গৃহবধূ হত্যার দায়ে শালী-দুলাভাই গ্রেফতার

  21-10-2018 12:03PM

পিএনএস ডেস্ক : চাঁদপুরে পরকীয়ার রোষানলে প্রাণ গেল গৃহবধূর। আর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত নিজের বোন ও স্বামী। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত দুইজনকেই এক সপ্তাহের ভেতর গ্রেফতার করছে পুলিশ। হত্যার সাথে জড়িত দু’জনই আদালতে ইতোমধ্যেই স্বীকারোক্তিও দিয়েছে।

RELATED NEWS
খাশোগি হত্যায় সৌদির প্রতি জার্মানির নিন্দা
টাকা না দেয়ায় ফুফুকে গলা টিপে হত্যা করল ভাতিজা
জানা যায়, হাজীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব হাটিলা ইউনিয়নের পূর্ব হাটিলা গ্রামের বেপারী বাড়ির প্রবাসী আব্দুর রহিমের মেয়ে আইরিন সুলতানা রিভা । সে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল এন্ড কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পাস করেন। হত্যার দায়ে অভিযুক্ত দুবাই প্রবাসী স্বামী হযরত আলী চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের মনিহার গ্রামের তোরাব আলী মুন্সি বাড়ির রুহুল আমিন মাস্টারের ছেলে। মাত্র ৬ মাস পূর্বে গত মার্চ মাসে পারিবারিকভাবে নাসরিন আক্তার রিভার সাথে বিয়ে হয় হযরত আলীর। হযরত আলী বিয়ের চার মাস পর দুবাই চলে যায় এবং হত্যাকান্ড ঘটানোর লক্ষ্যে গত ৮ অক্টোবর দেশে ফিরে আসেন। অপর অভিযুক্ত আসামী নাসরিনের ছোট বোন আইরিন আক্তার রেখা (১৬) স্থানীয় টঙ্গিরপাড় হাটিলা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যায়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।

গত ৯ অক্টোবর ওই গ্রামের বেপারী বাড়িতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে নাসরিনের ছোট বোন আইরিন ও স্বামী হযরত আলী রাতের বেলায় নাসরিনের পায়ে ওড়না পেঁচিয়ে পা চেপে ধরে এবং হযরত আলী মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। ওই সময় নাসরিন সজাগ হয়ে চিৎকার দেয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে হযরত আলী বালিশ ফেলে দিয়ে নাসরিনকে গলা চেপে ধরে এবং বুকে আঘাত করলে তার বুকের পাঁজর ভেঙে যায়। ওই অবস্থায় নাসরিন চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ সময় অভিযুক্তরা মনে করে নাসরিনের মৃত্যু হয়েছে। নাসরিনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে হযরত আলীকে অপর দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে ছোট বোন আইরিন। অন্যদিকে দরজা খুলে দিয়েই নাসরিনের ছোট বোন অজ্ঞান হওয়ার ভান ধরে পড়ে থাকে।

এরপর ওই বাড়ির বাসিন্দা ফেরদৌসী আক্তার মিনুসহ লোকজন নাসরিন ও আইরিনকে প্রথমে হাজীগঞ্জ বিসমিল্লাহ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরবর্তীতে তাদেরকে কুমিল্লা সিটি প্যাথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ অক্টোবর রাতে নাসরিনের মৃত্যু হয়। ওই রাতেই কুমিল্লা হাসপাতাল থেকে নিহত নাসরিনের মরদেহ ও ছোট বোন আইরিনকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। ঘটনার রাতে (৯ অক্টোবর) নাসরিনের মা নিলুফা ইয়াছমিন ঢাকায় চিকিৎসার জন্যে অবস্থান করছিলেন। আর পিতা আব্দুর রহিম ঘটনার সংবাদ পেয়ে পরদিন দেশে চলে আসেন।

পুলিশ জানায়, পরদিন থানার ওসি মৃত্যুর খবরটি জানতে পেরে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। বাড়ির সবাই তখন পুলিশকে জানায়, ডাক্তাররা বলেছে নাসরিন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। অতএব তারা লাশ নিয়ে টানাহেঁচড়া চায় না। স্বাভাবিকভাবেই তার দাফন কাফন করতে চায়। ইতোমধ্যে তার লাশ দাফনেরও প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। আর ছোট বোনের প্রচন্ড জ্বর।

নাসরিনের বাবা এবং স্বামীও দেশে ফিরে এসেছে খবর পেয়ে। নাসরিনের স্বামী স্ত্রী’কে হারানোর ব্যথায় কাঁদছে। তাকে তার শ্বশুর-শ্বাশুড়িসহ আত্মীয়-স্বজনরা শান্তনা দিচ্ছে। কিন্তু হাজীগঞ্জ থানায় মাত্র ১ মাস ২ দিন আগে অর্থাৎ গত ৭ সেপ্টেম্বর মতলব উত্তর থানা থেকে বদলি হয়ে যোগ যোগ দেয়া ওসি আলমগীর দেখলেন, নিহত নাসরিনের গলার দু’পাশেই আঁচড়ের মত স্পষ্ট দাগ আছে। তাছাড়া কুমিল্লার যে হাসপাতালে নাসরিন আক্তার রেবা মারা গেছে তারা তার মৃত্যুর সার্টিফিকেটে কার্ডিয়াক এ্যাটাকে নাসরিনের মৃত্যুর কথা লিখলেও তার যে পাজরের দু’পাশের হাড় ভাঙ্গা তাও রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। ওসি নাছেরবান্দা। কিছুতেই পেষ্টমর্টেম ছাড়া লাশ দাফন করতে দেবেন না।

তিনি পরিবার ও এলাকাবাসীর অমতে নাসরিনের মরদেহ উদ্ধার, সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি এবং ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করেন। ময়নাতদন্তে দেখা গেল রিবার বুকের একটা হাড় ভেঙ্গে গেছে এবং শ্বাসনালি অস্বাভাবিক। বুঝা গেল তাকে হত্যাই করা হয়েছে। শেষে নিহতের পিতা আব্দুর রহিম ১৪ অক্টোবর হাজীগঞ্জ থানায় ৪৬০ ধারায় অজ্ঞাতনামা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তার মেয়েকে হত্যা করেছে বলে উল্লেখ করেন।

মামলাটি তদন্ত করার জন্যে দায়িত্ব দেয়া হয় হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহম্মদকে। তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্যে ওসির নির্দেশে ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় একই উপজেলার বাকিলা বাজার থেকে নিহত রেবার স্বামী হযরত আলীকে আটক করে। আটকের পর হযরত আলী কুব দ্রুতই স্বীকার করে শ্যালিকার সাথে পরকীয়ার সূত্র ধরেই শ্যালিকার সহায়তা নিয়ে বিদেশ থেকে লুকিয়ে এসে স্ত্রী’কে হত্যা করেছে। তার কথানুযায়ী ঘটনার সাথে জড়িত আইরিনকেও পুলিশ আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে হযরত আলী স্ত্রীকে খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি পুলিশকে জানান, ঘটনার পূর্বে তিনি এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। ওই রাতে পরকীয়া প্রেমিকা (শ্যালিকা) আইরিনের সাথে যোগাযোগ করে ওই বাড়িতে আসেন। এর পূর্বে থেকে আইরিনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক এবং শারীরিক সম্পর্ক হয়। তিনি পুলিশকে উল্লেখিত হত্যাকান্ডের বিবরণ দেন।

পুলিশ হযরত আলী ও আইরিন আক্তারকে চাঁদপুর আদালতে পাঠালে অভিযুক্ত হযরত আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। বৃহস্পতিবার রিবার বোন রেখাকে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ আটক করে আদালতে সোপর্দ করেন। সেও হত্যার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। আপন বোনের প্ররোচনায় এ হত্যাকান্ড ছিলো পরিকল্পিত। দুলাভাইয়ের সাথে ঘর-সংসার করবে এই উদ্দেশ্যে তারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার কসবা থানায় জন্মগ্রহনকারী হাজীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আলমগীরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কীভাবে বুঝলেন রেবাকে তার স্বামী হত্যা করতে পারে বা এই হত্যার সাথে জড়িত? উত্তরে তিনি জানান, রেবা যেদিন মারা যায় সেদিনই তার স্বামী বিদেশ থেকে এসেছে বলে দাবি করে। সে এত দ্রুত কী ভাবে দেশে আসলো সেটা বিবেচনাতেই তার মনে খটকা লাগে। তখনই তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন, তাকে গ্রেফতার করার জন্য। গ্রেফতারের পর তার ঘাতক স্বামী হযরত আলী পুলিশকে জানিয়েছে, সে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর আগের দিনই দেশে ফিরে আসে। হত্যাকাণ্ড ঘটানো ও তার পরের দুই/তিন দিন সে শাঞরাস্তি উপজেলায় তার এক আত্মীয় বাড়িতে লুকিয়ে ছিল। রেবার লাশ তাদের বাড়িতে আসার পর সে ওই বাড়িতে যেয়ে জানায়, সে সেদিনই দুবাই থেকে এসেছে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন