‘ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি কমাতে সুশাসন অতি জরুরী’

  26-11-2018 05:55PM

পিএনএস (আহমেদ জামিল) : ব্যাংকিং খাতের কেন্দ্রীয়করণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার কারণে প্রধান কার্যালয়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। যা ব্যাংকের খেলাপী ঋণের ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু শাখা পর্যায়ে ক্ষমতা কিছুটা বাড়িয়ে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের সুযোগ দিলে খেলাপীর ঝুঁকি কমে আসবে।

কিন্তু সীমাহীন ক্ষমতা দিলে এর অপব্যবহার হতে পারে। এর আগেও একচেটিয়া ব্যাংকিং খাতে বিকেন্দ্রীয়করণ করার কারণে শাখা পর্যায়ে অনিয়মের ঘটনা বেড়ে যায়। তবে কেন্দ্রীয়করণ এবং বিকেন্দ্রীয়করণের চেয়ে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি কমাতে এবং মুনাফা অর্জনে সুশাসন অতি জরুরী। বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

(২৫ নভেম্বর) রোববার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে‘সেন্ট্রালাইজড অ্যান্ড ডিসেন্ট্রালাইজড ব্যাংকিং: এ স্টাডি অব দি রিস্ক রিটার্ন প্রোফাইল অব ব্যাংকস’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহেল মোস্তফা,সিএফএ। গবেষণা দলে আরও ছিলেন বিআইবিএমের তিনি সহকারি অধ্যাপক তানবীর মেহদী, তাহমিনা রহমান এবং রেক্সোনা ইয়াসমিন। গবেষণা দল শতাধিক ব্যাংকের শাখা, ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সাবেক গভর্নর, অর্থনীতিবিদ এবং গবেষকদের ওপর জরিপ করে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ভারতের নর্থ-ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের গবেষক ক্রিস্টোফার পি.পি.সাফুদা। এতে বলা হয়, নামিবিয়া সরকারের ব্যয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য সেবা এবং আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু শিক্ষা খাতের ব্যয়ের সঙ্গে শিক্ষার হার বৃদ্ধির প্রভাব রয়েছে।



বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রিফর্মস অ্যাডভাইজর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয়করণ এবং বিকেন্দ্রীয়করণ উভয় পদ্ধতি বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় চালু রাখতে হবে। এ দু’টি পদ্ধতি সঠিক সমাধান দিতে পারেনি। তাই একটি পদ্ধতিকে উপযুক্ত পদ্ধতি হিসেবে দাবী করা যায় না।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংকের সেবার ওপর নির্ভর করে কোন ধরণের পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে। ক্রমেই ব্যাংকের বিজনেস মডেল পরিবর্তন হচ্ছে। এ কারণে প্রয়োজনীয়তার ওপর নির্ভর করবে কোন ধরণের পদ্ধতি উপযুক্ত।

সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ চৌধুরী বলেন, সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর সেবা প্রদান করা হয় বিকেন্দ্রীয়ভাবে। এ বিষয়ে বিশেষ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। যা পুরো ব্যাংকিং খাতের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহজ হবে।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতে কেন্দ্রীয়করণ এবং বিকেন্দ্রীয়করণ উভয় পদ্ধতি রাখতে হবে। কিন্তু বিভিন্ন ভাবে ব্যাংকিং সেবার ওপর নজরদারী বাড়াতে হবে যাতে গ্রাহকরা দ্রুত সব ধরণের সেবা পায়।

ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মো: শিরীন বলেন, কেন্দ্রীয়করণ এবং বিকেন্দ্রীয়করণ সেবার ওপর নজরদারী করে ভালো মন্দ খুঁজে বের করতে হবে। এর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকের ধরণ এবং সেবার ওপর ভিত্তি করে কোন পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে।

স্টান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের কান্ট্রি চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার নাসের এজাজ বিজয় বলেন, কেন্দ্রীয়করণ এবং বিকেন্দ্রীয়করণ শতভাগ কোন ব্যাংকেই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। স্টান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক উভয় ধরণের পদ্ধতি অনুসরণ করে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

ভারতের নর্থ-ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক উৎপল কুমার দে বলেন,আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারের ব্যয়ের বিষয়টি প্রত্যেক দেশে খতিয়ে দেখলে জনগণ কতটুকু লাভবান হচ্ছে তা বেরিয়ে আসবে। এতে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহজ হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি,কিছু সেবা বিকেন্দ্রীয়করণ করলে সেবার মান উন্নত হবে। তবে সম্ভাব্য ঝুঁকি ও প্রভাব বিবেচনায় রেখে তার পর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী। তিনি সেমিনারের বিষয়টির ওপর সূচনা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। তিনি ব্যাংকিং খাতের সুশাসনের ওপর জোরারোপ করেন।


পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন