করোনায় বাণিজ্যিক কার্যক্রমে স্থবিরতা

  22-02-2020 11:03PM

পিএনএস ডেস্ক: করোনাভাইরাসের কারণে চীনের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মতিঝিল ফেডারেশন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান এফবিসিসিআই-এর সভাপতি ফজলে ফাহিম।

‘ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের শিল্প উৎপাদন, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য, সরবরাহ ব্যবস্থা ও সেবা খাতে সার্বিক প্রভাব’ সম্পর্কে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মতামত নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করে ব্যবসায়ীদের এ শীর্ষ সংগঠন।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, চীন বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অন্যতম অংশীদার। রফতানি পণ্যের কাঁচামালসহ মধ্যবর্তী কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশসহ তৈরি পণ্য যেমন- ইলেকট্রনিক মটর, সিনথেটিক ইয়ার্ন ইত্যাদি সিংহভাগই চীন থেকে আমদানি হয়ে থাকে।

এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে ফজলে ফাহিম জানান, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের মোট বাণিজ্য ছিল প্রায় ১৪.৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে আমদানি বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৩.৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৮৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এছাড়া দেশের প্রধান রফতানি পণ্য পোশাক খাতের ফেব্রিক্স ও সিনথেটিক ইয়ার্নের প্রধানতম উৎস চীন। পোশাক খাতে বিশেষ করে ওভেন খাতের কাঁচামালের জোগানের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ এবং নিট খাতে ১৫-২০ শতাংশের উৎস চীন। এছাড়া অন্যান্য অনেক শিল্প খাতের প্রধান কাঁচামালের উৎস দেশটি।

এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে। যেসব ঋণপত্র আগেই খোলা ছিল সেগুলোর জাহাজিকরণ ও ডকুমেন্টস পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। নতুন ঋণপত্র খোলাও কমে যাচ্ছে।

‘ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ৮০ শতাংশের মতো প্রায় এক মাস স্থগিত ছিল। তবে আশ্বাস দেয়া হচ্ছে যে, খুব শিগগিরই অর্থাৎ আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকে শিপমেন্ট শুরু হবে।’

বস্ত্র ও তৈরি পোশাকসহ সকল ম্যানুফ্যাকচারিং খাত- চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, ফুটওয়্যার, কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিস, মেডিকেল ইন্সটুমেন্টস, কম্পিউটার, ওয়াটার পাম্প, মোটর ছাড়াও পরিবহন ও যোগাযোগসহ সকল খাতে স্বাভাবিক সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হয়েছে।

এ বছর জানুয়ারি মাসে ৬.৭২ লাখ টন পণ্য এসেছে। অথচ ২০১৯ সালে আসা পণ্যের পরিমাণ ছিল ৮.৫১ লাখ টন এবং ২০১৮ সালে ছিল ৮.৯২ লাখ টন।

যেহেতু সাপ্লাই চেইনে প্রায় এক মাসের মতো বিঘ্ন ঘটেছে, আমাদের আশঙ্কা যে, ব্যাংক খাতে পেমেন্ট ওভারডিউ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ অবস্থায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে যাতে কোনোপ্রকার বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য ঋণ সহায়তা ও ঋণপত্রের মূল্য পরিশোধের বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান ব্যবসায়ীদের এ শীর্ষ নেতা।

করোনাভাইরাসের কারণে কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যথাযথ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংকে সরবরাহ করলে তাদের অ্যাকাউন্ট যাতে কোনোভাবে ক্লাসিফাইড না হয় এবং এডিশনাল চার্জ, ইন্টারেস্ট পেনালাইজড না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। যেসব ঋণপত্র খোলা আছে, শিপমেন্ট হচ্ছে না এবং শিপমেন্টে সময় লাগছে, তাদের ক্ষেত্রে অন্য কোনো সোর্স থেকে আমদানির সুযোগ থেকে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এসব প্রতিষ্ঠানকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ সুবিধাও দেয়ার দাবি জানান।

‘করোনাভাইরাসের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে করণীয় নিয়ে কাজ চলছে’ জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং আমাদের বিভিন্ন চেম্বার ও এসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা চীনের বিভিন্ন প্রভিন্স ও সাপ্লাইয়ারের কাছ থেকে আশ্বস্ত হয়েছি যে, অবস্থা স্বাভাবিক হওয়া শুরু হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এক মাসের সাপ্লাই চেইন ডিসরাপশনের (শৃঙ্খলা ভঙ্গ) কারণে আগামী তিন কোয়াটার অর্থাৎ এ বছর সরকারের অব্যাহত সহায়তা এবং ব্যাংকিং সুবিধাসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সহায়তায় স্বল্পমেয়াদে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব।

পিএনএস/হাফিজ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন