বিদ্যুৎ বিভাগের সীমাহীন খামখেয়ালিপনা, জাহালম কাহিনীর পুনরাবৃত্তি কুমিল্লায়

  17-04-2019 08:15PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : বিদ্যুৎ বিভাগে অনৈতিক কাজের মঞ্চব চলছে বললে কমই হলা হবে। তারা যা করছে, অর্থাৎ যে বিল ধরিয়ে দিচ্ছে গ্রাহকদের, অঙ্ক যত বড় ও অবিশ্বাস্য হোক না কেন, আগে সেটা পরিশোধ করতে হয়। পরিশোধের পর আপত্তি জানানোর কথা বলা হয়। এই কালো দিকটা স্বাধীন দেশে অবাধে চলে আসছে যুগের পর যুগ। এটা গ্রাহক সাধারণের মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের একশ্রেণীর কর্মকর্ত-কর্মচারী ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। তাদের কথায় না চললে ইচ্ছেমতো বিল বানিয়ে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরায় নিরীহ গ্রাহক সাধারণকে। ইচ্ছেমতো বিল করে বাধ্য করে তা পরিশোধ করতে। দেখায় তার হাতে কত অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা। কর্মকর্তা তো দূরের কথা, একজন মিটার রিডারের হাতেই এভাবে জিম্মি গ্রাহক সাধারণ।

একটি অষ্টম আশ্চর্য ঘটেছে এ খাতে।এতে প্রমাণ হচ্ছে এ খাতটি কতটা অনিয়ন্ত্রিত এবং নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে চলছে। যে নৈরাজ্য প্রমাণ করছে সভ্য সমাজে বসবাসের অযোগ্য আমরা এবং আমাদের সমাজ। বিদ্যুৎ বিভাগের এমন অনৈতিক ও অরাজক পরিস্থিতি রোধে বিজ্ঞ আদালতের একটি সুয়োমটো জরুরি। অন্যথায় এ খাতে এটা যেভাবে অপ্রতিরোধ্য গতি পেয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে গ্রাহকদের জন্য এটি বিষফোড়ায় পরিণত হবে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

একটি উদাহরণ তুলে ধরছি। বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে ঘুষের চাহিদা ছিলো ১০/১৫ হাজার টাকা মাত্র! মতিন মিয়া সেই সময় চার হাজার টাকা দিয়েও ছিলেন। কিন্তু বাকি টাকা পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ সংযোগ জোটেনি তার কপালে। তবে বিদ্যুৎ না পেলেও বকেয়া বিলের মামলায় দিনমজুর মতিনকে ঠিকই যেতে হলো কারাগারে। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মোচাগড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, আব্দুল মতিনকে (৪৫) গ্রেফতার করে কুমিল্লা জেলহাজতে প্রেরণ করেছে মুরাদনগর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কোম্পানীগঞ্জ জোনাল অফিসের গ্রাহক ও সাধারণ মানুষদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা। সেই মামলায় মঙ্গলবার রাতে মুরাদনগর থানার এসআই কবির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আব্দুল মতিনকে আটক করে বুধবার দুপুরে কুমিল্লা আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কোম্পানীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হাবিবুর রহমান আবেদন ফাইলে ছবি পরিবর্তনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আব্দুল মতিনের নামের মিটার সফিকুল ইসলাম ব্যবহারের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। মামলা হওয়ার পূর্বে মতিন মিয়া নোটিশ পেয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতেন, তাহলে আজ এ ঘটনাটি ঘটতো না।

পল্লী বিদ্যুতের এসব ঘটনা ডালভাত। এরা এমনটা করে পার পেয়ে যাচ্ছে। এদের অত্যাচারে গ্রাহক সাধারণ অতিষ্ঠ। সেবার নামে অনাচার আর কত সহ্য করবে গ্রাহক সাধারণ! গ্রাহক নন- বিলের নামে এমন মানুষকেও যে তারা নিপীড়ন করে, সত্য উঠে এসেছে প্রতিবেদনটিতে। সেবার নামে তারা যে টাকা নেয়, সে বিষয়টাও স্পষ্ট হয়েছে। এদের খপ্পর থেকে গ্রাহক সাধারণ ও দেশবাসীকে রক্ষায় বিজ্ঞ আদালতের জরুরি হস্তক্ষেপ সময়ের দাবি। অণ্যথায় এ খাতেও জাহালমের পুনরাবৃত্তি থামানো যাবে না।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন