সহায়তার আড়ালে উগ্রবাদ প্রচার

  23-01-2019 05:23PM

পিএনএস ডেস্ক : রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক সহায়তার নামে উগ্রবাদে দীক্ষিত করার অভিযোগে মাস দুয়েক আগে স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ নামের একটি এনজিওর আট কর্মী গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পর তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর অনুমোদন নিয়েই সংস্থাটি কাজ করছিল এবং এর সঙ্গে পাকিস্তানের একটি সংস্থার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।

স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ (এসকেবি) ২০১৬ সালে এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো থেকে অনুমোদন নেয়। জানা যায়, ওয়ার্ল্ড অ্যাসেম্বলি অব মুসলিম ইয়থের (ওয়ামি) সঙ্গে একসময় যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁরাই পরে এসকেবি নামে এনজিওর নিবন্ধন করান। ১৯৭২ সালে সৌদি আরবে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের বাংলাদেশে কার্যক্রমের শুরু নব্বইয়ের দশকে। প্রথম থেকেই এটির পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা।

ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ছিলেন এই সংগঠনের প্রথম এদেশীয় পরিচালক। সবশেষ ২০০৫ সালে সংগঠনটির দায়িত্বে ছিলেন মো. রেদওয়ানুর রহমান। ছাত্রশিবিরের সাবেক এই নেতা এখন ফিলিপাইনে আছেন। তাঁর স্ত্রী ওরকাতুল জান্নাত স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশের (এসকেবি) চেয়ারম্যান। এসকেবির পরিচালনা কমিটির অন্য সদস্যরাও জামায়াত-শিবির ও ওয়ামি বাংলাদেশে ছিলেন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের কর্মকর্তারা জানান, স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশের (এসকেবি) সঙ্গে পাকিস্তানের আল খিদমাহ ফাউন্ডেশন নামে যে এনজিওটির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে, সেটির বিরুদ্ধেও জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগ আছে। এই সংস্থা সম্পর্কে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডন তাদের এক প্রতিবেদনে লিখেছে, আল খিদমাহ ফাউন্ডেশন পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামীর একটি দাতব্য সংস্থা। আফগান তালেবান ও আল-কায়েদার সদস্যদের আফগানিস্তানে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া এবং হামাসের মতো গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়ন করাসহ এই এনজিওর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ করেছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষকেরা।

গত নভেম্বরে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে এসকেবির মো. সাফওয়ানুর রহমান (৩৪), সুলতান মাহমুদ (২৫), মো. নজরুল ইসলাম (৩৮), মো. আবু তাহের (৩৬), মো. ইলিয়াস মৃধা (৩০), মো. আশরাফুল আলম (২৪), মো. হাসনাইন (৩০) ও মো. কামরুলকে (২৮) গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এই অনুসন্ধান চালায়। তদন্তের ভিত্তিতে দিন দশেক আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরও একজন।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, কাগজ-কলমে এসকেবির কাজ পানি ও পয়োনালা, রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া ও কোরবানির মাংস বিতরণ। জাকাত-ফিতরার নাম করে তারা বিদেশ থেকে টাকা এনেছে। সেই টাকা তারা রোহিঙ্গাদের উগ্রবাদে দীক্ষিত করার কাজে ব্যবহার করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তা ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর মৃত, আহত ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পরিবারকে এই এনজিও থেকে অর্থ সাহায্য করার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানের বিতর্কিত এনজিও আল খিদমাহ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার পরও এসকেবি এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর অনুমোদন কী করে পেয়েছে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুসন্ধানের সুপারিশ করেছে পুলিশ।

এসকেবির ওয়েবসাইটের হোম পেজে একটি ছবিই রয়েছে। সেটি এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর একজন কর্মকর্তার।

তবে এ ধরনের কোনো সুপারিশের কথা এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো জানে না বলে দাবি করেছেন ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আবদুস সালাম। তিনি বলেন, কাউন্টার টেররিজম এখনো এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর কাছে কিছু জানতে চায়নি।

সংস্থাটির হোম পেজে এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর কর্মকর্তার ছবি থাকা প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, ওই কর্মকর্তাকে খোঁজ নিতে পাঠানো হয়েছিল।

সুরক্ষা সেবা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সনজিদা শারমিন বলেন, বিদেশি অনুদাননির্ভর এনজিওগুলো অনুমোদন পাবে কি না, সেটা যাচাই করে গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও জেলা প্রশাসন। এসকেবি কীভাবে অনুমোদন পেল, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। - প্রথম আলো

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন