পিএনএস ডেস্ক : রাত পোহালেই মুসলিম উম্মাহর অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির আশায়, ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে পশু কোরবানি করা এ ঈদের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। আর এ কারণেই এ ঈদে মসলার চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
ঈদে মসলার এ বাড়তি চাহিদার কারণে প্রতি বছরই মসলার দাম বেড়ে যায়। এবারও হু হু করে বেড়ে গেছে মসলার দাম। গত এক মাস আগে থেকে মসলার দাম বাড়তে বাড়তে ঈদের আগে এসে তা প্রায় ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ মসলার বাজার রাজধানীর মৌলভীবাজার, শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার যাত্রাবাড়ি, শান্তিনগরসহ নানা বাজার ঘুরে মসলার দাম বাড়ার এ চিত্র লক্ষ্য করা যায়।
ঈদকে সামনে রেখে সব চেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এলাচের। এলাচের দাম কেজিতে এক হাজার টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকায়। ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে জিরা, দারুচিনি, গোলমরিচের দামও।
আদার দামও কয়েক গুণ বেড়েছে। প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। দারুচিনির কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। জয়ত্রী কেজিতে ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়।
অন্যান্য মসলার মধ্যে লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকায়, জিরা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেজপাতা ১০০ থেকে ১৬০ টাকা, গোলমরিচ (সাদা/কালো) ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, জয়ফল ৪৫০ থেকে ৯০০ টাকা, কিসমিস ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, আলু বোখারা ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা, পোস্তদানা ৯৫০ থেকে ১১৫০ টাকা, কাজুবাদাম ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শুকনা মরিচ ও হলুদ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, ধনিয়া ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বেড়েছে পেয়াজ-রসুনেরও। প্রতি কেজি দেশি রসুন ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, আমদানিকৃত রসুন ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি।
গত এক সপ্তাহের মধ্যে দাম বেড়েছে আমদানিকৃত পেঁয়াজের। কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। তবে খুচরা পেঁয়াজের দোকানে কেজি প্রতি পিয়াজ ৫০থেকে ৫৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
শান্তিনগরের পেঁয়াজ বিক্রেতা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে প্রণোদনা উঠিয়ে দেয়ায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। রসুনের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম। এজন্য নির্ভর করতে হয় আমদানির উপর। এসব করণেই দাম একটু বেড়েছে। তবে ঈদের পর দাম কমবে বলে আশা করছি।’
যাত্রবাড়িতে মসলা কিনতে এসেছেন সাইফুল হক। তিনি বলেন, ‘সব মসলার দাম বেড়েছে। ঈদ আসলেই মসলাম দাম বাড়ায় বিশেষ করে কোরবানির ঈদে লাগাম ছাড়া দাম বাড়ায় এটা যেন দেখার কেউ নাই।’
তিনি বলেন, ‘বাজারে নাকি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসে, কই কখনো তো দেখি নাই মসলার বাজারে তারা এসেছে। আসলে জনগন জেগে না উঠলে কোনও কাজ হবে না।’
মসলার দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ‘ঈদুল আজহা তথা কুরবানির ঈদের কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ানোর কারণে খুচরা বাজারে দাম বাড়াতে হচ্ছে।’
যাত্রাবাড়ির মসলা বিক্রিতা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা বেশি দামে মসলা কিনে আনি তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। আমারও তো সংসার আছে তা চালাতে হয় আর একটু অর্ধেক লাভ না করলে চলবে কেমনে।’
শান্তিনগর বাজারের মসলা বিক্রেতা এরশাদ হোসেন জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে মসলার চাহিদা বাড়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে মসলার বাজার ওঠানামা করে আমদানির উপর। আমদানি বেশি থাকলে দাম কমে ।
এবার আমদামি কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঈদ সামনে, চাহিদা বেশি। যে রকম চাহিদা সে রকম আমদানি নাই।’
শান্তিনগড়ে মসলা কিনতে আসা মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমদানি কম বেশি এটা তাদের বাহানা। আসলে ঈদ আসলে মসলার দাম বাড়াবে এটাই মূল কথা। তবে এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেয়ার দরকার বলে তিনি মনে করেন।’
পিএনএস/এএ
কোরবানিতে মসলার বাজারে আগুন
11-08-2019 10:23AM