রাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিভক্তি, উত্তেজনা

  10-04-2018 06:00PM

পিএনএস, রাবি প্রতিনিধি : বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে সারাদেশে চলমান আন্দোলন সরকারের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে স্থগিত করলেও মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) আবারও আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচি স্থগিত করলেও রাবির বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিজেদের ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ দাবি করে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের নেওয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার (৯ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে টানা সাড়ে ৫ঘণ্টা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধের পর সন্ধ্যায় আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছাত্র প্রতিনিধিদের আলোচনার পর আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসলেও, তা মানতে রাজি নয় রাবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ। যাদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো।

সোমাবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আবারও আন্দোলনে নামার জন্য আহ্বান জানান বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে বিভিন্ন পেজে ও মেসেঞ্জার গ্রুপে সেই পোস্ট শেয়ার করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরা আজও ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করেছে।

এরপর আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি সিনেট ভবনের সামনে পৌঁছালে আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে সেখানে পুলিশ এসে পুলিশ এসে জড়ো হয়। সেখানে বামপন্থীরা মিছিলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মহাসড়ক অবরোধের জন্য আন্দোলনকারীদের প্ররোচিত করার চেষ্টা করে। আন্দোলনকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করেন কোটা সংস্কার আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির নেতাকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বিডির সদস্যরা। বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে বারবার আন্দোলনকারীদের নিয়ে প্রধান ফটকের দিকে যেতে চেষ্টা করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ মাইকে ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনকারীদের বিভ্রান্ত না হতে ও শান্ত করতে চেষ্ঠা করেন।

পরে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে আসেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় আন্দোলনকারীদের একাংশ সেখান থেকে সরে যান। কিন্তু বামপন্থীরা আন্দোলনকারীদের একাংশকে নিয়ে সিনেট ভবনের সামনেই থেকে যায়। এসময় বাম সংগঠনের ১০/১২ নেতাকর্মী মাইকে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে আন্দোলনকারীদের সাড়া না পেয়ে তারা সেখান থেকে সরে যায়।

পরে উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেন। দুপুর দেড়টার দিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আহ্বায়ক কমিটি ও দুপুর ২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেন বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন রাবি শাখার সমন্বয়ক মাসুদ মুন্নাফ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ অনুযায়ী আমরা এক মাসের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছি। কিন্তু আজ সকালে এক ধরনের কুচক্রী মহল ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে আন্দোলনে নিয়ে আসে। তারা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং নিজেদের ক্রেডিট নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

অপরদিকে, বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা দুপুর ২টায় পরিবহন মার্কেটের সামনে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে। তারা দাবি করে- শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা কোটা সংস্কারের আন্দোলন করছে। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রেখে আজ (বুধবার) বেলা ১১টায় বিক্ষোভ সমাবেশ করবে তারা। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণে স্পষ্ট বক্তব্য না পাওয়া পর্যন্ত রাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। এর পর তারা কর্মসূচি স্থগিত করেছে বলে শুনেছি। এর পরও যদি অন্য কোনো পক্ষ ক্যাম্পাসে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্টের চেষ্টা করে, তবে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ বুধবার (১১ এপ্রিল) সব বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা রুটিন অনুযায়ী চলবে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীরা কোটা সব মিলিয়ে ১০ শতাংশ করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন