গৃহবধূকে কুপিয়ে চোখ তুলে ফেলার চেষ্টা

  08-08-2018 02:37AM



পিএনএস ডেস্ক: বরিশালের বাকেরগঞ্জে শাহিনুর বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূকে ছোরা দিয়ে কুপিয়ে তার চোখ ও শরীর জখম করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী মাওলানা ছত্তারকে আটক করেছে পুলিশ। তবে ছত্তারের দাবি, তার স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক কিংবা ডাকাতের আক্রমণে এ ঘটনা ঘটেছে। আর গৃহবধূ বলছেন, তার স্বামী অচেনা এক লোককে নিয়ে তাকে জখম করেছেন। প্রাণে মারতে চেয়েছেন।

সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার সন্তোষদি গ্রামের হাওলাদার বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহতাবস্থায় শাহিনুর বেগম (৪০) বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

জানা গেছে, সোমবার রাত আড়াইটার দিকে তার স্বামী মাওলানা ছত্তার ও অন্য একজন অচেনা পুরুষ ঘরে প্রবেশ করেন। এ সময় স্বামী মাও: ছত্তার গৃহবধূর বুকের উপর চেপে বসে হাতে থাকা ছোড়া দিয়ে গৃহবধূর চোখে ও শরীরে আঘাত করেন। আর বলতে থাকেন আজ তোকে মেরেই ফেলব। পরে গৃহবধূ প্রাণ ভিক্ষা চাইলে এ শর্তে ছাড়া পান- ‘বাড়িতে ডাকাতের আক্রমণ হয়েছে। ডাকাতের আক্রমণে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলতে হবে।’

গৃহবধূর ভাষ্য, রাতে স্বামী ঘরে প্রবেশ করে বুকের উপর চেপে বসে ছোড়া দিয়ে চোখে আঘাত করেন। সাথে সাথে আমি আমার চোখে অন্ধকার দেখতে পাই। আমি যাতে নড়াচড়া আর ডাক চিৎকার দিতে না পারি সেজন্য আমার পা এবং মুখ বেঁধে ফেলে অপর ঐ লোকটি। আমি আমার প্রাণ ভিক্ষা চাইলে আমার স্বামী বলে তোকে আজ মেরেই ফেলবো। আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। আমি যাতে কথা বলতে না পারি সেজন্য প্লাস দিয়ে আমার দাঁত ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করে। পরে একটি লাঠির মত চিকন বস্তু দিয়ে কানের ভেতরে ঢুকিয়ে আঘাত করা হয়। অনেক আকুতি মিনতি করার পর আমি যাতে এই ঘটনার কথা ডাকাতি বলে সবাইকে জানাই এই শর্ত দেয় আমাকে।

আমি তার কথায় রাজি হলে আমার স্বামী নিজেই নিজেকে আঘাত করে ঘরের দরজা খুলে ডাকাত পড়েছে বলে চিৎকার দেয়। পরে স্থানীয়রা ছুটে এসে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।’

প্রথমে এই ঘটনাকে ডাকাতি বলা হলেও আহত শাহিনুর জানান, এটা কোন ডাকাতির ঘটনা না। আমার স্বামী নিজেই আমার চোখ তুলে ফেলার চেষ্টা করেছে। আমি যদি আপনাদের একথা বলে দেই তাহলে আমার স্বামী আমাকে মেরে ফেলবে।

এ ব্যাপারে শাহিনুরের স্বামী মাওলানা ছত্তার বলেন, ‘রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে তিন সদস্যের একটি ডাকাত দল আমাদের ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় আমি সামনের ঘরে শুয়ে ছিলাম। পরে দুই জন এসে আমাকে বেঁধে মারধর করে। ভিতরে কি হয়েছে তা আমি দেখতে পাইনি। আমার মাথায়ও আঘাত করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সাথে বাকেরগঞ্জের চর আইচা গ্রামের রাব্বির সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। টানা দুই বছর যাবৎ তাদের সম্পর্ক রয়েছে। এনিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক সময় ঝগড়া হতো। আমার সন্দেহ রাব্বি এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’

এ ঘটনায় মাওলানা ছত্তারও বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
পরে মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে স্ত্রী শাহিনুরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার স্বামীকে হাসপাতাল থেকে আটক করে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ।

মাওলানা ছত্তার বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাদী ইউনিয়নের সন্তোদী বাজার জামে মসজিদের ইমাম হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির চরাদী ইউনিয়নের সদর এর দায়িত্ব পালন করছেন।

এই বিষয়ে বাকেরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) ফয়েজ উদিন মৃধা জানান, আমরা খবর পেয়ে সকালেই হাসপাতালে আসি। বিষয়টি ডাকাতি বলে শুনেছি। তবে শাহীনুরের বক্তব্যে এটা যে ডাকাতি নয় তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। তার স্বামী মাও: ছত্তার এই ঘটনা ঘটিয়েছে। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেবাচিম হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, শাহীনুরের চোখে আঘাত রয়েছে। এছাড়াও তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। চোখ নষ্ট হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখন স্পষ্ট করে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন