বাড়ির মালিক হওয়ার লোভে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী নারীকে খুন

  04-06-2018 03:28PM

পিএনএস ডেস্ক : ঢাকার উপকণ্ঠ টঙ্গীর আরিচপুরে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী তরুণীকে বিয়ে করতে না পেরে তাঁর মা মনোয়ারা বেগমকে এক বছর আগে খুন করিয়েছিলেন তাঁদেরই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক (কেয়ারটেকার)। পুলিশ জানতে পেরেছে, তত্ত্বাবধায়ক সোহেলের লোভ জেগেছিল মনোয়ারার মেয়েকে বিয়ে করা গেলে পাঁচতলার বাড়িটির মালিক হবেন তিনি। বিয়ের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তিনি মনোয়ারাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পুলিশ ওই হত্যা মামলায় বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক মো. সোহেলসহ চারজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করেছে।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাসির আহমেদ শিকদার গতকাল রোববার বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে সোহেলসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দেওয়া হবে। অভিযোগপত্রভুক্ত অন্যরা হলেন ভাড়াটে খুনি সোহেল মাহমুদ মীর, স্বপন মিয়া ও আরিফ খান।

টঙ্গীর মধ্য আরিচপুর আবাসিক এলাকার পাঁচতলা বাড়ির মালিক প্রবাসী রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী আবুল বাশার তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ও পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। গত বছরের জুনে ছেলেকে বিয়ে করাতে বাশার সপরিবারে আরিচপুরে তাঁর বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে ওঠেন। ৭ জুন কয়েকজন দুর্বৃত্ত ওই বাড়িতে বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে তৃতীয় তলার একটি খালি ফ্ল্যাটে মনোয়ারাকে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনায় আবুল বাশার বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক মো. সোহেলসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে টঙ্গী থানায় হত্যা মামলা করেন।

পিবিআই সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মো. মাইনুল হাসান বলেন, মামলার বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তর টঙ্গী থানা থেকে মামলার তদন্তভার পিবিআইকে দেয়। পিবিআইয়ের গাজীপুরের পরিদর্শক মোস্তফা খায়রুল বাশারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, হত্যার পর সোহেল পালিয়ে গেলেও র‍্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তবে তাঁর কাছ থেকে হত্যা-সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পিবিআই তদন্তভার পাওয়ার পর প্রথমে হত্যাকাণ্ডের কোনো সূত্র খুঁজে পাচ্ছিল না। পরে পিবিআই স্থানীয় সন্ত্রাসী স্বপন মিয়া ও আরিফ খানকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাঁরা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

তদন্ত সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা বলেন, স্বপন ও আরিফ খান জিজ্ঞাসাবাদে ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, সোহেলের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের দুই-তিন দিন আগে সোহেল মাহমুদ মীর ওরফে খান্ডে বাবু ও তাঁদের কাছে এসে মনোয়ারাকে খুনের জন্য পাঁচ লাখ টাকা চুক্তি করেন। হত্যাকাণ্ডের দিন সকালে তাঁদের দুই লাখ টাকা দিয়ে যান। কথা ছিল, বাকি টাকা হত্যাকাণ্ডের পর দেওয়া হবে। সেই টাকা সোহেল তাঁদের আর দেননি। এ ঘটনায় স্বপন মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোস্তফা খায়রুল বাশার বলেন, গ্রেপ্তার সোহেল, স্বপন মিয়া ও আরিফ খান কারাগারে আছেন। ঘটনার পর আরেকজন সোহেল মাহমুদ পালিয়ে গেছেন।

টঙ্গী থানায় করা মামলার এজাহারে আবুল বাশার উল্লেখ করেছেন, তাঁর বাড়ির মূল তত্ত্বাবধায়ক তাজনাহার বেগম হলেও দাপট খাটিয়ে তাঁর ছেলে সোহেল কেয়ারটেকারের কাজ করতেন। সোহেল নেশাগ্রস্ত।

ভাড়াটেদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা ঠিকমতো ব্যাংক হিসেবে জমা দিতেন না। এ নিয়ে তাঁর স্ত্রী মনোয়ারার সঙ্গে সোহেলের কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। বাড়িটি আত্মসাতের ষড়যন্ত্র থেকে অজ্ঞাতপরিচয় সহযোগীদের নিয়ে সোহেল খুন করে থাকতে পারেন।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন