থমকে আছে পর্যটন খাতের উন্নয়ন

  18-09-2019 11:34AM


পিএনএস ডেস্ক: আইসিইউতে আছে দেশের সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত। ৪৬ বছরেও বদলায়নি এর ভাগ্য। আলোচনা, সভা সেমিনার আর পরিকল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ এর উন্নয়ন। কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, উদাসীনতা আর দোষারোপের যাঁতাকলে সম্ভাবনার এ শিল্প এখন কোনোমতে বেঁচে আছে। নেই কোনো আইন, নেই কোনো পরিসংখ্যান। নীতিমালা থাকলেও তার কার্যকারিতাও নেই।

এ খাতের উন্নয়নে আলাদা বোর্ড থাকলেও লোকসানের বোঝা কমছে না। কর্মকর্তারা বেতন-ভাতাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও দেখা মিলছে না কোনো ধরনের সাফল্যের।

বিরাজমান পরিস্থিতিতে পর্যটনের উন্নয়নে গঠিত ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃপক্ষও এ ক্ষেত্রে নিজেদের অসহায়ত্ব স্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, এ খাতের উন্নয়নে নিয়ম-নীতিমালা থাকলেও তাদের হাত বাধা। নানা সিদ্ধান্ত তারা নিয়ে থাকলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে তারা সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারছেন না। কারণ সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক ট্যুরিজম বোর্ড হলেও তার কার্যকরের সম্পূর্ণ এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। এ নিয়ে নানা দেন-দরবারে তারা ক্লান্ত। ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তারা নিরূপায়।

নিজের অপারগতার কথা স্বীকার করে ট্যুরিজম বোর্ডের সদস্য ও ট্যুরিজম ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিডাব) সাবেক চেয়ারম্যান মো: জামিউল আহমেদ জানান, অদক্ষ কর্মকর্তাদের কারণেই মূলত এর উন্নয়ন আটকে আছে।

তিনি বলেন, এমনিতেই আমাদের হাত বাঁধা। এর মধ্যে কর্মকর্তাদের উদাসীনতাও উন্নয়ন পিছিয়ে পড়ার জন্য বেশির ভাগ দায়ী। কারণ প্রতি দুই মাসে বাধ্যতামূলকভাবে ট্যুরিজম বোর্ডে মিটিং করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয় না। এ ছাড়া জনবলও সঙ্কট। এসব নানা কারণে এ খাতের এমন অবস্থা।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কমপিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৯-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক গড় সূচকে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে।

তবে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা, অবকাঠামো ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে উন্নয়নের মধ্য দিয়ে পর্যটন সক্ষমতায় বেশ ভালো অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। গত দুই বছরে বৈশ্বিক সক্ষমতা পাঁচ ধাপ বেড়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২০তম। ২০১৭ সালে অবস্থান ছিল ১২৫তম। তালিকায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত ৩৪তম, শ্রীলঙ্কা ৭৭তম, নেপাল ১০২তম এবং বাংলাদেশের নিচে আছে পাকিস্তান ১২১তম।

বাংলাদেশের পর্যটন সাফল্যের ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতিও ওঠে এসেছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ততায় বাংলাদেশ পিছিয়ে ১০৪তম থেকে ১১৪তম হয়েছে। এটি ভিসার আবশ্যিক শর্ত বাড়ানোর কারণে হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটক সেবা অবকাঠামোতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক পিছিয়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পর্যটন বোর্ডে পাঠানো হিসাবে গত বছর বিদেশী পর্যটক থেকে বাংলাদেশের আয় দশমিক দুই শতাংশের মতো বেড়েছে। এ দিকে পর্যটন খাতকে শক্তিশালী করতে তিন বছর আগে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড প্রতি বছর পর্যটক সংখ্যা ১৫ শতাংশ হারে বাড়ানো লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও সংস্থাটির কাছেই নেই বিদেশী পর্যটক আসা-যাওয়ার কোনো পরিসংখ্যান। নেই হোটেল-মোটেলের হিসাব। কত মানুষ পর্যটন খাতের সাথে জড়িত তাও জানে না সংস্থাটি।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, এবার আমরা ২০ বছর মেয়াদি একটা মাস্টারপ্ল্যান করার উদ্যোগ নিয়েছি। এটা করতে মাস তিনেকের মধ্যে প্রতিষ্ঠান বাছাই করে ফেলতে পারব। এই মাস্টারপ্ল্যানটা অনুমোদন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তখন সবাই এ টাকে অনুসরণ করতে বাধ্য হবে।

পর্যটনের তথ্য না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডাটাবেজ আমাদের নেই। তবে তৈরির চেষ্টা করছি। এ ছাড়া পরিসংখ্যান জোগাড় করে ডাটাবেজ তৈরির মতো জনবল আমাদের নেই। আপাতত কতজন ট্যুরিস্ট আসে এবং থাকে সেই ডাটাবেজ তৈরির চেষ্টা করছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো: বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, অফুরন্ত সম্ভাবনা থাকার পরও দক্ষ মানবসম্পদ ও পরিকল্পনার অভাবে বাংলাদেশে পর্যটনের বিকাশ হচ্ছে না। খাতটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় সামনে এগোতে পারছে না। এ ছাড়া পর্যটন বোর্ড, পর্যটন করপোরেশনে যারা কাজ করছেন তাদের এই খাতটি নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। পর্যটন নিয়ে যারা পড়াশোনা ও গবেষণা করেছেন তাদের সম্পৃক্ত করতে পারলে এ খাতে উন্নয়ন সম্ভব।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন