বন্ড কমিশনারেটের জাহেরী দুর্নীতি থামালেই হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বৃদ্ধির সম্ভাবনা-

  21-06-2018 08:14PM

পিএনএস (মোঃ শাহাবুদ্দিন শিকদার) : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন বন্ড কমিশনারেটে রয়েছে জাহেরী ও বাতেনী দুর্নীতি। এই জাহেরী বা প্রকাশ্য দুর্নীতি থামালেই হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলেই একমত হলেও রহস্যজনক কারণে দুর্নীতির পাগলা ঘোড়ার মুখে লাগাম পড়ানো হচ্ছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক জরীপে বলা হয়েছে, বন্ডের অপব্যবহারে বছরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অপর এক পরিসংখ্যাণে দেখা গেছে, বর্তমানে সারা দেশে বন্ড কমিশনারেটের অধীনে ৬ হাজার ৫’শ ২৯টি বন্ড লাইসেন্স রয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি তথা বন্ডের অপব্যবহারের কারণে ১ হাজার ৭’শ বন্ড লাইসেন্স ব্লক করা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, কমপক্ষে ৪ হাজার বন্ড লাইসেন্সের অপব্যবহার হচ্ছে যাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। রাজস্ব বোর্ডের অনেক চেয়ারম্যান যোগদানের পরপরই এ ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও অজানা কারণে পরক্ষণেই চুপসে গেছেন। রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যানও যোগদানের পরপরই কড়া হুশিয়ারী ব্যক্ত করলেও অদ্যাবধি উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। যদিও অনেকেই বলছেন, বর্তমান চেয়ারম্যানের সময়ে বন্ড কমিশনারেটের প্রকাশ্য দুর্নীতি থেমে যাবে। বর্তমান চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া অবশ্য প্রকাশ্যেই বলেছেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অপরদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান ২০১৫ সালের আগষ্ট মাসে বলেছিলেন, “বন্ড সুবিধায় কাপড় এনে অনেকেই ইসলামপুরে বিক্রি করেন। বন্ডের এই অপব্যবহার বন্ধ করা গেলে এনবিআর যে রাজস্ব আদায় করতে পারবে তা দিয়ে বছরে দু’টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যাবে।” তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সময়কালে বন্ডের দুর্নীতি ও অনিয়ম অনেকাংশেই তিনি রোধ করতে পেরেছিলেন। নজিবুর রহমান বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব।

সূত্র মতে, অনেকের নামেই বন্ড লাইসেন্স থাকলেও কোন কোন বন্ড লাইসেন্সের বিপরীতে কোন কারখানার অস্তিত্ত্বই নেই। শোনা যায়, জনৈক রেক্সিন উৎপাদকের নামে-বেনামে ২০টির অধিক বন্ড লাইসেন্স রয়েছে যার অধিকাংশের বাস্তব উপস্থিতি নেই। এ ব্যাপারে কাস্টমস কর্মকর্তা (বর্তমানে কমিশনার) মতিউর রহমান এবং মোবারা খানম প্রশংসনীয় ছক তৈরী করেছিলেন যার প্রতিপালনের মাধ্যমে বেশ কয়েক বছর বন্ডের প্রকাশ্য অপব্যবহার খানিকটা হলেও রোধ করা সম্ভবপর হয়েছিল। বর্তমানে রেক্সিন ও প্লাস্টিক শিল্প এবং গার্মেন্টস শিল্পের নামে বন্ডের প্রকাশ্য অনিয়ম ও দুর্নীতি হলেও তা দেখার কেউ নেই। রেক্সিন শিল্পের বন্ডের অপব্যবহার করে অনেকেই গুলশানে প্যালেস করেছেন- মালিক হয়েছেন প্রাইম লোকেশনে বিশাল বিশাল টাওয়ারের। কারো কারো নামের আগে যুক্ত হয়েছে প্লাস্টিক। এরা বন্ডের নামে যে অপব্যবহার করেছেন তাতে সহযোগিতা করেছেন আবার কাস্টমসের কর্মকর্তারাই। বিনিময়ে তাদেরও হয়েছে বসুন্ধরা সহ বিভিন্ন জায়গায় বাগান বাড়ী- লেটেস্ট মডেলের গাড়ি- বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। বন্ডের এই সমস্ত অপব্যবহারকারীরা (১) কি পরিমান কাঁচামাল আমদানী করেছে? (২) কি পরিমান মালামাল রপ্তানী করেছে? (৩) মালামাল তৈরীতে কি পরিমান বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে? (৪) কি পরিমান ভ্যাট দিয়েছে বা দেয়নি? (৫) কি পরিমান মালামাল তারা বংশালের বাজারে বিক্রি করেছে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুজলেই থলের বিড়াল সুড়সুড় করে বেরিয়ে আসবে। এই রহস্য উম্মোচনে শুল্ক গোয়েন্দা ও ভ্যাট গোয়েন্দাদের কাজে লাগানো যেতে পারে। মাঝে মাঝে শুল্ক গোয়েন্দাদের তরফে এ ব্যাপারে দুই একটি পদক্ষেপ দৃশ্যমান হলেও সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতিবাজদের সাথে তাঁদের অনেকটা সমন্বয় হয়ে গেছে বলে অনেকেই অভিযোগ করছেন। সোনা চোরাচালান এবং অপঘোষণার মাধ্যমে আমদানিকৃত গাড়ী আটকে শুল্ক গোয়েন্দাদের নজরকাড়া পদক্ষেপ থাকলেও বন্ড কমিশনারেটের দুর্নীতি বন্ধে তাঁদের দৃষ্টি ততোটাই ক্ষীণ। বন্ড কমিশনারেটের দুর্নীতির হোতাদের হাত অনেক লম্বা চওড়া হওয়ায় অনেকেই তাদের ঘাটাতে চান না।

অভিজ্ঞমহল মনে করেন, জাতীয় রাজস্ব আহরণের গতিকে তরান্বিত করতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। (চলবে)

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন