচরা বাজারেই জারবেরা ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে গোলাপের দাম ভালো যাচ্ছে।’

গদখালী এলাকায় মাঠের পর মাঠজুড়ে ফুলের আবাদ হয়েছে। সূর্যের আলো উঁকি দেওয়ার আগেই এখানকার কৃষকেরা ফুল তুলে হাটে নিয়ে যান। সেই ফুল কিনে ব্যাপারীরা পাঠিয়ে দেন দেশের বিভিন্ন স্থানে।

গদখালী ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেক সরকার বলেন, সমিতির চালানের মাধ্যমে গত দুই দিনে ১৫ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম আরও বলেন, ‘এবারে পয়লা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গদখালী থেকে সব মিলিয়ে অন্তত ৪০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য রয়েছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর জেলার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এমদাদ হোসেন বলেন, ‘যশোর জেলায় এ বছর ৬৫০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঝিকরগাছা উপজেলায় চাষ হয়েছে ৬৪০ হেক্টর জমিতে। ফুল চাষের সঙ্গে জেলার সাড়ে ছয় হাজার কৃষক জড়িত। এ বছর ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকেরা।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন