ডলার কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়

  11-10-2020 04:00PM


পিএনএস ডেস্ক: তিন মাসে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার কিনে বাজারে ২৫ হাজার কোটি টাকা নগদ অর্থ ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের চাহিদা কমে যাওয়ায় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে উদ্বৃত্ত ডলার থেকে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করতে না পারায় ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার নিয়ে আসছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজার থেকে ডলার কিনে নিচ্ছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ মাইলফলক চার হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করেছে। তবে ডলারের বিপরীতে নগদ অর্থ ছেড়ে দেয়ায় বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যাচ্ছে। এতে মুদ্রা সরবরাহজনিত কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক টাকা ছাড়লে বাজারে সাড়ে সাত গুণ প্রভাব পড়ে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকাকে হট মানি বলা হয়। দেশে বিনিয়োগ চাহিদা কমে যাওয়া এবং ব্যাংকগুলো চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিনিয়োগে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করায় প্রতিটি ব্যাংকের হাতেই উদ্বৃত্ত ডলার থেকে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো কোথাও তা ব্যবহার করতে না পারায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নিয়ে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থেই ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনছে। এ ডলারের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্থানীয় মুদ্রা দিচ্ছে। এভাবেই বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যাচ্ছে। এমনিতেই কাজ কমে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনা ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। কারণ বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় ডলার উদ্বৃত্ত থাকছে। না কিনলে ডলারের দাম কমে যাবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা। এতে রেমিট্যান্স পাঠাতে তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন। অপর দিকে রফতানি আয়ও কমে যাবে। প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক ও রফতানিকারকদের কথা চিন্তা করে বাজার থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে; অন্যথায় ডলারের মূল্য ৭৫ টাকার নিচে নেমে যেতো। তবে এর কুফলও রয়েছে। যেমন : এতে পণ্যের আমদানি ব্যয় কমছে না, বরং ক্ষেত্রেবিশেষে বেড়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নানা প্রণোদনা দেয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোর রফতানির জন্য তৈরি পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমে যাচ্ছে। আর পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে কমমূল্যে পণ্য সরবরাহ করতে পারছে। ফলে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যে প্রতিযোগিতায় হেরে যাচ্ছেন।

ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, করোনার প্রাদুর্ভাব চলাকালীন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রফতানিকারকদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন। এতে রফতানি-বাণিজ্য আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে তারা মনে করছেন।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী একটি ব্যাংক মূলধনের ১৫ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারে। এর অতিরিক্ত হলেই তাকে বাজারে ডলার বিক্রি করতে হবে।

ব্যাংকাররা জানান, গত ৬ মাস যাবত করোনার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। আমদানি ব্যয় কমে গেছে। কমে গেছে মানুষের চাহিদা। অপর দিকে আগে প্রতিমাসেই বিদেশে চিকিৎসার বিপরীতে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হতো। কিন্তু করোনার কারণে গত ৬ মাস যাবত চিকিৎসার জন্য কেউ বিদেশে যাচ্ছেন না। আবার প্রতিবছর পবিত্র হজ পালনের জন্য হজযাত্রীরা বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করেন। কিন্তু এবার করোনার কারণে এটাও হয়নি। এ দিকে দীর্ঘ দিন বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা করোনার কারণে বেকার হয়ে গেছেন। অনেক দেশ থেকেই এখন বাংলাদেশী শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ফলে দীর্ঘ দিনের জমানো অর্থ বিদেশ থেকে দেশে পাঠাচ্ছেন অনেকেই। এ কারণে গত কয়েক মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহের এ ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ দিকে রফতানির পরিমাণ কমলেও প্রতি মাসেই কিছু রফতানি আয় দেশে আসছে। সেইসাথে বিদেশী ঋণ ও বৈদেশিক অনুদান আসছে। সবমিলে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির থাকায় ওই পরিমাণ ব্যয় হচ্ছে না। এর ফলে প্রতিটি ব্যাংকের হাতেই বৈদেশিক মুদ্রা উদ্বৃত্ত রয়েছে। চাহিদা না থাকায় আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন কমে গেছে।

এ দিকে ব্যাংকগুলো এখনো রেমিট্যান্স হাউজগুলোর মাধ্যমে বাড়তি দামেই বৈদেশিক মুদ্রা কিনে দেশে আনছে। কিন্তু চাহিদা না থাকায় তা কাজে লাগাতে পারছে না। সূত্র: নয়া দিগন্ত

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন