প্রশ্নের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক

  10-04-2018 09:36AM

পিএনএস ডেস্ক: আগ্রাসী ব্যাংকিং বন্ধে ব্যাংকগুলোর ঋণসীমা কমিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য গত ৩০ জানুয়ারি এক সার্কুলার জারি করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারছে না। এ নিয়ে তিন দফা সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সার্কুলার কার্যকর প্রথমে জুন, পরে ৩১ ডিসেম্বর এবং সর্বশেষ ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।

বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে প্রশ্নের মুখে পড়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোর ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপানোর আগে এর প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও ব্যাংকারদের মধ্যে নানা প্রশ্নের উদ্ভব হচ্ছে। তাদের মতে, বিনিয়োগসীমা কেনই বা কমানো হলো, আবার কেনই বা কার্যকারিতার সময়সীমা বারবার পরিবর্তন করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বাস্তব বিনিয়োগ চোখে না পড়লেও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে এ বিনিয়োগ প্রবাহ। দেখা যায়, নভেম্বরে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র স্থাপনের হার (এলসি খোলার হার) ৩০ শতাংশ অতিক্রম করে। আর বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ২০ শতাংশে উঠে যায়। আগ্রাসী এ ব্যাংকিংয়ের কারণে ঋণ আমানতের অনুপাত কোনো কোনো ব্যাংকের শতভাগ ছেড়ে যায়। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে ৮৫ শতাংশ।

কগুলোর এমন আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে তহবিল ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। কারণ, দীর্ঘ দিন ধরে আমানতের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ১০ শতাংশের নিচে। সাধারণত, ঋণের প্রবৃদ্ধি আমানতের চেয়ে কম হওয়ার কথা, সেখানে আমানতের প্রবৃদ্ধির চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হয়ে যায়।

তহবিল ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে গত ৩০ জানুয়ারি ব্যাংকগুলোর জন্য এ বিষয়ে এক সার্কুলার জারি করা হয়। বলা হয়, ঋণ আমানতের অনুপাত প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে ৮৫ শতাংশের পরিবর্তে সাড়ে ৮৩ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য ৯০ শতাংশের পরিবর্তে ৮৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। এর জন্য সময় দেয়া হয় ছয় মাস। অর্থাৎ যেসব ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ থাকবে তাদের ৩০ জুনের মধ্যে পুনঃনির্ধারিত সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নির্দেশনার পর ব্যাংকিং খাতে অনেকটা আতঙ্ক বিরাজ করে। যেসব ব্যাংকের ঋণসীমা নির্ধারিত সীমার চেয়ে অতিরিক্ত ছিল তারা আর নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছে না। আবার রাতারাতি বাড়তি বিনিয়োগ গ্রাহকের কাছ থেকে আদায়ও করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে কোনো কোনো ব্যাংক আমানত বাড়িয়ে ঋণসীমা সমন্বয় করার উদ্যোগ নেয়। এতে আমানতের সুদ হার বেড়ে যায়, তবে এর চেয়ে বেশি হারে ঋণের সুদহার বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে কোনো কোনো ব্যাংকে শিল্প ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠে যায়। যেখানে আগে ছিল সাড়ে ১২ শতাংশ।

ঋণের সুদহার বাড়তে থাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ব্যবসায়ী সমাজ। কারণ, নানা কারণে বিনিয়োগব্যয় বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে ঋণের সুদহার বেড়ে গেলে ব্যবসায় ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। বেড়ে যাবে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ব্যবসায়ীদের পণ্যের মূল্যের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যাবে। এমনি অবস্থায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর চাপ দিতে থাকে। একপর্যায়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সার্কুলার দিয়ে সময়সীমা ছয় মাস বাড়ানো হয়।

কিন্তু এতেও ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট না হয়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। ব্যাংকের ব্যবসায়ী পরিচালকেরা হোটেল সোনারগাঁওয়ে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নিয়ে এক বৈঠকের আয়োজন করে। ওই বৈঠকে বাজারে টাকার সঙ্কট কাটাতে আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য নগদ জমার হার (সিআআর) ১ শতাংশ কমিয়ে নেন। এর ফলে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা চলে যায় ব্যাংকগুলোর হাতে। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে ঋণ আমানতের অনুপাত বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক তার জারি করা সার্কুলারে আবার পরিবর্তন এনেছে। ঋণ আমানতের অনুপাত নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে ৩১ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। গতকাল এ বিষয়ে এক সার্কুলার জারি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে।

সাধারণ ব্যাংকারদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হলে ব্যাংকগুলো তা বিনা বাক্যে বাস্তবায়ন করবে এটিই নিয়ম। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত দেয়ার পর তা বারবার পরিবর্তন করা হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অদূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন সিদ্ধান্ত বাজারে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা সিদ্ধান্ত দেয়ার আগেই ভাবা প্রয়োজন। সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে প্রয়োজনে ব্যাংকারদের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে। তা হলে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়ার পর তা পরিবর্তন করতে হবে না। বাজারে পড়বে না নেতিবাচক প্রভাব। সূত্র: নয়া দিগন্ত

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন