‘কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত হলে ব্যাংকিং খাতের সুনাম অক্ষুণ্ন থাকবে’

  28-11-2019 05:05PM

পিএনএস : ব্যাংকের গ্রাহক, বিনিয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আস্থা অর্জনে কমপ্লায়েন্স সংস্কৃতি খুবই জরুরি। মুনাফা বৃদ্ধি, ব্যবসায় সম্প্রসারণ ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও যেকোনো ব্যাংককে কমপ্লায়েন্ট হতে হবে। কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত হলে দেশের ব্যাংকিং খাতের সুনাম অক্ষুণ্ন থাকবে। বুধবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘৮ম বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলন ২০১৯’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, কমপ্লায়েন্স প্রক্রিয়া ও ব্যাংকগুলোর রিপোর্টিং স্টাইলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যাংকিং। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উন্নত রিপোর্টিং ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে প্রস্তুত রয়েছে।

ব্যাংকিং সম্মেলন আয়োজনের জন্য বিআইবিএমকে অভিনন্দন জানিয়ে গভর্নর বলেন, বিআইবিএম আয়োজিত ব্যাংকিং সম্মেলন বৃহৎ আয়োজন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ ধরনের সম্মেলন নতুন ধারণা উদ্ভাবনে আমাদের সহায়তা দেবে।

তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতের স্বচ্ছতা ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। সময়োপযোগী নীতি প্রণয়ন ও জারি করে তা বাস্তবায়নে জোর দিয়েছে। প্রতি বছর ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের সব ধরনের তথ্য স্টেকহোল্ডারদের জন্য তুলে ধরা হচ্ছে। আর্থিক অপরাধ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব।

সম্মেলনটি উদ্বোধনের পর ‘কি অপারেশনাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এরিয়াজ অব ব্যাংকস ওয়ান’ এবং ‘কি অপারেশনাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এরিয়াজ অব ব্যাংকস টু’ নামে দুটি প্লেনারি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রথম প্লেনারি সেশনে পাঁচটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হলো ‘হোয়াট আর ডিটারমিন্যান্টস অব প্রফিটেবিলিটি অব কমার্শিয়াল ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ? এ প্যানেল ডাটা অ্যানালাইসিস’, ‘দ্য রিলেশনশিপ বিটুইন করপোরেট গভর্ন্যান্স ফ্যাক্টরস অ্যান্ড রিস্কস অব কমার্শিয়াল ব্যাংক: এন এমপিরিক্যাল স্টাডি’, ‘ডিটারমিনেশন অব দ্য ফ্যাক্টরস ইনফ্লুয়েন্সিং দ্য নন-পারফর্মিং লোনস (এনপিএল’স) ইন বাংলাদেশ: এ ভিএআর অ্যানালাইসিস’, ‘ব্যাংক স্পেসিফিক অ্যান্ড গভর্ন্যান্স স্পেসিফিক ডিটারমিন্যান্টস অব ক্রেডিট রিস্ক অব ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’, ‘অ্যাসেসমেন্ট অব ব্যাংক ইনসলভেন্সি অ্যান্ড স্ট্যাবিলিটি: এভিডেন্স ফ্রম দ্য প্রাইভেট ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’ এবং ‘ডু নিউ ব্যাংকস রিকোয়ার নিউ অপারেটিং মডেল টু সাসটেইন ইন দ্য কমপিটিশন?’।

সেশনটিতে আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হোসেন প্রধানিয়া, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ফারুক মাইনুদ্দিন আহমেদ, এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ফ্রাঁসোয়া দ্য ম্যারিকোর্ট এবং সিটি ব্যাংক এনএর সিটি কান্ট্রি অফিসার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নরসিমহন রাজাশেকরন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রিফর্মস উপদেষ্টা সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় প্লেনারি সেশনে মূল বক্তব্য প্রদান করেন মুডি’স অ্যানালিটিকসের চিফ এপিএসি ইকোনমিস্ট স্টিভেন কোক্রেন। এতে ‘এন এমপিরিক্যাল ইনভেস্টিগেশন অন দ্য ইফেক্ট অব ক্রেডিট রিস্ক অ্যান্ড অপারেশনাল রিস্ক অন ফিন্যান্সিয়াল পারফরম্যান্স অন শরিয়াহ বেজড ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’, ‘ইমপ্যাক্টস অব সিএএমইএলএস অন ব্যাংক পারফরম্যান্স: এ স্টাডি অন ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’, ‘ইমপ্লিমেন্টেশন অব ব্যাসেল ক্যাপিটাল রেশিওজ অ্যান্ড পারফরম্যান্স অব ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’, ‘এ মাল্টিডাইমেনশনাল অ্যান্ড হায়ারারকিক্যাল মডেল অব ব্যাংকিং সার্ভিসেস অ্যান্ড বিহেভিওরাল ইনটেনশনস অব কাস্টমারস’, ‘ক্যাশ ইনসেনটিভ ইন বাংলাদেশ: অপারেশনস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ফেসড বাই ব্যাংকস’, ‘অ্যাড্রেসিং চ্যালেঞ্জেস ইন হ্যান্ডলিং ব্যাক টু ব্যাক এলসি বাই ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক পাঁচটি পেপার উপস্থাপন করা হয়।

দ্বিতীয় সেশনে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চৌধুরী, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. মাহবুব-উল-আলম, ভারতের কলকাতার স্টেট ব্যাংক ইনস্টিটিউট অব লিডারশিপের অধ্যাপক ও ডিন এন কৃষ্ণ কুমার ও বিআইবিএমের অধ্যাপক ও পরিচালক শাহ মো. আহসান হাবীব।

আজ সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি। দ্বিতীয় দিনের মূল প্রতিপাদ্য ‘ম্যাক্রো ফিন্যান্সিয়াল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবল ব্যাংকিং অ্যান্ড ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস’। দ্বিতীয় দিনের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল। উদ্বোধনী সেশনে কিনোট পেপার উপস্থাপন করবেন বিআইবিএমের ড. মোজাফফর আহমদ চেয়ার অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা। আরো বক্তব্য রাখবেন সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব ও বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

দ্বিতীয় দিনে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে ‘ম্যাক্রো ফিন্যান্সিয়াল এনভায়রনমেন্ট’ এবং ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক মুস্তফা কে মুজেরীর সভাপতিত্বে দুটি প্লেনারি সেশন অনুষ্ঠিত হবে। সমাপনী সেশন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শেষ হবে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন