রামপালে অনুমোদনহীন প্রাইভেট হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু

  12-08-2018 08:22PM

পিএনএস, স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ রামপালে সুন্দরবন প্রাঃ হসপিটাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় সিজারিয়ান অপারেশনে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

জানা গেছে, উপজেলার ফয়লাহাট চৌরাস্তার মোড়ে অবস্থিত সুন্দরবন প্রাঃ হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদনহীনভাবে দীর্ঘদিন ধরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গত ৭ আগষ্ট বিকাল ৪ টায় পাশ্ববর্তী সোনাতুনিয়া গ্রামের বাবুল হাওলাদারের স্ত্রী বায়তুন বেগম (২৫) কে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য ভর্তি করা হয়। ওই দিন রাত ৮ টায় প্রসূতিকে ডাঃ সাধন কুমার বসু অপারেশন করেন। এরপর রোগীর অপারেশন স্থান থেকে মারাত্মক রক্তক্ষরণ শুরু হয়। মুমূর্ষ প্রসূতিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য কোথাও না পাঠিয়ে তাকে ওই হাসপাতালেই রাখা হয়। পরে তড়িঘড়ি করে তাকে রক্ত যোগাড় করে রোগীকে দেওয়া হলে ৮ আগষ্ট ভোর রাত ৪ টায় প্রসূতির মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।

এ ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য একটি প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ কর্মীরা ওই হাসপাতালে গিয়ে প্রকৃত তথ্য জানার চেষ্টা করেন। প্রসূতির স্বামী বাবুল হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার স্ত্রী বায়তুন বেগম স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলেই ফোনটি কেটে দিয়ে বন্ধ করে রাখেন।

হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হোসেনের কাছে সাংবাদিকরা ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রসূতির অবস্থা খুব খারাপ ছিল, ডাঃ সাধন কুমার বসু জরুরীভাবে তাকে সিজার করেন। রোগীনি পূর্ব থেকেই রক্ত শূন্যতায় ভুগছিলেন। তাদের আত্মীয়দের রক্ত দেওয়ার কথা থাকলেও অপারেশনের সময় কেউ রক্ত দেননি। পরে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে তাদের আত্মীয়রা রক্ত দেন। এরপর রোগী মারা যায়। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় এ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর জন্য রক্ত যোগাড় না রেখে এবং এ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক ছাড়া কিভাবে অপারেশন করা হলো ? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ডাঃ সাধন বাবু একাই সব বিভাগে অভিজ্ঞ। এই হাসপাতালের অপারেশনসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কোন অনুমোদন পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি। অনুমোদন ছাড়া হাসপাতাল পরিচালনা করা যায় কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন সবাই তো করেন। ক্রসম্যাচিং এর অনুমোদন ছাড়া কিভাবে রক্ত সঞ্চালনের কাজ করেন এটাও তারা করতে পারেন বলে জানান।

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য সার্জারি চিকিৎসক ডাঃ সাধন কুমার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোনটি বারবার কেটে দেওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগি জানান, ওই নাজমুল অবৈধভাবে একটি হসপিটাল খুলে এখানে রোগিদের সর্বশান্ত করছেন।

অনুমোদনহীনভাবে প্রাইভেট হাসপাতাল খুলে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনার বিষয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মাসুম ইকবালের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে দ্রুত তদন্ত কমিটি করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন অবস্থাতে স্বাস্থ্য সেবায় অনিয়ম ও দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। উল্লেখ্য ওই ঘটনায় রামপাল উপজেলা আইন শৃঙ্খলা মিটিং এ ও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন