বাগদা চিংড়ির অস্বাভাবিক মূল্য হ্রাস : হতাশ চাষীরা

  24-04-2015 03:40PM

পিএনএস, পাইকগাছা, (খুলনা) : চিংড়ি অধ্যুষিত খুলনার পাইকগাছায় অস্বাভাবিক হারে বাগদা চিংড়ির বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চিংড়ি চাষীরা। বিগত বছরের তুলনায় বিক্রয় মূল্য অর্ধেকেরও কমে নেমে আসায় ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট চিংড়ি চাষীরা।

সূত্র মতে, আশির দশকে জেলার কৃষি অধ্যুষিত এ উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয় লবণ পানির চিংড়ি চাষ। চিংড়ি চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় শুরুর এক দশকের মধ্যে এ চাষ ব্যবস্থাপনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা উপজেলায়। বর্তমানে চিংড়ি চাষের সঙ্গে জড়িত উপজেলার অধিকাংশ মানুষ। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অধিকাংশ মানুষের আয়ের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে চিংড়ি। কেউ ঘের, কেউ পোনা সরবরাহ, কেউ ঘেরের উৎপাদিত চিংড়ি ডিপোতে সরবরাহ, কেউ আবার রপ্তানীকারক কোম্পানীতে সরবরাহ এবং জমির মালিকরা ঘের মালিকদের নিকট থেকে হারীর টাকা গ্রহণ করার মাধ্যমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

উৎপাদিত চিংড়ি বিদেশে রপ্তানী করে সরকারও পেয়ে থাকেন প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটি ক্ষতিগ্রস্থ হতে চলেছে। চলতি বছর মৌসুমের শুরুতেই অধিকাংশ ঘেরের চিংড়ি বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের কারণে মারা যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে চিংড়ি চাষ। অপরদিকে বিগত বছরের চেয়ে চিংড়ির বাজারমূল্য অর্ধেকেরও কমে নেমে আসায় ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কায় চিংড়ি চাষ ছেড়ে দেয়ার উপক্রম হয়েছে ঘের মালিকদের।

এ প্রসঙ্গে পাইকগাছা চিংড়ি বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি শেখ মোঃ জালাল উদ্দীন জানান, রপ্তানীকারক কোম্পানীগুলো চিংড়ি ঠিকমত রপ্তানী না করা ও যেসব দেশে চিংড়ি রপ্তানী করা হয় সে সকল দেশের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চিংড়ি রপ্তানীতে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কপিলমুনি বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি ঘের মালিক নির্মল মজুমদারের ভাষ্য, চিংড়ির মূল্য এ ভাবে চলতে থাকলে আগামীতে চিংড়ি চাষ বন্ধ হয়ে যাবে।

উৎপাদন ও বিক্রয় মূল্যের সাথে ব্যাপক অ-সামজস্য রয়েছে বলে ডিপো মালিক মনোহর চন্দ্র সানা জানান। ব্যবসায়ী দাউদ শরীফ জানান, আমার ঘের ও ইলেকট্রিক ব্যবসা রয়েছে। গত বছর যে চিংড়ি ৮-১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো। সেই চিংড়ি চলতি মৌসুমে ২৫০-৩শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চিংড়ির বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় এর প্রভাব সব ক্ষেত্রে পড়েছে। ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে কেনা-বেচা বিগত দিনের তুলনায় অনেক কমে গেছে বলে তিনি জানান।

ইতোপূর্বে চিংড়ির বাজার মূল্য সংক্রান্ত একাধিক পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর মনে করেছিলাম সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ ব্যাপারে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেয়া হলে আগামীতে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে চিংড়ি চাষ বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিশিষ্ট এ ব্যবসায়ী জানান।

জাতীয় স্বর্ণপদক প্রাপ্ত চিংড়ি চাষী ও রপ্তানীকারক আলহাজ্ব ফসিয়ার রহমান জানান, বিগত দিনের তুলনায় জমির হারী, পোনা ও লেবারসহ চিংড়ি চাষের খরচ কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যে হারে চিংড়ির বাজার মূল্য কমে যাচ্ছে তাতে চলতি বছর ঘের মালিকদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে। অনেকে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে চিংড়ি চাষ বন্ধ করে দিতে হবে।

চিংড়ির বাজার মূল্যের এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ক্ষতিগ্রস্থ চিংড়ি চাষীরা।

পিএনএস/মো.সাইফুল্লাহ/মানসুর

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন