যে ভয়ে ‘মসজিদের ওযুখানায়’ রাত কাটাচ্ছে তরুণী!

  16-07-2018 01:23PM

পিএনএস ডেস্ক:নিজের বাড়ি থাকতেও মসজিদের ওযুখানায় বসে রাত কাটাচ্ছেন এক তরুণী। তাও আবার একদিন দুইদিন নয় দীর্ঘ আট বছর ধরে। অবাক হচ্ছেন তাই না! এমনই এক তরুণীর গল্প শোনাবো আজ আপনাদের। ঘটনাটি ঠাকুরগাঁও শহরের সত্যপীর ব্রিজের পাশে অবস্থিত একটি মসজিদের। গত শুক্রবার রাত ১১টার ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় মসজিদের ওযুখানায় তরুণীটিকে বসে থাকতে দেখে কৌতুহল জাগে এ প্রতিবেদকের।

কৌতুহলের বসে কথা হয় মেয়েটির সঙ্গে। সে বলে তার নাম মর্জিনা। বাড়ি পৌরসভা এলাকার বিআখাড়া স্কুলের পেছনে। বাবার নাম মরহুম রিয়াজ উদ্দিন।

তার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম! মসজিদের ওযুখানায় বসে দীর্ঘ ৮ বছর কাটিয়েছে সে। রাতে একটুও ঘুমাননি তিনি। সারা রাত মসজিদের ওযুখানায় অবস্থান করে পরের দিন সকালে বাসায় গিয়ে ঘুমান ২৭ বছর বয়সী মর্জিনা।

এরপর তার পোষা ছাগল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। দুপুরের দিকে যান অন্যের বাসায় কাজ করতে। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন। কাজ শেষে রাত ৯টার দিকে চলে আসেন মসজিদে। এভাবেই কেটে গেছে তার ৮ বছর।

মর্জিনা বলেন, ‘তিনি তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান। ছোটবেলায় তার মা মারা যান। তখন থেকে তার বড় মায়ের সংসারে অযত্ন-অবহেলায় বড় হতে থাকেন তিনি। এক রুমের একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে তার পোষা কিছু ছাগল নিয়ে থাকেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই ছাগল পোষার শখ ছিল মর্জিনার। সেই শখ পূরণ করতে মর্জিনা ছাগল পালনে ঝুঁকে পড়েন। এক সময় তার ৬০টির মতো ছাগল হয়। একদিন তার বড় মা মর্জিনাকে ঘরে আটকে রেখে ৫০টি ছাগল বিক্রি করে দেন। এরপর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।’

মর্জিনা আরও বলেন, ‘আমাদের বাড়িটা তিন শতক জমির ওপর। বাবা ১০ বছর আগে মারা গেছেন। এরপর ওই জমির ওপর নজর পড়ে প্রতিবেশি দবিরুলের। ইতোমধ্যে তিনি আমার ঘর ভেঙে এক শতক জমি দখল করে নিয়েছেন।’

‘মাঝে মধ্যেই আমাকে এসে মারধর করেন তিনি। তাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন আমার বড় মা ও তার সন্তানরা। আমি বাড়িতে গেলেই তারা আমাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে দবিরুল ও তার পরিবারের লোকজন আমার বাড়িতে প্রবেশের রাস্তাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। দবিরুল এক সময় ডিসি অফিসে চাকরি করতেন। সেই প্রভাবে এখনও এসব করছেন। এ বিষয়টি পৌরসভার মেয়রসহ সবাই জানেন। বিগত মেয়র ডালিম সাহেব এসে বিষয়টার মীমাংসা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এখন আরও উগ্র হয়েছেন দবিরুল।’

মর্জিনা বলেন, ‘গত আট বছর ধরে আমাকে মারধর করে আসছেন দবিরুল। অথচ এলাকার কেউ প্রতিবাদ করেন না। উল্টো তারা আমাকে পাগল বলে প্রচার করছে। আমার নাকি মাথায় ছিট আছে। তাই দবিরুলের ভয়ে রাতে বাড়িতে যাই না। ৮ বছর হলো এই মসজিদে রাত কাটাচ্ছি। এলাকার সবাই আমাকে চেনে। পুলিশও দেখেছে এখানে বসে থাকতে।’

কথা হয় মসজিদের পাশেই অবস্থিত বাড়ির মালিক মামুনুর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে তাকে মসজিদে বসে থাকতে দেখে আসছি। তবে তিনি পাগল না। জমি সংক্রান্ত জেরে শত্রুপক্ষ তাকে পাগল বানানোর চেষ্টা করছেন। আমি নিজেও উদ্যোগ নিয়েছি বিষয়টি সমাধান করার। কিন্তু পারিনি।’

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কুদ্দুস বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন