‘আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না’

  02-04-2019 09:01PM

পিএনএস ডেস্ক : আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একইসঙ্গে আগামীতে দেশের ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখে বা বিনিয়োগ করে কেউ লোকসানে পড়বে না বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার বেসরকারি পদ্মা ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন। রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে এ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, টাকার অভাবে নয়, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয় ব্যবস্থাপনার সংকটে। আগামী ২৫ থেকে ৩০ বছর বাংলাদেশের সময়। গত ৫ বছরে এ দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বিশ্বে সর্বোচ্চ। দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে তাতে চুরি, ডাকাতি ছাড়া আগামী ৩০ বছর কেউ লোকসান করবে না। সকলেই আর্থিকভাবে নিরাপদ থাকবেন। তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর দোহাই দিয়ে আপনাদের বলছি কোনো ধরনের অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না।' পদ্মা ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট ভালো করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া ফারমার্স ব্যাংক নানান অনিয়ম দুর্নীতির কারণে ব্যাপক সংকটে পড়ে। ব্যাপক তারল্য সংকটের ফলে ব্যাংকটি আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারেনি। এরকম অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ব্যাংকটির মালিকানায় সম্পৃক্ত করে নতুন নামে পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি সমস্যাকবলিত ফারমার্স ব্যাংক 'পদ্মা ব্যাংক' হিসেবে নতুন যাত্রা শুরু করে। পদ্মা ব্যাংক নামে চালু হওয়ার পরে এটাই প্রথম ব্যবসা সম্মেলন।

সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদকে উদ্দেশ করে বলেন, কোনোভাবেই আগ্রাসী হয়ে ঋণ দেওয়া যাবে না। যদিও ইতিমধ্যে কিছু আগ্রাসী ব্যাংকিং করা হয়েছে। পাশাপাশি ঋণ আদায়ে মনোযোগী হতে হবে। ঋণের মান বজায় রাখতে হবে উল্লেখ করেন তিনি। বাহুল্য খরচ পরিহার করার পাশাপাশি ব্যাংকের ভাবমূর্তি রক্ষায় যাতে কোনো চেক ডিজঅনার না হয় সেদিকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। একইসঙ্গে করপোরেট সুশাসন সংস্কৃতি চালুর নির্দেশনা দেন তিনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, অনেক বড় ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ফেরত দেন না। আবার অনেকে সুদ মওকুফ ও পুনঃতফসিল সুবিধা নেওয়ার জন্য কৌশলে টাকা আটকে রাখেন। এই সংস্কৃতি চলতে দেওয়া যায় না। ব্যাংকগুলো ভালো চললে সরকারের রাজস্ব আয় বেশি হবে। তিনি বলেন, অনেকে অর্থ পাচার করে। এনবিআর ইতিমধ্যে মানিলন্ডারিং ইস্যুতে একটি মামলা করেছে। আরও কিছু মামলা করবে। তবে এ ধরনের অন্যায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদককেও উদ্যোগ নিতে হবে।

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, ব্যাংক খাতে কিছু সমস্যা নিজেদের সৃষ্টি করা। অনেক নীতির কারণেও সমস্যা হচ্ছে। এগুলো পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, কে ভালো, কে মন্দ গ্রাহক তা ব্যাংকাররা বোঝেন। তবে অনেক সময় জেনেবুঝেই মন্দ গ্রাহককে ঋণ দেওয়া হয়। এ অবস্থা থেকে বের হতে হবে।

র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, কিছু লোক আছেন যারা ফেরত না দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। আবার কিছু ব্যাংকার আছেন অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে না জেনেও ঋণ দেন। এই দুই ধরনের লোকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ব্যাংকটি নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত সব সমস্যা থেকে বের হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের পাশাপাশি নতুন আমানত সংগ্রহের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরু বলেন, ইতিমধ্যে ব্যাংকের কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন ও আকর্ষণীয় আমানত ও ঋণপণ্য চালু করা হয়েছে। রয়েছে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা। সেগুলো বাস্তবায়নই এখন লক্ষ্য।

সম্মেলনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, আইসিবি চেয়ারম্যান মুজিব উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য দেন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল




@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন