অস্থিতিশীল নিত্যপণ্যের বাজার

  29-11-2019 06:27PM

পিএনএস ডেস্ক : নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা কিছুতেই কাটছে না। চাল-তেল-পেঁয়াজসহ শাক সবজির দাম আকাশছোঁয়া। এতে চরম ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। বেশ কয়েকদিন ধরে ব্যাপক চড়া চালের বাজার। প্রকারভেদে চালের দাম কেজিতে বেড়ে যায় ৩ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত। কোথাও কোথাও এখন ২-৩ টাকা কমেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। বরাবরের মতো পাইকার-মিল মালিক একে অপরকে দুষছে।

পেঁয়াজের বাজারেও কোনও সুখবর নেই। বিশেষ করে রাজধানীতে এই পণ্য এখনও অনেকের নাগালের বাইরে। আমদানি হলেও কারসাজি থেমে নেই। তাই দেশি পেঁয়াজ প্রায় আড়াইশ টাকা। কোথাও কোথাও পেঁয়াজের কলি ও পাতাই কেজি ১০০ টাকা।

সরবরাহ ভালো মাছের বাজারেও। তাই কমেছে দামও। মাছের রাজা ইলিশ সেও হাতের নাগালেই।

চিনি, সয়াবিন তেল আর পোলাও চালের দাম দুই সপ্তাহ আগে বেড়েছিলো। এখনও সেই বাড়তি দামেই বিকোচ্ছে পণ্যগুলো। মসলা জাতীয় পণ্যও বিক্রি হচ্ছে আগের দামে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে সামনের দিনে পেঁয়াজসহ সব ধরনের কাঁচাপণ্যের দাম আরও কমবে।

নানা অযুহাতে বেড়েই চলেছে সবিজর দাম। কোনো সবজির দাম একবার বাড়লে কমার সম্ভাবনা যেনো একেবারেই কম। গত সপ্তাহে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সবজির দাম বাড়লেও তা আর কমেনি। সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও চড়া সবজির বাজার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হলেও গত সপ্তাহের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আলু, লাউ, জালিকুমড়া।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, মালিবাগ রেলগেট বাজার, কারওয়ান বাজার, কাঠালবাগান বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

গত সপ্তাহে ব্যবসায়ীরা পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সবজি না আসার অযুহাতে দাম বাড়িয়ে দেন। এরপর থেকে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। এসব বাজারে বর্তমানে প্রতিকেজি শিম (কালো) বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, শিম (সাদা) ৮০ টাকা, গাজর (ফ্রেশ) ৯০ থেকে ১০০ টাকা, গাজর রেগুলার ৭০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঝিঙা-ধুন্দল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, উস্তা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন আকারভেদে ৫০ থেকে ৯০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৪০ টাকা, শসা (প্রকারভেদে) ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শসা (ক্ষীরা) ৭০ টাকা, কচুর ছড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতিকেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া আকারভেদে প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, জালিকুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
বাজারে নতুন আলু এলেও সব ধরনের আলু চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। পুরাতন আলু ১০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, নতুন আলু (আকারভেদে) ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে এসব বাজারে।

বাজারে পর্যাপ্ত সবজি থাকলেও দাম না কম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। এ বিষয়ে কাঠালবাগান বাজারের ক্রেতা নাছিমা আক্তার বলেন, গত সপ্তাহে দেখলাম পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সব সবজির দাম বাড়তি। আজও দেখি সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সবধরনের সবজি, আবার বাজারেও কোনো কিছুর ঘাটতি নেই। এ বাজারের অপর ক্রেতা হাসান বলেন, বর্তমানে কোনো কিছুর দাম একবার বেড়ে গেলে তা আর সহজে কমে না। দেশে এখন ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে শক্তিশালী, তারা সবকিছুর মূল্য ঠিক করে দেন। শুধু সবজি কেন পেঁয়াজ, চালের বাজারের পরিস্থিতিও একই।

কাঠাল বাগান বাজারের সবজি বিক্রেতা সিরাজ মিয়া বলেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম বেশি থাকায় খুচরা বাজারে বাড়তি। পাইকারি বাজারে দাম কমলে খুচরাতেও কমে। তবে শীতে সব সবজি বাজারে এলে দাম কমে আসবে।

এদিকে, এসব বাজারে প্রতিকেজি (এক কেজি সাইজ) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায়, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া কাচকি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, মলা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, ছোট পুঁটি (তাজা) ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চিংড়ি (গলদা) ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, বাগদা ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকা, দেশি চিংড়ি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, রুই (আকারভেদে) ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মৃগেল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙাস ১৩০ থেকে ১৭০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা, কই মাছ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, কাতল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এ বাজারে ডিম, মুরগি ও মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এসব বাজারে প্রতিকেজি বয়লার ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, লেয়ার ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, সাদা লেয়ার ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল ডিম প্রতি ডজন ১০০ টাকা, সাদা ৯৫ টাকা, হাঁসের ডিম ১৪৫ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এছাড়া বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা, খাসি ৭৮০ টাকা, ছাগলের মাংস ৭২০ টাকা কেজি দরে।

এদিকে আগামী সপ্তাহের শেষে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ ওঠার প্রভাবও শিগগিরই বাজারে পড়তে শুরু করবে বলে ধারণা করছেন তারা। তবে পেঁয়াজের বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসতে ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাকিস্তানি ১৮০ টাকা, চীনা ১৪০ টাকা ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। দেশি পেঁয়াজের দাম পাইকারি বাজারে ২০০ টাকায় স্থির থাকলেও অন্য সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ সরকারের কোন পদক্ষেপের প্রভাবই বাজারে পড়েনি।

কারওয়ান বাজারের একাধিক পাইকারি বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত পেঁয়াজের দাম বেড়েছে আড়তেই। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে রাজধানীর শ্যামবাজারসহ চট্টগ্রাম, বেনাপোল ও কক্সবাজারের কিছু ব্যবসায়ী জড়িত। আর দেশি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে রয়েছেন ফরিদপুর ও পাবনার ব্যবসায়ীরা। মূলত পেঁয়াজের দাম উৎপাদনস্থল বা আমদানি করা স্থানেই বেড়েছে।’

নতুন পেঁয়াজ সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক চন্ডী দাস কুন্ডু বলেন, ‘সারাদেশে এবার পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ হেক্টর। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৪৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। ফরিদপুর, মাগুরা, মুন্সিগঞ্জ ও রাজবাড়ীতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। তবে পেঁয়াজের মূল মৌসুম ফেব্রুয়ারি-মার্চ। অর্থাৎ এখনও সেই অর্থে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করেনি।’

মন্ত্রীর কথার প্রতিফলন নেই চালের বাজারে
রোববার (২৪ নভেম্বর) ব্যবসায়ীদের এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, বর্তমানে দেশে চালের মওজুদ রয়েছে। আমরা চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাজারও নিয়ন্ত্রণে। এক কথায় বলতে পারি চালের দাম স্বাভাবিক রয়েছে।

তবে, বাজারে পরিস্থিতি এর বিপরীত। দাম বেড়েছে সব ধরনের চালের। ক্রেতাকে বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে চাল। এদিকে দেশে ধান ও চালের মজুদ থাকার পরও দাম বাড়ার কোনো কারণ দেখছেন না সাধারণ মানুষ।

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি চালের বাজারে প্রতিবস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকায়, আটাশ চাল ১৭৫০ টাকা, নাজিরশাইল ২৩৫০ থেকে ৩১০০ টাকায়। অথচ মাত্র দশদিন আগে এ বাজারে প্রতিবস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছিলো ২০৫০ টাকায়, আটাশ চাল ১৪৫০ টাকা, নাজিরশাইল ১৯৫০ থেকে ২৭০০ টাকায়।

অন্যদিকে, খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, নাজিরশাইল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, আটাশ ৪০ টাকা, ঊনত্রিশ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, স্বর্ণা চাল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, চিনিগুড়া ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ দশদিন আগে বাজারভেদে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, নাজির ৫০ থেকে ৫২ টাকা, আটাশ ৩৪ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, ঊনত্রিশ ৩২ থেকে ৩৫ টাকা, স্বর্ণা চাল ২৮ থেকে ৩০ টাকা, চিনিগুড়া ৯০ থেকে ৯২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।

পেঁয়াজের পর চালের বাজার দাম বাড়ায় মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে। ক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের মতোই চালের বাজারেও সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যবসায়ীরা দায়ি না। মিলকল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়েছেন, যার প্রভাব পড়ছে বাজারে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন