করোনাভাইরাসে অস্থির ভোগ্যপণ্যের বাজার

  25-02-2020 12:12AM



পিএনএস ডেস্ক: দেশে শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং ভোগ্যপণ্য আমদানির প্রায় ৩৫ শতাংশ আসে চীন থেকে। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গত একমাস ধরে চীনের সঙ্গে সবধরণের আমদানি রফতানি বন্ধ রয়েছে। যার প্রভাবে ইতোমধ্যে অস্থির হয়ে উঠেছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। দেশের শিল্প উৎপাদন, আমদানি রফতানি বাণিজ্য, সরবরাহ ব্যবস্থায় ও সেবাখাতে প্রভাব পড়বে। ফলে গোটা অর্থনীতি বড় সংকটে পড়বে।

করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে কী প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে এমন ভয়াবহ সংকটের কথা জানিয়েছে আমদানি-রফতানি সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের শিল্প উৎপাদন, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য, সরবরাহ ব্যবস্থায় ও সেবাখাতে প্রভাব পড়বে। কারণ সরবরাহ ব্যবস্থায় কাঁচামালের সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে। এর ফলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে।

কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও প্রভাব দেখা দিবে। কাঁচামালের সংকটের ফলে রফতানি খাতেও বিরাট প্রভাব পড়বে। উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা অর্থই হচ্ছে সেবা খাতেও সংকট দেখা দেবে। দেশের আর্থিক খাত বিশেষ করে ব্যাংক বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রেও সংকট দেখা দেবে। বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থায় এবং সরকারের রাজস্ব আহরণে প্রভাব পড়বে।

এখন বিশ্বব্যাপী এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। চীনের সংক্রমণে প্রতিদিনই ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। ফলে চীনের সঙ্গে বিশ্বের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। তাই করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে কী ক্ষতি হবে স্টেক হোল্ডারের কাছে একটি প্রতিবেদন চায় বাণিজ্যমন্ত্রী। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের এফবিসিসিআইয়ের কাছে এসব তথ্য দিয়েছে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), চট্টগ্রাম চেম্বার, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই), বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন, তৈরি পোশাক খাতে এবং বিকেএমইএসহ মোট আমদানি রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ২৫টি সংগঠনের মতামত নিয়েছে এফবিসিসিআই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাথে চীনের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশের ব্যবসায় ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান অংশীদার হলো চীন। গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বাংলাদেশের সাথে দেশটির মোট বাণিজ্য প্রায় ১৪.৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আমদানি বাণিজ্যের পরিমাণ ১৩.৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণ ৮৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের মতো। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে বাংলাদেশের সাথে চীনের আমদানি বাণিজ্য ছিল ১১.৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রফতানি বাণিজ্য ছিল ৬৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর যে আমদানি করে তার প্রায় ৩৫ শতাংশ চীনের সাথে। শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, রাসায়নিক দ্রব্য, ইলেকট্রিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট, ইলেকট্রনিক্সসহ সকল ধরনের তৈরি পণ্যই চীন থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে।

দেশের প্রধান রফতানি পণ্য পোশাক খাতের ফেব্রিক্স ও সিনথেটিক ইয়ার্নের প্রধানতম উৎস্য হচ্ছে চীন। পোশাক খাতে বিশেষ করে ওভেন খাতের কাঁচামাল যোগানের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ এবং নীট খাতে ১৫-২০ শতাংশের উৎস হচ্ছে চীন। এ ছাড়া অন্যান্য অনেক শিল্প খাতের প্রধান কাঁচামালের উৎস হচ্ছে চীন।

চট্টগ্রাম চেম্বার জানিয়েছে, দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন থেকে প্রায় ৫.০২ বিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল আমদানি করা হয়। পাশাপাশি টেক্সটাইল ও আরএমজি খাতে প্রায় ৪০% মেশিনারি ও যন্ত্রাংশ চীন থেকে আমদানি করা হয়। দেশের ৪০.৫৩ বিলিয়ন রফতানি আয়ের ৮৪.২১% এই খাত থেকে অর্জিত হয়েছে। অর্থবছরে এই খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১১.৪৯%।

উৎপাদনশীল শিল্পপ্রতিষ্ঠান যেমন- স্টিল, সিমেন্ট, প্লাস্টিক, ইলেক্ট্রনিক্স, ফুড, ওষুধ ইত্যাদির যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালও চীন থেকে আমদানি করা হয়। এমতাবস্থায়, পর্যাপ্ত কাঁচামাল সরবরাহের অভাবে দীর্ঘমেয়াদি শিল্পোৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশংকা করছে।

এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়েছে, দেশে আমদানির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। গত ৮ দিনে এলসি খোলার হার প্রায় ৩৭% কমে গেছে। আমদানি হ্রাস পাওয়ার প্রভাবে অভ্যন্তরীণ বাজারে অনেক পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন কেমিক্যাল, রং ইত্যাদি শিল্পে স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে আদা, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি ভোগ্যপণ্যের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব দ্রব্যমূল্য এখনও সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের সেবা খাতেও বিরূপ প্রভাব পড়বে। এর ফলে চীনে পর্যটক গমনাগমনের পরিমাণ বহুলাংশ হ্রাস পেয়েছে। লজিস্টিকস খাতে ইতোমধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মোবাইল, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ আমদানি না হওয়ার কারণে এসব সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হবে।

চীনের সাথে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বর্তমান সরকার চলমান ১ লাখ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ফলে এসব প্রকল্পের সময় ও ব্যয় দু’টোই বৃদ্ধি পাবার কারণে দেশের অর্থনীতির উপর বাড়তি চাপ পড়বে বলে আশংকা করছে। চীন থেকে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও ইকুইপমেন্ট আসতে না থাকলে অবকাঠামো উন্নয়নের এসব প্রকল্পের কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তাই কর্ণফুলী টানেলসহ অনেক মেগা প্রকল্প সম্পন্ন করতে দেরি হওয়ার কারণে প্রকল্প ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি পাবে।

চীন থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হয় তার বিকল্প উৎস জরুরি ভিত্তিতে খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে সমন্বয় বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠনের তাগিদ দিয়েছে। দেশের বাহিরের মিশনগুলোতে আউট সোর্সিং সেল খুলে স্বল্প ও দীর্ঘকালীন যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতঃ আগামী দিনে যাতে আর কখনো ভোগান্তিতে পড়তে না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারিভাবে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।


নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির
চীনে করোনাভাইরাসের অজুহাতে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে নগরীর ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহে মিয়ানমারের প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল যা এখন বেড়ে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, গত বছর যে রসুন ৫০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত এখন সেই রসুন প্রতিকেজি ২০০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে দেশি রসুনের মূল্য বেড়েছে ১৯১.৬৭ শতাংশ। আর আমদানি করা রসুনের মূল্য বেড়েছে ১৬০ শতাংশ। তবে গত এক মাসের ব্যবধানে আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে ৮৮.৮৮ শতাংশ।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে চীনা আদার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। সপ্তাহ আগে চীনা আদার দাম ছিল ১০০ টাকা যা ৫০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছে, দেশে আমদানিকৃত রসুনের ৯৬ শতাংশই আসে চীন থেকে। করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় এক মাস ধরে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সেখান থেকে রসুন আসছে না। গত ২০ জানুয়ারির পর থেকে কোনো আদা-রসুন শিপমেন্ট দিচ্ছে না। ফলে পুরানো শিপমেন্টের পণ্য এখন বাজারে আসছে। নতুন করে চীন থেকে রসুন আসে তা পৌঁছাবে মার্চের শেষ সপ্তাহে। এর মাঝে যে ক’দিন গ্যাপ থাকবে তখন বাজারে ঘাটতি দেখা দেবে। তখন আবার নতুন করে দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প
চীনা পণ্যের দাম বাড়ায় বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন দেশের কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও সেবা খাতের উদ্যোক্তারা। কারণ, তারা নিজেরা আমদানি না করে বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের কাছ থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ ক্রয় করে পণ্য উৎপাদন করেন। আবার তাদের মুনাফার হারও খুব কম। কাঁচামালের দাম বাড়লে তা সামাল দেওয়ার উপায় থাকে না।

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে চীনে রফতানির পরিমাণ আনুমানিক শতকরা ৬০-৬৫ শতাংশ। বর্তমানে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩ হাজার কোটি টাকা। এখন রফতানি ও জাহাজীকরণ বর্তমানে বন্ধ আছে। আগামীতে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ কসমেট্রিক্স অ্যান্ড টয়লেট্রিস ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, চীন থেকে প্রতিমাসে আনুমানিক ৯০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়। এখন চীন থেকে আমদানি ও জাহাজীকরণ বর্তমানে বন্ধ আছে। তবে এখনও আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ মূদ্রণ শিল্প সমিতি দাবি, চীন থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৮০ কোটি ডলারে পণ্য আমদানির করা হয় এখন তা বন্ধ আছে। এর ফলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩৬ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বছরে এ সেক্টরে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাঁচামালের প্রয়োজন হয়, যার ৪০% আসে চীন থেকে। করোনাভাইরাসের কারণে যেহেতু জানুয়ারি থেকে ফ্রেব্রুয়ারি/মার্চ মাস পর্যন্ত চীন হতে কাঁচামালের প্রাপ্তি বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। তাই এ খাতে ১৪০০-১৫০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

পোল্ট্রি ফিড অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, চীন থেকে আমদানিকৃত পোল্ট্রি ফিডস, ফিশ ফিডসহ বিভিন্ন পেট ফুডসের মুজদও প্রায় শেষের দিকে। নতুন করে আর ফিডস আসছে না। পুরনো যা রয়েছে সেগুলোর দামও বস্তা প্রতি সর্বোচ্চ ২০০ টাকা দাম বেড়েছে।

কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি, ঢাকা জানিয়েছে, চীন থেকে আমদানি বন্ধের কারণে বাজারে মাখন, কনডেন্সড মিল্ক, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, চিপস, পিকলড ফ্রুটস, জ্যাম ডেলি, বোতলজাত ফলের রস, সস, টেমেটো পেস্ট, ফার্মেন্টড ভিনেগার, ফরটিফায়েড এডিবল রাইস ব্র্যান অয়েলে ইত্যাদির সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ লাইভ অ্যাড চিল্ড ফুড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীনে বাংলাদেশের কাঁকড়া ও কুঁচেমাছ রফতানি বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেরেশর ৯০% কাঁকড়া ও কুঁচেমাছ চীনে রফতানি হয়। করোনাভাইরাসের কারণে স্থানীয় বাজারে ১০০% চাহিদাশূন্য এই পণ্য এখন খামারি ও রফতানিকারকদের জন্য গলার ফাঁসে পরিণত হয়েছে।

এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে এবং তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই করতে বাধ্য হবে। এখন যে পণ্য মজুদ আছে তা রফতানি করতে না পারলে সর্বমোট ক্ষতির পরিমাণ ৩৫০-৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, করোনাভাইরাসজনিত কারণে কাঁচামাল, মেশিনারিজ সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহে ইতোমধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। যেমন- ইনজেকশন মোল্ডিং, প্রিন্টিং, এক্সট্রুশন ইত্যাদি মেশিনের স্পেয়ার্স পার্টস চীন থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।

টয়েজ সেক্টরের ইলেকট্রিক পার্টস উৎপাদনে ব্যবহৃত হতো তা করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি করা যাচ্ছে না। এটি অব্যাহত থাকলে এ খাতে বিরাট ক্ষতি হবে। মেশিনারিজ বিক্রি কমে যেতে পারে। ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ এগ্রো ফিড ইনগ্রিডিয়েন্টস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফিটা) জানিয়েছে, পোল্ট্রি, মৎস্য ও গবাদিপশুর খাদ্যের মৌলিক কাঁচামাল ও পশুপুষ্টি ও ভেটেনারি প্রোডাক্টস সামগ্রী মূলত: চীন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। করোনা ভাইরাসের কারনে কাঁচামাল আমদানি করা ব্যাহত হচ্ছে বিধিায় প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন শিল্পপ্রতিষ্ঠান খাদ্য উৎপাদনে ব্যাহত হবে। ফলে প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন সংকট দেখা দিবে। প্রাণিজ খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। প্রাণিজ খাদ্যের বাজার মূল্য পরিস্থিতি তথা বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে। কাঁচামাল যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আমদানি করার পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি।

বিকেএমইএ বলছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে নীট পোশাক খাতের উৎপাদনকে সরাসরি প্রভাবিত করছে। ইতোমধ্যে মজুদকৃত কাঁচামালের মূল্য ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে আমদানিকারকরা। ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু ক্রেতার সাথে পূর্বনির্ধারিত মূল্যে পণ্য সরবরাহের চুক্তি বিদ্যমান থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

পিএনএস/হাফিজ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন