শিক্ষক নামের দুই নরপশুর ভয়ংকর কাণ্ড!

  08-01-2018 12:42PM

পিএনএস ডেস্ক:কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা খরুলিয়া এলাকায় স্কুলের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাওয়ায় আয়াত উল্লাহ নামে এক অভিভাবকের উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়েছে। গবাদি পশুর মতো হাত-পা বেঁধে মারধর করা হয়েছে। তাকে এমনভাবে মারা হয়েছে, যা আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। এ যেন শিক্ষক নামে নরপশুর মতো আচরণ। রবিবার সকাল ১০টায় খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় তোলপাড় চলছে। ঘটনায় জতিড়দের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছে স্থানীয়রা।

ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ঘটনার শিকার আয়াত উল্লাহর ছেলে শাহরিয়ার নাফিস আবির খরুলিয়া কেজি এন্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র। সে প্রথম শ্রেনীতে এ প্লাস না পাওয়ার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিনের কাছে জানতে সকালে স্কুলে যায় আয়াত উল্লাহ। একই সময় পূর্বঘোষণা ছাড়াই ভর্তি ও মাসিক কেন বাড়িয়েছে? তা জিজ্ঞেস করে। এ নিয়ে মাস্টার বোরহান উদ্দিনের সাথে কথা কাটাকাটি হয়।

এ সময়ে পার্শ্ববর্তী খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হককে ডাক দেয় বোরহান। শুরু হয় ত্রি-মুখি তর্ক বিতর্ক। ঘটনাটি হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। এ সময় আয়াত উল্লাহ ছিল সম্পূর্ণ একা।

মাস্টার জহিরুল হক তাকে কেন এসব জানতে চাচ্ছ? প্রশ্ন করে ধাক্কা দেয়। বোরহান উদ্দিনও মারে আরেক ধাক্কা। মাটিতে পড়ে যায় অসহায় অভিভাবক আয়াত উল্লাহ। এরপর রশি দিয়ে তার হাত ও পা বেঁধে ফেলা হয়। মারধর করতে থাকে দুই শিক্ষকসহ তাদের লেলিয়ে দেয়া বাহিনী। আয়াত উল্লাহকে লাথি ও থুথু মারে শিক্ষক জহিরুল হক ও বোরহান উদ্দিন। ঘটনায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। এ যেন আরেক নব্য জাহেলিয়াত!

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আয়াত উল্লাহকে এমনভাবে মারা হচ্ছে যেন সে একজন বড় সন্ত্রাসী। মধ্যযুগীয় কায়দায় তাকে নির্যাতন করা হলেও কোন শিক্ষক বা ছাত্রছাত্রী তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যায়নি। পরে তার শুর চিৎকার শুনে স্কুলের আঙ্গিনায় গিয়ে পৌঁছে পথচারীরা। শিক্ষক-ছাত্রদের পায়ের নীচ থেকে তাকে উদ্ধার করে। শিক্ষক নামধারী ওই নরপশুদের ধিক্কার জানিয়েছে এলাকাবাসী।

ঘটনার বিষয়ে আয়াত উল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই স্কুলে প্রায় সময় অনিয়ম করা হয়। কিছু দিন আগে কোন ধরণের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ করা হয় খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে। কেজি স্কুলে নানা অনিয়ম রয়েছে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অনিয়ম করে অনেক শিক্ষক। এ নিয়ে অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভ রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে।

তিনি বলেন, আমার ছেলের কাঙ্খিত ফলাফল কেন হয়নি? কোন যুক্তিতে ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বাড়ানো হয়েছে? জানতে চাওয়ায় আমার উপর নির্যাতন করা হয়েছে।

দুই শিক্ষকই এই ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে। মাস্টার জহিরুল হক, মাস্টার নজিবুল্লাহ, নুরুল হকসহ আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষক আমার উপর নির্যাতনে সরাসরি জড়িত।

কেন এমন ঘটনা সৃষ্টি করা হয়েছে? জানতে চাওয়া হয় খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হকের কাছে। তিনি বলেন, আয়াত উল্লাহ আমাদের স্কুলের ছাত্র ছিল। বেয়াদবি করায় তাকে এমন শাস্তি দেয়া হয়েছে। এমনকি আর কোন দিন ‘বেয়াদবি করবেনা’ মর্মে মুছলেকায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

একজন শিক্ষক হিসেবে হাত-পা বেঁধে মারধর করা উচিৎ হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সঙ্গে নিজেকে জড়িত নয় বলে দাবী করেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি ক্ষুব্ধ লোকজন ঘটিয়েছে।

অভিযুক্ত অপর শিক্ষক বোরহান উদ্দিনের মুঠোফোনে (০১৮৫১২৩৫৯৫০) কল করলে ওপার থেকে নিজেকে বোরহান উদ্দিন নয় দাবী করে বলেন, ভর্তি ফি-মাসিক ফি ইত্যাদি বিষয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মতে হয়। আমাদের কাছে জানতে চাওয়ায় আয়াত উল্লাহকে কমিটির কাছে যেতে বলা হয়। তাতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে যান…এতটুকু উত্তর দিয়ে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। নিজের সঠিক পরিচয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন উত্তরদাতা।
কিছুক্ষণ পরে একই ব্যক্তি কল করে বলেন, ০১৮৩৪০৯৫৩৯০ এটি বোরহান স্যারের নাম্বার। কল দিলে বিস্তারিত জানবেন। কিন্তু ওই নাম্বারে ফোন করেও কোন সাড়া মেলেনি।

ঘটনার প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নোমান হোসেন বলেন, শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে এমন আচরণ আশা করা যায়না। খুনের আসামী কিংবা বড় মাপের কোন অপরাধীকেও এভাবে শাস্তি দেয়ার বিধান নেই। এটি চরমভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা দরকার।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন