ইচ্ছার বাইরে আইসিইউতে রোগী ভর্তি; অতঃপর...

  15-07-2018 01:57AM


পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক রোগীকে স্বজনের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে আইসিইউতে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, তারা রোগীকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে তাকে দেয়া হয়নি।

এক পর্যায়ে রোগীকে ছাড়তে রাজি হলেও অতিরিক্ত টাকা দাবি করা হয়। এ নিয়ে হট্টগোল চলে কয়েক ঘণ্টা। পরে পুলিশের মধ্যস্ততায় দাবি করা টাকার চেয়ে কম নিলেও অতিরিক্ত টাকা ঠিকই আদায় করেছে হাসপাতালটি।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, বিরোধ চলাকালে কয়েক ঘণ্টা রোগীর চিকিৎসাও বন্ধ রাখে নর্দার্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগে ১০ দিন আগে বিপুল অংকের জরিমানা দেয়া নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবার সকালে কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন ট্রাক চালক মো. রাজা। তার স্বজন জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, দুর্ঘটনার পর রাজাকে কুমিল্লার স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে রাতে তাকে রাজধানীর নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাঠানো হয়।
এই হাসপাতালে আনার পরই রাজাকে আইসিউতে ভর্তি করে দেয় হাসপাতাল কর্মীরা। রাজধানীতে কোন স্বজন না থাকায় তার স্ত্রী এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা ভোরে ঢাকায় পৌঁছান। পরে বেলা ১০ টার দিকে রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানায় তারা যেন দ্রুত বিল করে রাজাকে ছেড়ে দেয়। কারণ যে চিকিৎসার খরচ তা বহন তাদের সম্ভব না।

কিন্তু কাউন্টারে টাকা দিতে গেলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয় তার রোগীর (রাজা) শারীরিক অবস্থা ভালো না। এখানে তাকে আইসিউতে রাখতে হবে।
জান্নাতুল বলেন, ‘আমরা অনেক বার রিলিজের কথা বলার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেড়টার দিকে বলে আপনাদের ৩২ হাজার টাকা বিল দিতে হবে। তখন আমরা বলি ১৬ হাজার টাকা বিল হবার কথা তা বেড়ে ডাবল হল কেন?’।

‘এ সময় তারা বলে আপনারা ১২টার আগে রোগীর রিলিজ করেননি, তাই বিল ডাবল হয়েছে। পরে অনেক আকুতি মিনতি করার পরও তারা বিল না কমিয়ে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়।’

জান্নাতুল জানান, তিনি ধানমন্ডি থানার ওসির নাম্বারে কল দিয়ে বিস্তারিত বলেন। পরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি সমাধানের কথা বলেন। কিন্তু তাতেও কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি।

‘তারা বলে ওসির চেয়ে বড় অফিসার আমাদের আছে। দেখি বিল না দিয়ে কী করেন।’

এ সময় রাজার চিকিৎসাও বন্ধ করে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জান্নাতুলের অভিযোগ, রাজার অবস্থা আইসিইউতে রাখার মতো না। তারপরও তাকে সেখানে রাখা হয়েছিল কেবল অতিরিক্ত টাকা আদায়ের জন্য।
পরে রাত ১০টার দিকে মোট ২২ হাজার টাকা জমা দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান রাজা।

ধানমন্ডির থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লতিফ বিশ্বাস বলেন, ‘দুপুরে একজন মোবাইলে জানান তার স্বজনকে কোন কারণ ছাড়া দ্বিগুণ বিল করে হাসপাতালে আটকে রাখা হয়েছে। আমি কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম গরিব মানুষ বিষয়টি সমাধান করে দেন কিন্তু তারা তা না করে তাদেরকে হুমকি ধামকি দেয়। পরে থানা থেকে অফিসার পাঠিয়ে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। শুনেছি তাও ২২ হাজার টাকা নিয়েছে।’

জানতে চাইলে নর্দার্ন হাসপাতালের তথ্য ডেস্কের কর্মকর্তা শাকিল ইসলাম বলেন, ‘এই রকম কোনো ঘটনা আমার জানা নেই।’
তাহলে কে জানে এবং হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কে এ বিষয়ে কথা বলবেন, তাদের ফোন নম্বরই বা কোনটি- এই বিষয়টি জানতে চাইলে ‘দেয়া যাবে না’ বলে লাইন কেটে নর্দার্ন হাসপাতালের কর্মী শাকিল ইসলাম।

অনুমোদনহীনভাবে ও ভুল পদ্ধতিতে রক্ত সংগ্রহ করার অভিযোগে নর্দান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে গত ৪ জুলাই ছয় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।

হাসপাতালটিতে কারা রক্ত দিত ও কাকে রক্ত দেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে কোনো তথ্য ছিল না। তা ছাড়া তাদের অপারেশন থিয়েটারটি নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন ছিল।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন