জনতা ব্যাংকের দুই পরিচালক প্রত্যাহার

  05-10-2018 01:57AM

পিএনএস ডেস্ক : জালিয়াতি করে ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও এননটেক্সকে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে জনতা ব্যাংকের দুই পরিচালককে সরিয়ে দিল সরকার। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই সম্প্রতি তাদের প্রত্যাহার করা হলো। তারা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুল হক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মানিক চন্দ্র দে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরামর্শে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, দুই পরিচালককে প্রত্যাহার বিষয়ে জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বরাবর বুধবার চিঠি দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ওই দিন জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার দুই পরিচালককে প্রত্যাহার বিষয়ে অনাপত্তি চেয়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে চিঠি এলে তাতে সায় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর গতকাল জনতা ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে এ দু'জনের নাম সরিয়ে ফেলা হয়। জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১৩ পরিচালক পদের মধ্যে বর্তমানে আটজন পরিচালক আছেন। শূন্য হলো পাঁচটি পদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, জনতা ব্যাংকের দুই পরিচালককে সরকার প্রত্যাহার করেছে। তাতে বাংলাদেশ ব্যাংক অনাপত্তি দিয়েছে।

বাদ দেওয়া দুই পরিচালকের মধ্যে মো. আবদুল হক তিন বছর মেয়াদে জনতা ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন গত বছরের ১১ জুলাই। ২০২০ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত তার মেয়াদ ছিল। আরেক পরিচালক মানিক চন্দ্র দে ২০১৫ সালের ৩০ জুন তিন বছর মেয়াদে পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। আগামী ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার মেয়াদ ছিল। জনতা ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহা এবং সাবেক চেয়ারম্যান শেখ মো. ওয়াহিদ-উজ-জামানের মধ্যবর্তী সময়ে মানিক চন্দ্র দে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। আইটি খাতের দোহাটেক নিউ মিডিয়ার চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন বছর জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ-উজ-জামান।

ঋণ জালিয়াতির কারণে এখন ব্যাংক খাতে আলোচিত জনতা ব্যাংক। বিভিন্ন পক্ষের যোগসাজশে ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও এননটেক্স নামের দুই প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়ে আটকে গেছে ব্যাংকটি। এসব ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে নয় হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটির নিট লোকসান হয়েছে এক হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। জুন শেষে মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে দুই হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। ক্রিসেন্ট গ্রুপের এক হাজার ৫৭১ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি ধরে জুনের হিসাব প্রকাশিত হয়। তবে এরই মধ্যে ক্রিসেন্ট গ্রুপের পাঁচ প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার ৪৪৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য নিলাম ডেকেছে জনতা ব্যাংক। এননটেক্সকে দেওয়া সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণের একটি অংশও খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ফলে সেপ্টেম্বরের হিসাব চূড়ান্ত হলে জনতার মোট খেলাপি ঋণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকায় ঠেকবে বলে সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন। 

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন