নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশে ভুল, পরে প্রতাহার

  25-12-2017 02:54PM


পিএনএস ডেস্ক: রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার ভুল ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রবিবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) পদের নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, এক সিরিয়ালের সবাই পাস, এরপর শত শত প্রার্থী ফেল।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকেই বলেন, তারা ৭৫ নম্বর পেয়েও পরীক্ষায় টিকতে পারেননি। অনেকে কম নম্বর পেয়েও তালিকায় স্থান পেয়েছেন।

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ১০০০২৬ থেকে ১০০০৪৭ পর্যন্ত যারা ছিলেন, তারা সবাই পাস করেছেন। এরপর শত শত প্রার্থী থাকলেও তাদের কেউ পাস করেননি।

অফিসার (ক্যাশ) পদে ফল প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ভুল হয়েছে বলে একজন কর্মকর্তা স্বীকার করে বলেন, ‘সঙ্গে সঙ্গেই ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল ওয়েবসাইট থেকে সরানো হয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকৃত ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির উপ-মহাব্যবস্থাপক আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন।

রবিবার রাতে তিনি বলেন, ‘এটা ভুলবশত হয়েছে। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে এই ভুল হয়েছে। যে ফলাফল প্রকাশ হওয়ার কথা কথা ছিল তা না হয়ে অন্য ফলাফল প্রকাশ হয়েছে, সোমবার সরকারি ছুটির দিন। মঙ্গলবার সঠিক ফল প্রকাশ করা হবে।’

বাণিজ্যিক খাতে ঋণ দিয়ে কৃষি ব্যাংক ধরা
কৃষিবহির্ভূত বাণিজ্যিক খাতে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ বিতরণ এবং এর পুরোটাই খেলাপি হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে এই খাতে আর ঋণ না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।


হতদরিদ্র কৃষকদের মধ্যে ঋণ বিতরণ বাড়ানো এবং শুধু কৃষি সংশ্লিষ্ট শিল্প বা সেবা পণ্যের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্য ঋণ কার্যক্রম সীমিত রাখার নির্দেশ দিয়ে সম্প্রতি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

কৃষি ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ইউসূফ বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া চিঠি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ওই সব খাতে বিতরণ করা ঋণ আমরা আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ব্যাংকটি ১৬টি বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার মাধ্যমে অকৃষি বাণিজ্যিক খাতে ১৯২৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যার পুরোটাই এখন খেলাপি।


এই সময়ে ভুয়া এলসির বিপরীতেও ঋণ বিতরণের তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কম সুদে ঋণ বিতরণের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষকদের সহযোগিতা করে দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে এই বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়।


কিন্তু সুদ মওকুফ, ভর্তুকি সুদে ঋণ বিতরণ, আমানতের সুদ হার বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে ব্যাংকটি অনেকদিন ধরেই লোকসান দিয়ে আসছে।


সেই প্রেক্ষাপটে ২০১০ সাল থেকে বেশি মুনাফার আশায় অকৃষি বাণিজ্যিক খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়।


অকৃষি খাতে দেওয়া ঋণের কারণে তহবিলশুন্য হয়ে পড়ায় ব্যাংকটি কৃষি খাতে ঋণ দিতে পারছে না।খেলাপি ঋণ বাড়ায় এর বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) রাখতে হচ্ছে। যদিও ব্যাংকটি প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে পারছে না।


ব্যাংকের এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।


ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ইউসূফও মনে করেন, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অকৃষি বাণিজ্যিক খাতে ঋণ বিতরণ করাটা ভুল ছিল।

তিনি বলেন,. ‘আমি অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের অসন্তোষ প্রকাশের সঙ্গে একমত। কৃষি ব্যাংক মূল কার্যক্রমের বাইরে গিয়ে ঠিক করেনি। অকৃষি বাণিজ্যিক ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যার অনেক ঋণ এখন আটকে আছে। অনেক ভুয়া এলসির বিপরীতে টাকা চলে গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, অকৃষি বাণিজ্যিক খাতে ঋণ বিতরণ করা যাবে না। আমিও মনে করি তাদের নির্দেশনা যথার্থ আছে। কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলকেও ঋণ দিয়েছে কৃষি ব্যাংক। এতে প্রমাণ হয় কিছু ভুল-ত্রুটি হয়েছে।’

এসব খেলাপি আদায়ে কৃষি ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কঠোর বলে জানান ইউসূফ।

তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা ৫০০ কোটি টাকা আদায় করেছি। এখনও প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এসব ঋণ আদায়ে আইন অনুযায়ী সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন বহির্ভূত যা হয়েছে সেক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় খেলাপি ঋণ কমিয়ে ২০ শতাংশের মধ্যে নামানোর কথা।

এ প্রসঙ্গে এম এ ইউসূফ বলেন, ‘অবশ্যই চেষ্টা রয়েছে ২০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার। সেজন্য ১০২৯টি শাখার ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দায়বদ্ধতা বাড়ানো হয়েছে। অঞ্চলপ্রধানদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। আবার কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরও করছি।’

ব্যাংকের সার্বিক উন্নয়নে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘এই পরিকল্পনার প্রধান কাজ কর্মকর্তাদের মানসিকতার পরিবর্তন। পাশাপাশি ব্যাংকের লোকসান কমানো।

তার ভাষায়, ‘আমরা চাচ্ছি আগামী তিন বছরের মধ্যে ব্রেক ইভেনে আসতে। তবে এইসময়ে বেতন বাড়ানো, ঋণের সুদ হার কমানো- এসব কারণে লোকসান কতটা কমানো যাবে সেটা এখনই বলতে পারছি না।’

ব্যাংকের আয় বাড়াতে সেবা খাতে ব্যবসা বাড়ানো ও প্রযুক্তি উন্নয়নেরও পরিকল্পনা নিয়েছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।

বিশেষ করে রেমিটেন্স প্রবাহ, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এবং অনলাইন কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, মার্চ শেষে ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণ ১৬ হাজার ৩০৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৫ হাজার ৩৭২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা খেলাপি, যা ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৩২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

এরমধ্যে মন্দ খেলাপি ঋণ (আদায়ের সম্ভাবনা কম) ৩ হাজার ৫৩৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

ব্যাংকটির প্রভিশন রাখার কথা ২৯২৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে প্রভিশন আছে মাত্র ৮৪৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

বর্তমানে ব্যাংকটির পুঞ্জীভূত লোকসান ৬১৩১ কোটি টাকা। ২০০১ সাল থেকে এই লোকসান দেখানো হচ্ছে।

গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটি সরকারের কাছে ৬৪৪৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা মূলধন চেয়েছে।

পিএনএস/আনোয়ার


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন