সাধু-সন্ন্যাসীর মিলনমেলায় চলে গাঁজা সেবন

  09-05-2019 11:55PM

পিএনএস ডেস্ক: হিন্দু-মুসলমানের তীর্থস্থান বগুড়ার মহাস্থানগড়ে বসেছে সাধু-সন্ন্যাসী ও পুণ্যার্থীদের মিলনমেলা। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার মহাস্থানে বসে এ মেলা।

একদিকে যেমন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগিতে মেতে ওঠেন, অপরদিকে আধ্যাত্মিক সাধনায় বিশ্বাসী সাধু সন্ন্যাসী ও বাউল-সুফিরা জিকির ও মারফতি গান গেয়ে আসর জমান।

এসব আসরে পালা করে চলে গাঁজা সেবন। এবার অবশ্য প্রশাসন থেকে সেখানে আসর জমতে বাধা দেয়া হয়েছে। আর রমজান মাসে এবার এ মেলা হওয়ায় আশানুরূপ লোক সমাগম হয়নি বলে আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

কথিত আছে, অত্যাচারী রাজা পরশুরামকে পরাজিত করে সুফী ও সাধক হযরত শাহ সুলতান বলখীর (র.) মহাস্থান বিজয় এবং নিজের সম্ভ্রম ও ধর্ম রক্ষার জন্য পরশুরামের একমাত্র বোন শিলা দেবীর করতোয়া নদীতে আত্মবিসর্জনের দিন বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার। সেই থেকে পরবর্তী বছরগুলোতে এ দিনে মহাস্থানে উভয় ধর্মের মানুষরা সমবেত হয় পুণ্য সঞ্চয়ের আশায়। কালক্রমে এটি হয়ে ওঠে সাধু-সন্যাসীদের মেলা।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগির জন্য শাহ সুলতান বলখীর (র.) মাজারে অবস্থান নিলেও সাধু-সন্ন্যাসী ও বাউলরা অবস্থান নেন হযরত বোরহান উদ্দিনের (র.) মাজার, পশ্চিম পাশের আমবাগান ও উত্তরপাশের আবাসিক এলাকার মাঝে। এছাড়া মাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের মাঠসহ পুরো মহাস্থান এলাকায় বসে মেলা।

হযরত বোরহান উদ্দিনের (র.) মাজার ও পশ্চিমে মহাস্থান বাগান চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে সামিয়ানা টাঙিয়ে মারফতি গানের আসর বসায় বাউল সাধকরা। এবার মেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব সাধু-সন্যাসী সমবেত হয়েছেন, তারা প্রশাসনের কঠোরতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ফকির-বাউল ও সাধু-সন্যাসীদের অভিযোগ, আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য তারা সিদ্ধি সেবন করেন ও মারফতি গানের আসর বসান। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন ও ধর্মের নামে কিছু উগ্রগোষ্ঠী তাদের সেখান থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছেন।

মাজার এলাকায় অর্থ ও খাবার পাওয়ার আশায় অগণিত ফকির-মিসকিন সমবেত হন। তারা অর্থপ্রাপ্তির আশায় সারিগান গেয়ে মাজার চত্বর মুখরিত করে রাখেন। মহাস্থানে এসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন ও আশা পূরণের জন্য অনেকেই মাজারের পশ্চিম পাশে দুধ পাথরে দুধ ঢেলে দেন।

শুধু সাধু-সন্ন্যাসী আর পুণ্যার্থীরা নয়, বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষও সমবেত হয় মহাস্থানের মেলায়। মাজারের পশ্চিম পাশের মাঠে হরেক রকম পণ্য নিয়ে বসা মেলা থেকে তারা গৃহস্থালীর নানা সামগ্রী কেনাকাটা করেন। এছাড়া মহাস্থানের ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিত কটকটি বিক্রিও ছিল ব্যাপক।

মাজার চত্বরের নিরাপত্তা ও গাঁজা সেবন বন্ধের বিষয়ে মেলার শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, মেলা এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পুরো মাজার ও আশপাশের এলাকা নজরদআরি বাড়ানো হয়েছে।

সাধু-সন্ন্যাসীদের আসরে আমরা কোনো বাধা দেইনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি মাজার কমিটির বিষয়। মেলা এক দিনের হলেও সেখানে গত তিনদিন থেকেই লোক সমাগম শুরু হয়েছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত সেখানে একইভাবে লোক সমাগম থাকবে।

মহাস্থান মাজারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার মহাস্থানের এই বৈশাখী মেলায় জনসমাগম কম হয়েছে। রমজান মাসের কারণে দূর-দূরান্তের মানুষ তেমন আসতে পারেননি।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন