ফারমার্স ব্যাংকের এমডি অপসারিত হচ্ছেন!

  14-12-2017 09:37AM


পিএনএস ডেস্ক: এবার অপসারিত হচ্ছেন ফারমার্স ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শামীম। দুর্নীতি ও পরিচালনায় ব্যর্থতা দায়ে নতুন প্রজন্মের এ ব্যাংকের এমডিকে অপসারণের জন্য চূড়ান্ত কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল প্রথম দিনের মতো শুনানি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটি। আজ শুনানি শেষ হবে। একই প্রক্রিয়ায় নতুন প্রজন্মের আরেকটি ব্যাংক এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এমডিকে অপসারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ দিকে শুনানির প্রথম দিনেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সব দায় পরিচালনা পর্ষদের ওপর চাপিয়েছেন এমডি শামীম। তিনি স্থায়ী কমিটিকে জানিয়েছেন, ব্যাংকটির দৈনন্দিন কার্যক্রমে পর্ষদ হস্তপে করত, যা পর্ষদের এখতিয়ারের বাইরে ছিল। ফলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। শুনানিতে অংশ নেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

গত ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ফারমার্স ব্যাংকের এমডিকে অপসারণের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইন ৪৬ ধারা অনুযায়ী তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা উপো করে নতুন ঋণ বিতরণের দায়ে এ নোটিশ দেয়া হয়েছিল। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এমডিকে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল সাত দিনের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এমডি সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। ফলে এমডিকে চূড়ান্তভাবে অপসারণের জন্য এমডিদের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের স্থায়ী কমিটিতে তাকে ব্যক্তিগত শুনানিতে ডাকা হয়। কোনো ব্যাংকের এমডিকে অপসারণের আগে এটি চূড়ান্ত পর্যায়। গতকাল বুধবার শুনানির প্রথম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্থায়ী কমিটি তাকে প্রায় তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আজ তার শেষ দিনের শুনানি করা হবে। এ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২৬ নভেম্বর এমডিকে শোকজের চিঠি দেয়ার পরদিন অর্থাৎ ২৭ নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরসহ পর্ষদের কয়েকজন সদস্য পদত্যাগ করেন। নতুন পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়।

গতকাল শুনানির প্রথম দিনে সাবেক পর্ষদ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন এমডি শামীম। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, এর আগে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পেরে ব্যাংকটির একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক চাকরি ছেড়ে অন্য ব্যাংকে গিয়ে যোগ দিয়েছেন। তিনিও পর্ষদের কাছে জিম্মি ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।

শুনানিতে সার্বিক ব্যর্থতার দায় নিতে চাননি। তিনি কমিটিকে বলেছেন, ফারমার্স ব্যাংক কার্যক্রম শুরুর আগে থেকে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের আগে থেকে অফিস ভাড়া দেখিয়ে বিপুল অর্থ তুলে নেয়া হয়। তখন অবশ্য তিনি এমডি ছিলেন না। এভাবে পর্ষদ শুরু থেকে নানা অনিয়মের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ব্যবহার করেছে। এখানে এমডিসহ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কাজের স্বাধীনতা পায়নি। ফলে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি চাইলেও রোধ করা যায়নি। শুনানিতে এমডি কমিটিকে জানান, পরিচালকেরাও অনেকে নিয়মিত অফিসে আসতেন। পর্ষদের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি শাখা পর্যায়েও যোগাযোগ করতেন। শাখা ব্যবস্থাপকদের দিকনির্দেশনা দিতেন। ফলে তারা অনেক সময়ই আমার নির্দেশনাও মানতে চাইত না।

তারল্য সঙ্কটের দায় প্রধান নির্বাহী এড়াতে পারেন কি না প্রশ্নে ফারমার্স ব্যাংকের এমডি বলেন, এখানেও তার নিজের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার ছিল না। তিনি সব কিছু পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যানের নির্দেশে করেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নতুন ঋণ বিতরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশ্নে তিনি বলেন, এটি তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে একপর্যায়ে জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কিছু ভয় থেকে তা করতে পারেননি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনকারী দলকে তিনিই এ তথ্য দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ৬ ডিসেম্বর এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার ক্ষেত্রে ৯ মাস সময় নিলেও এ কে এম শামীমের ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ করতে চায় না বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ৩১ ডিসেম্বর এ কে এম শামীমের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগেই সম্ভব হলে এ প্রধান নির্বাহীকে অপসারণ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংকটি পরিচালকদের একটি অংশ তার অপসারণ ঠেকাতে নানা মহলে জোর তদবির করছেন বলে জানা গেছে। সূত্র: নয়া দিগন্ত

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন