খেলাপি ঋণ আদায়ে আইন প্রণয়ন সময়ের দাবি

  10-01-2019 12:46PM


পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : আইনি দুর্বলতায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন নতুন অর্থমন্ত্রী। এ জন্য আইনের পরিবর্তন করার কথা বলেছেন তিনি। আইন মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নেওয়ার বিষয়টিও উঠে এসেছে তার বক্তব্যে। জনগণের টাকা নিয়ে চিহ্নিত মহলটি যেভাবে প্রতারণা করছে, এ ধারা চলমান থাকলে ব্যা্ংকিং খাত দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

তথ্যমতে, দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। গত বছরের জুন পর্যন্ত দেশে ঋণখেলাপির সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৮ জন। শীর্ষ ২৫ ঋণ খেলাপির কাছে দেশের মানুষের ১০ হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে।সূত্রমতে, আইনি দুর্বলতার কারণে এসব অর্থ আদায় করা যাচ্ছে না।

খেলাপি ঋণের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংকে ১৮ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকে ১৪ হাজার ৮৪০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ৯ হাজার ২৮৪ কোটি, রূপালী ব্যাংকে ৪ হাজার ৯০১ কোটি, বেসিক ব্যাংকে ৮ হাজার ৫৭৬ কোটি, কৃষি ব্যাংকে ২ হাজার ১৭৮ কোটি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ২ হাজার ৩৩২ কোটি, পূবালী ব্যাংকে ২ হাজার ১১৬ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকে ৫ হাজার ৭৬ কোটি, ইসলামী ব্যাংকে ৩ হাজার ৫২০ কোটি আর প্রাইম ব্যাংকে ৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা খেলাপি রয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, আন্তরিকতার অভাবেই নাকি এসব ঋণ আদায় করা যাচ্ছে না।দায়িত্বশীলরা আন্তরিক হলে এ ঋণ আদায় নাকি ব্যাপারই না। তবে আইনি দুর্বলতা মাঝেমধ্যে সমস্যার সৃষ্টি করছে। এটা কাটিয়ে ওঠা গেলে এক্ষেত্রে সফলতা আসা সহজ। তাতে জনগণের টাকা নিয়ে একশ্রেণীর ঋণখেলাপির দৌরাত্ম্য কমে যাবে।

নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘আইনি দুর্বলতার কারণে খেলাপি ঋণ কমানো যাচ্ছে না। এ জন্য কিছু আইনকানুনের পরিবর্তন আনা হবে। আশা করি প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আমার সঙ্গে একমত হবেন। আইন মন্ত্রণালয়ও আমাদের সহায়তা দেবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনে কিছু দুর্বলতা আছে। এসব কাটিয়ে উঠতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে এ আইনে সংশোধনী নিয়ে আসা হবে। খেলাপি হওয়ার পর মানুষ দ্রুত হাইকোর্টে চলে যায়। এ জন্য একটা ব্যবস্থা নিতে হবে।’


বুধবার সচিবালয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকিং বিভাগের জনবল সংকট রয়েছে। ব্যাংকিং খাতকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এখানে কিছু অস্থায়ী লোকবল থাকায় তাদের অনেককেই অনেক কারণে জবাবদিহির জায়গায় আনা যাচ্ছে না। এ জন্য জনবল বাড়ানো হবে। রাইট অফ (মূল হিসাব থেকে বাদ দেওয়া) করা লোনগুলো দেখার জন্য একটি শক্তিশালী কমিটি করে দেওয়া হবে। যে ঋণ ব্যাংকে ফিরে আসছে না সেগুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। আইনি জটিলতাগুলো পরিবর্তন-পরিমার্জন করা হবে। কী কারণে, কার কারণে ঋণ দেওয়া অর্থগুলো ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ক্ষেত্রে ঋণখেলাপিরা সহজেই হাই কোর্টে চলে যান। অবশ্য যে-কেউই কোর্টে যেতে পারেন। পাবলিক-প্রাইভেট যে ব্যাংকের টাকাই হোক, দিন শেষে তা জনগণেরই টাকা। খেলাপি ঋণের সঙ্গে সরকারি কোনো কর্মকর্তার যোগসাজশ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। জনগণের অর্থ বেহাত হয়ে যাক কিংবা ব্যাংকে ফিরে না আসুক, এটা আমরা চাই না।’

দেশে একটা শ্রেণীর রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, তারা ঋণ নেবে; কিন্তু পরিশোধ করবে না।মেরে খাওয়ার মানসিকতাই বেশি কাজ করে। যেভাবেই হোক টাকা নেয়ার পর দেওয়ার আন্তরিকতা দেখা যায় না।নয়-ছয় করে এমনকি আইনের মারপ্যাঁচে না-দেয়ার জন্য যা যা করণীয় সবই করে।

নতুন অর্থমন্ত্রী খেলাপি ঋণ আদায়ে যে কথাগুলো, মতামত ও মন্তব্য বুধবার সচিবালয়ে তুলে ধরেছেন, তা তার আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ বৈকি। আন্তরিকতা তার একার থাকলে চলবে না, সে জন্য আইনের পরিবর্তন জরুরি। তিনি সে বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়েছেন।এসব প্রমাণ করছে, তার আন্তরিকতায় ঘাটতি নেই।

দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক ঋণখেলাপি নানা কায়দা করে আইনের মারপ্যাঁচ কষে নির্বাচন করেছেন, বনে গেছেন এমপি।এর মধ্যে কয়েকজন ঋণখেলাপি হিসেবে পরিচিত।বাইন মাছ কাদায় থাকলেও গায়ে যেমন কাদা লাগে না, তেমনি ঋণখেলাপিদের অনেকে কায়দা করে নিজেকে দূরে রাখছেন।ঋণে জর্জরিত অথচ নিজেকে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রাখতে যারা পটু, তারা সংসদে থাকলে অর্থমন্ত্রী যত উদ্যোগ নেন না কেন, আখেরে কতটা সফল হবেন- সে প্রশ্ন থেকে যায়।

ব্যাংকের টাকা জনগণের। এই টাকা নয়-ছয় করে মেরে দেওয়ার অধিকার কারো নেই।ঋণখেলাপিরা জনগণের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত।তারা টাকা নিয়ে বাণিজ্য করেন। করেন গাড়ি-বাড়ি।বিদেশেও সেকেন্ড হোম গড়েন। অথচ ঋণ পরিশোধ না করার জন্য নানা ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নেন।এই ঋণ পরিশোধ না করে জনগণের টাকা হজম করার অপচেষ্টায় অনেকেই লিপ্ত।

জনগণের টাকা মেরে অনেকে মজা পেয়ে গেছেন। আর এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।এটাকে আর বাড়তে দেওয়া উচিত নয়।এদের আর ছাড় দেওয়া মানে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার শামিল।এই কুচক্রিদের কবল থেকে ব্যাংকগুলোকে রক্ষায় এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন সময়ের দাবি।আর এটা যত দ্রুত করা যাবে ততই মঙ্গল। অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরুতে যে আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন, দেশ ও জাতির বৃহৎ স্বার্থে শেষ বিচারে তিনি সফল হবেন- এ প্রত্যাশা সচেতন দেশবাসীর।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন