ছেলে বিসিএস ক্যাডার, অযত্ন অবহেলায় মরছে মা!

  24-01-2019 12:41PM


পিএনএস ডেস্ক : ফেনীতে ছেলেদের অমানবিক কাণ্ডের ফলে মৃত্যুর মুখে পড়েছে মা মৃদুলা রাণী সাহা (৮০)। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফেনী পৌরসভার ১৫ নং ওয়ার্ড মধুপুরের পোদ্দার বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন ফেনী মডেল থানার এস.আই আবদুল আলিম। বুধবার (২৩ জানুয়ারি) ফেনী সদর হাসপাতালে মৃদুলা রাণীর চিকিৎসার জন্য ৫ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। অমানবিক আচরণের কারণ অনুসন্ধানের জন্য ৩ ছেলে ২ মেয়েকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।

ফেনী মডেল থানার এস.আই আবদুল আলিম বলেন, মায়ের সাথে সন্তানদের অমানবিক আচরণের কারণ অনুসন্ধানের জন্য বৃদ্ধা মায়ের ৫ সন্তানকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডাকা হয়। তিন ছেলে টুটুল সাহা, সুশান্ত সাহা, বাপ্পি সাহা, মেয়ে শর্বরী সাহা বুধবার দুপুরে উপস্থিত হয়ে ঘটনার জন্য আন্তরিকভাবে দু:খ প্রকাশ করেন।

ছেলেরা বলেন, তারা নিয়মিত খোঁজ খবর রাখেন, গত কয়েকদিন খবর নিতে পারেননি। এসময়ে মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুলিশ সুপার এস.এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার এমন ধিকৃত কর্মকাণ্ডের জন্য সন্তানদের ভৎসনা করেন। তিনি সন্তানদের কাছ থেকে লিখিত মুচলেকা নেন। ভবিষ্যতে এমন কাজ আর হবে না বলে অঙ্গীকার নেন। এছাড়া পাশ্ববর্তী বাড়ির অধিবাসী ফেনী সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লিটন সাহাকে মা মৃদুলা রাণী সাহার সন্তানরা সঠিকভাবে দেখভাল করছে কিনা বিষয়টি তদারকি করার দায়িত্ব দেন পুলিশ সুপার।

ফেনীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়ের প্রধান সমন্বয়ক মঞ্জিলা আক্তার মিমি বলেন, অসহায় মায়ের পাশে আছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়ের সদস্যরা। মৃদুলা রাণী সাহার সার্বিক দেখাশুনা মাধ্যমে সুস্থ্য করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ফেনীর পুলিশ সুপার এস.এম. জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, বৃদ্ধা মায়ের সাথে অমানবিক আচরণের জন্য সন্তানদের কাছ থেকে মুচলেকা ও অঙ্গিকারনামা নেয়া হয়েছে। পরবর্তীতেও পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হবে। ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. হাসান শাহরিয়ার করিব জানান, বৃদ্ধা মা ভবিষ্যতে স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে ভুগতে পারে। তাকে অবজারবেশনে রাখা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আবু তাহের ভূঞা, সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুজ্জামান, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত কুমার শীল ও আবাসিক চিকিৎসক জয়দেব সাহাসহ ৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মৃদুলা রাণী সাহার এমআরআই, আল্টাসনোগ্রাফী, রক্তের কয়েকটি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

প্রসঙ্গত ; ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা থাকেন গ্রামের একাকি একটি বাড়িতে। বিসিএস ক্যাডার উচ্চ শিক্ষিত ও বৃত্তবান ছেলেরা থাকেন বউকে নিয়ে যার যার নিজস্ব বাসায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে মেয়েরা থাকেন স্বামীর বাড়ি। কিন্তু মায়ের স্থান হয়নি কারো কাছেই। গ্রামের বাড়িতে ছোট্ট একটি ঘরে অনাহারে অর্ধাহারে অযত্ন আর অবহেলায় মৃত্যুপথযাত্রী মা। দেখারও কেউ নেই। দীর্ঘ ৪ বছর ধরে মধুপুরের ওই বাড়িতে একা থাকেন বৃদ্ধা মা। তার বড় ছেলে বাপ্পি সাহা ও বিপুল সাহা ফেনী শহরের চালের আড়তের মালিক। তার বাবা হরিপদ সাহার রেখে যাওয়ার চালের আড়তে ব্যবসায়ীক কাজে ব্যস্ত থাকায় মায়ের খোঁজ নেননি তারা । স্ত্রী-ছেলে মেয়ে নিয়ে অন্য বাসায় থাকেন তারা। অপর ছেলে সুশান্ত সাহা বিসিএস ক্যাডার থাকেন কক্সবাজার। (অতিরিক্ত উপ-পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কক্সবাজার)। মেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শর্বরী সাহা ও সুমি সাহা দুইজনই গৃহিনী থাকে শ্বশুরালয়ে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন