ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকা কারবারীরা তৎপরতা বৃদ্ধি

  24-05-2018 04:35PM

পিএনএস, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : ঈদকে সামনে রেখে খুলনার পাইকগাছায় জাল টাকার কারবারীরা তৎপর হয়ে উঠেছে। শহর থেকে শুরু করে গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে এ চক্রের সদস্যরা সুকৌশলে ১০০০, ৫০০, ১০০ ও ৫০ টাকার জাল নোট ছড়িয়ে দিচ্ছে। হাট-বাজারে গিয়ে এসব জাল টাকা দ্বারা সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। জাল টাকা কারবারী সিন্ডেকেট চক্র এ কাজে মহিলা ও শিশুদের বেশী ব্যবহার করছে।

উপজেলার বাণিজ্যিক শহর কপিলমুনি থেকে বুধবার রাত ৮টায় ১ হাজার টাকার একটি জাল নোট সহ এক জনকে আটক করে স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশ। আটক কিশোর শান্ত গাজী (১৬) উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা ঝরনা বেগমের ছেলে। কপিলমুনি মেগাসিটি ফুড এর সামনে থেকে জাল নোটসহ প্রকাশ্যে স্থানীয়দের সহযোগীতায় কিশোরকে আটক করে ফাঁড়িকে নিয়ে আসেন এসআই জাহাঙ্গীর। আটক এর সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা নোটটি জাল বলে চিহ্নিত করলেও পর দিন এসআইসহ ফাঁড়ি ইনচার্জ আসল বলে ইল্লেখ করে আটক কিশোরকে ছেড়েদেন।

প্রত্যক্ষদর্শী কিনু পালসহ কয়েক জানান, বাজারের প্রধান সড়কে বাসস্টপ মেগাসিটি ফুডের সামনে অধিক রাত পর্যন্ত মানুষের ভীড় লেগে থাকে। আটককৃত নোটটি ঐসময় অর্ধশতাধিক মানুষ জাল বলে জানান। পরে দিন বৃহস্পতিবার পুলিশ নোটটি আসল উল্লেখ করে ঐ কিশোরকে ছেড়ে দেন। বিভিন্ন সূত্রে জানাযায় আটক কিশোর জাল নোট সিন্ডিকেট চক্রের এক জন সক্রিয় সদস্য। তা ছাড়া সে মাদক সেবন ও বিক্রির সাথে সংশ্লিষ্ঠ রয়েছে বলে সূত্র উল্লেখ করেছে। আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জালনোট চক্র সিন্ডিকেট চক্রের রাঘববোয়ালদের তথ্য ফাঁস ঠেকাতে কৌশলে কিশোরকে ছাড়ানো হয়েছে।

কপিলমুনি ফাঁড়ি ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সন্ধ্যায় অফিসে আসতে বলেন। এস আই জাহাঙ্গীর জানান নোটটি পরিক্ষা করতে ব্যাংকে নেওয়া হলে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। জাল নোটটি সরিয়ে আসল নোট প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে এমন প্রশ্নে কোনো সদ উত্তর দিতে পারেননি পুলিশের এ কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এঅঞ্চলে সারাবছরই কম-বেশি জাল টাকার কারবারীরা সক্রিয় থাকে। তবে ঈদ ও পূজাসহ বিভিন্ন পার্বন এবং ধান ও পাট কাটার মৌসুমে টাকা জালিয়াত চক্রের তৎপরতা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। এ সময় জালিয়াত চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন হাট-বাজারকে টার্গেট করে ১০০০, ৫০০, ১০০ ও ৫০ টাকার জাল নোট নিয়ে নেমে পড়ে। তারা পণ্যসামগ্রী বেচা-কেনার নামে এ জাল টাকা সুকৌশলে ক্রেতা-বিক্রেতার হাতে ধরিয়ে দেয়। সুনিপুণভাবে তৈরি এই জাল টাকা সহজে নকল বলে ধরা যায় না। এ কারণে বিকিকিনির সময় সাধারণ মানুষ এই টাকা নিয়ে সহজেই প্রতারিত হয়।

একদিকে জাল টাকার কারণে মানুষ যেমন প্রতারিত হচ্ছে, অন্যদিকে ঘটনাটি পুলিশকে জানাতে গিয়ে উল্টা আইনের মারপ্যাচে তাদেরই ফেঁসে যেতে হয়। ফলে জাল নোট প্রদানকারীকে হাতেনাতে ধরতে না পারলে কেউ মুখ খুলতে চায় না। কেবল হাট-বাজারেই নয়, ব্যাংকেও জাল টাকার নোট ঢুকে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, টাকা জালিয়াত চক্র এমন সুনিপুণভাবে জাল টাকা তৈরি করছে যে, অনেক সময় ব্যাংকের মেশিনেও জাল টাকা ধরা পড়ছে না।

সূত্র জানায়, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের সীমান্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে জাল টাকা তৈরির গোপন কারখানা। ওই কারখানায় ১০০০, ৫০০, ১০০ ও ৫০ টাকার জাল নোট ছাপানো হয়। সেখানে রয়েছে শক্তিশালী একটি নেটওয়ার্ক। তাদের সাথে বাংলাদেশী টাকা জালিয়াতি চক্রের রয়েছে যোগাযোগ। চাহিদা অনুযায়ী এই জাল টাকা সীমান্ত পথ গলিয়ে এই চক্রের কাছে পৌঁছে যায়। পরে সীমান্ত এলাকা থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারসহ সারাদেশে জাল টাকা ছড়িয়ে দেয়া হয়।

এজন্য জালিয়াত চক্রের রয়েছে বহু মাঠকর্মী। মাঠকর্মীরা ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত হয়ে শহর ও হাট-বাজারে নানা কৌশলে জাল টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এসব মাঠকর্মী টাকা জালিয়াত চক্রের কাছ থেকে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ কমিশন পায়। এদিকে টাকা জালিয়াত চক্রের সঙ্গে একশ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগসাজস থাকে। জালিয়াত চক্রের মাঠকর্মীরা কখনো হাতেনাতে ধরা পড়ে গণপিটুনির শিকার হলে উক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের ছাড়িয়ে নেয়াসহ পুলিশের কাছে সোপর্দ করতে বাধা দেয়। তা ছাড়া মাঝে-মধ্যে এই চক্রের দুই একজন সদস্য পুলিশের হাতে আটক হলেও তারা কিছুদিন জেল খেটে বেরিয়ে এসে আবার টাকা জালিয়াতির কাজে নেমে পড়ে।

এ ব্যাপারে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি এ অঞ্চলে জাল নোটের কারবারীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে ব্যাংকের কিছু অসাধু ব্যক্তি জড়িত রয়েছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। ইতোমধ্যে জাল নোট কারবারীদের আটকের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক ও মার্কেটে সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি জানান, জাল নোট কারবারী চক্র আটক হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন