ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে

  04-12-2017 09:55AM


পিএনএস ডেস্ক: ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নকে ইতিবাচকভাবে দেখার সুযোগ নেই। বিষয়টি তাই ব্যবসায়ীদের কপালে ভাঁজ ফেলছে। কারণ গত তিন মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় দুই টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সেটি প্রায় তিন টাকা পর্যন্ত কমেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান অনেক দিন স্থির ছিল। তবে বর্তমানে আমদানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় সেটি বাড়তে শুরু করেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংককে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। ব্যাংক তা করার চেষ্টাও করছে।

বর্তমানে রপ্তানির চেয়ে আমদানি অনেক বেড়ে গেছে। ফলে দেখা দিয়েছে বাণিজ্য ঘাটতি। বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় সরকারকে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকলে প্রায় সব পণ্যের মূল্যস্ফীতি ঘটবে। কারণ আমাদের দেশের পণ্য কিংবা কাঁচামাল আমদানি নির্ভর। বাণিজ্যিক ব্যাংকের এডি শাখাগুলো ঘোষিত বিনিময় হার থেকে দেড় থেকে দুই টাকা বেশি নেবে এটা স্বাভাবিক। তবে আগে ডলারের দাম ৮০-৮১ টাকা ছিল, সেটি প্রায় ৮৩ টাকা পর্যন্ত উঠে যাওয়াটা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক।’


সংশ্লিষ্টরা জানান, রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বাণিজ্য ঘাটতি। ফলে ডলারের বিপরীতে দিন দিন টাকার অবমূল্যায়ন ঘটছে। ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮২ দশমিক ৩০ টাকা হারে। তবে আন্তঃব্যাংকের বাইরে অন্য ক্ষেত্রে ডলারের দর আরো বেশি।


ব্যবসায়ীরা জানান, আমাদের দেশের অর্থনীতি প্রধানত আমদানিনির্ভর। আমদানি ব্যয় সংকোচন করা না গেলে সব ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। অপরদিকে ডলারের মূল্যমান বেড়ে যাওয়ায় ভ্রমণ, চিকিৎসা ও হজের ব্যয়ও বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা জানান, ডলারের সরবরাহ বাড়াতে হলে সরকারকে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি ৯ শতাংশ এবং রপ্তানি ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়েছে। অর্থের হিসেবে গত অর্থবছরে চার হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়। বিপরীতে পণ্য রপ্তানি হয় তিন হাজার ৪০১ কোটি ডলারের। ফলে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৯৪৯ কোটি ডলার। যা গত ছয় অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে এটি চলতি দশকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতি।


তার আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে ৯৯৩ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৬৪৬ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত অর্থবছরে ঘাটতি বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এছাড়া বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহও কমেছে। এ কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন ঘটছে।


ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, দেশে বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে চাল আমদানির বাড়তি চাপ তৈরি হয়। বিশেষ করে বিনা মার্জিনে চাল আমদানির সুযোগ দেওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী চাল আমদানির জন্য এলসি খুলেন। এর সঙ্গে খাদ্যপণ্য গম, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ আমদানিরও চাপ রয়েছে। এছাড়া তৈরি পোশাক, বিদ্যুৎ, সিমেন্ট ও ওষুধ শিল্পের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। এ অবস্থায় আমদানি খরচ মেটাতে ডলারের সংকটে পড়েছে অনেক ব্যাংক।


আর্থিক খাত বিশ্লেষকরা জানান, বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর যে হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে লেনদেন ঘাটতিকে অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছে। কারণ এর প্রভাবে টাকার দর কমে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। অনেক সময় বিনিয়োগজনিত কারণে আমদানি বেড়ে লেনেদেন ঘাটতি তৈরি হলে তাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয়। তবে বাংলাদেশে বিনিয়োগের কারণেই বেশি আমদানি হচ্ছে তা বলা যাবে না। কারণ চাল সঙ্কটের কারণে খাদ্য আমদানি বেড়ে গেছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের দামও বাড়ছে।


জানা গেছে, গত ২৯ নভেম্বর জরুরি বৈঠক করে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। ওই বৈঠকে ঘোষিত দামেই ডলার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং এ সিদ্ধান্ত মেনে চলতে এডি ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাজারের চাহিদার ওপর ডলারের দাম ওঠানামা করে। ডলারের দর উঠানামা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সূত্র অনুসারে ডলারের দাম নির্ধারিত হয়। তবে ডলার বিক্রিতে কেউ ঘোষিত দামের চেয়ে বেশি অর্থ নিলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মাহবুবুল আলম মিডিয়াকে বলেন, গত বছরের এমন সময়ে ব্যবসায়ীরা ডলার নেগোশিয়েট করত ৮০-৮১ টাকায়। কিন্তু বর্তমানে তা বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৮৫ টাকা পর্যন্ত ছুঁয়েছে। এতে করে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। অপরদিকে ডলারের মূল্যমান বৃদ্ধি রপ্তানির জন্য ভালো দিক। তবে অনেক সময় দেখা যায়, ব্যাংকগুলো সেই বাড়তি টাকা রপ্তানির ক্ষেত্রে দেয় না। আমদানির ক্ষেত্রে উল্টো ঘোষিত দরের বাড়তি টাকা নেয়।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন