আলোচিত একটি ছিনতাইয়ের ঘটনার: যা দেখালেন সরাইল থানার পুলিশ!

  17-11-2018 06:45PM

পিএনএস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মোঃ রাকিবুর রহমান রকিব : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সরাইল উপজেলা সদর ইউনিয়নে আলোচিত একটি ছিনতাইয়ের ঘটনার মাত্র তিন দিনের মধ্যেই শুক্রবার (১৬নভেম্বর) রাতে ছিনতাই হওয়া বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার সহ জড়িতদের গ্রেফতার করে সরাইল থানা পুলিশ সদস্যরা চমক দেখিয়েছেন। যা নিয়ে আলোচনা এখন সর্বত্রই। এ কাজে পুলিশের প্রশংসায় এখন এলাকাবাসী।

পুলিশের ভাষ্য মতে, গত ১৩ নভেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭.৩০ ঘটিকার সময় স্বর্ণ দোকানদার বিষ্ণু বণিক তার সরাইল বাজারস্থ “আপন স্বর্ণ শিল্পালয়” দোকান বন্ধ করে ব্যবসায় তাহার নিজ দোকানে গচ্ছিত প্রায় ১৮০(একশত আশি) ভরি স্বর্ণ ও নগদ প্রায় ৮,৫০,০০০/= (আট লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা নিয়ে নিরাপদে বাসায় রাখার লক্ষ্যে বণিকপাড়া রোডে রিকশাযোগে বাসায় রওয়ানা করেন। এসময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে উৎপেতে থাকা অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারীরা ঘটনাস্থল বড়দেওয়ানপাড়া এলাকায় বিষ্ণু বণিক রিক্সাযোগে পৌছলে ছিনতাইকারীরা তাহার চোখে মরিচের গুড়া ছিটিয়ে সাথে থাকা ব্যাগে রক্ষিত স্বর্নের অলংকার গুলি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

এ সময় ছিনতাইকারীদের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি হয়। তিনি ছিনতাইকারীদের একজনের গায়ের একটি টি-শার্ট এবং একটি হেলমেট রেখে দিতে সক্ষম হন।

এ ঘটনায় বিষ্ণু বণিক বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্তের দায়িত্বভার নেন থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মফিজ উদ্দিন ভুঁইয়া (আইজি ব্যাজ,বার) নিজেই। একপর্যায়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে টিম গঠন করে মামলার তদন্তকাজ শুরু করা হয়।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মোঃ মনিরুজ্জামান ফকিরের নেতৃত্বে ওসি মোঃ মফিজ উদ্দিন ভুঁইয়া, ওসি (তদন্ত) মোঃ নুরুল হক, এস আই আবু বকর ছিদ্দিক, এ এস আই মোঃ শাহ জালাল, মোঃ আনোয়ারুল হক, মোঃ এনামুল হক সহ কয়েকজন চৌকস পুলিশ সদস্য তথ্য প্রযুক্তির ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন।

শুক্রবার দুপুরেরদিকে জেলার বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা বাসস্ট্যান্ড হইতে মোঃ সাইদুল হক প্রকাশ সাইদুর (৪০), পিতা- মৃত নবিজুল হক, সাং- পূর্ব কুট্টাপাড়া (জ্বীন হাটি) ও মোঃ এমরান খাঁ (৩৫), পিতা- মৃত সুরুজ খাঁ, সাং- বড্ডাপাড়া (পূর্ব পাড়া ওসমান খাঁর বাড়ী), উভয়থানা- সরাইল, জেলা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া কে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তাদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে একপর্যায়ে পুলিশের কাছে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনতাই এর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তারা এবং দীর্ঘ আট ঘন্টা পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদের পর লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কার সদরের বণিকপাড়ার নিত্য তলাপাত্রের বাড়ীতে আছে বলে গ্রেফতারকৃতরা জানায়।

এএসপি মোঃ মনিরুজ্জামান ফকির এর ও ওসি মফিজ উদ্দিন ভৃয়ার নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা শুক্রবার রাতে গ্রেফতারকৃতদের সঙ্গে নিয়ে তাদের দেখানোমতে স্থানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘরে ব্যাপক তল্লাশি করেও ছিনতাইয়ের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারের সন্ধান পায়নি।

পরে পুলিশ বাড়ির মালিক নিত্য তলাপাত্রের খোঁজ করেন। তার ছেলে ও স্ত্রী জানান, নিত্য তলাপাত্র সকালে ভারতে চলে গেছেন। তখন পুলিশ নিত্য ছেলে রাজ তলাপাত্রকে বলে মোবাইল ফোনে তার পিতার সঙ্গে কথা বলতে।

ছেলের ফোন রিসিভ করেন নিত্য তলাপাত্র। একপর্যায়ে ফোনটি হাতে নেন ওসি মফিজ উদ্দিন ভুঁইয়া।তখন নিত্য তলাপাত্র ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এবং তার ঘরের পশ্চিম পার্শ্বে পুকুর পাড়ে কলাগাছের গোড়ায় গর্তের মধ্যে ছিনতাইয়ের স্বর্ণালঙ্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে ওসিকে জানান।

পুলিশ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শরাফত আলী ও মামলার বাদী সহ স্থানীয় ৪০/৫০ জন লোকের উপস্থিতিতে মুঠোফোনে নিত্য তলাপাত্রের তথ্যমতে ও গ্রেফতারকৃত আসামীদের দেখানো মতে একটি প্লাস্টিকের বাজারের ব্যাগে নীল পলিথিন ও স্কচটেপ দ্বারা মোড়ানো অবস্থায় লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়।

তারপর নিত্য তলাপাত্রের বাড়ির উঠানে জনসম্মুখে উদ্ধারকৃত স্বর্ণগুলি রেখে ওজন মেশিন দ্বারা মেপে সাতটি আইটেমে ১৪১ (একশত একচল্লিশ ভরি ১২(বার) আনা স্বর্ণালংকার যাল মূল্য অনুমান ৫৯,৫৪,০০০/= টাকা। পুলিশ উপস্থিত সাক্ষীদের মোকাবেলায় জব্দতালিকা করে
এসব হেফাজতে নেয়।

এদিকে ছিনতাই হওয়া নগদ টাকা, অবশিষ্ট স্বর্ণালংকার উদ্ধার ও পলাতক আসামীদেরকে গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে পুলিশ।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন