প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে স্বজনদের কাছে আহত মোরশেদা

  11-04-2018 10:49AM


পিএনএস ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রী মোরশেদা খানমকে চিকিৎসা শেষে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেয়ায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে এগারটার দিকে হল ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশা মোরশেদা তার পায়ের রগ কেটে দেয় বলে ছাত্রীদের অভিযোগ।

আহত মোরশেদাকে তার স্বজনেরা রাজধানীর মগবাজারের বাসায় নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

কবি সুফিয়া কামাল হলের সিনিয়র আবাসিক শিক্ষক শামীম বানু জানান, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেখানে যাই। আহত শিক্ষার্থীকে সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাকে স্বজনের সঙ্গে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, ‘ছাত্রীর সামান্য পা কেটে গেছে। তার আঘাত গুরুতর না। তবে এটা বড় অপরাধ। আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’

রগ কাটা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না না, এমন কিছু না।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর অন্য শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে সবাই হলের নিচে নেমে অবস্থান নেয়। তাদের বুঝিয়ে পরবর্তীতে রুমে নেওয়া হয়েছে।’

শামীম বানু বলেন, ‘অভিযুক্ত ছাত্রীকে প্রক্টর বডির হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি দেখছে।’

মোরশেদাকে দেওয়া চিকিৎসা সম্পর্কে সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ইমারজেন্সির মেডিক্যাল অফিসার ডা. গালিব বলেন, ‘রাত দেড়টার দিকে মোরশেদাকে নিয়ে আসেন চার-পাঁচজন। তার সঙ্গে যারা ছিল তারা পরিচয় দিতে চাচ্ছিল না। মোরশেদার পায়ের পেছনে ও সামনে কেটেছে। পেছনের কাটা একটু গভীর। ড্রেসিং করেছি, সেলাই লেগেছে।’

মোরশেদার আঘাত কীভাবে লেগেছে জানতে চাইলে ডা. গালিব বলেন, ‘আসলে আমার কাছে যখন এসেছে, তখন আমি চিকিৎসাকে প্রাধান্য দিয়েছি। এটা ইচ্ছাকৃত, না কেউ আঘাত করেছে, তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

সুফিয়া কামাল হলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থীজানান, রাতে মোরশেদাসহ একাধিক শিক্ষার্থীকে হল শাখা ছাত্রলীগের সভানেত্রী ইফাত জাহান এশা ডেকে ৩০৮ রুমে নেন। পাশের ৩০৭ রুমেই এশা থাকেন। তাদের ডেকে কোটা আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণ জানতে চান। তখন কথাকাটাকাটি হয়। এরপর মোরশেদা খানমকে আঘাত করেন। এতে তার পা কেটে যায়। এই খবর পাওয়ার পর অন্য ছাত্রীরা সেখানে যায়। এরপর সবাই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা বের হয়ে হলের বাগানে অবস্থান নেন।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- কোটা সংস্কার করে ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা, কোটা প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া, চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া এবং চাকরি ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্ক ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা।

এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত রবিবার দুপুরে কোটা সংস্কার দাবিতে শাহবাগে জড়ো হয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের অবস্থানে রাত আটটার দিকে পুলিশ চড়াও হলে সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে এই সংঘর্ষ পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে পুলিশসহ দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। অনেককে আটক করে পুলিশ।

এরপর গতকাল সোমবারও দিনভর বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকালে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জাসান খান কামালের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি বৈঠক করেন।

বৈঠকের পর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তারা সরকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করছেন। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হওয়া সবাইকে মুক্তি দেওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন