দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ

  11-04-2018 11:46AM


পিএনএস ডেস্ক: সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬% কোটা সংস্কারের দাবিতে গত দু’দিনের মতো বুধবারও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সড়ক অবরোধ এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

বুধবার (১১ এপ্রিল) সকাল থেকেই কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ আন্দোলনকারীরা।

সরকারি চাকরিতে ১০% কোটা চালুর দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।

নেতৃত্বদানকারী একজন বলেন, তাদের একটাই বক্তব্য সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬% কোটা দীর্ঘ তিন যুগ ধরে চলছে। এ ব্যবস্থা সংস্কারের কোনো পদক্ষেপ কোনো ক্ষমতাসীন সরকারই নিচ্ছে না। কিন্তু সময় এসেছে এ বৈষম্য দূরীকরণের। প্রতিবছর যে হারে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে তাতে এ প্রথা সংস্কার অতীব জরুরী। এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, আমরা মুক্তি যোদ্ধাদের অসম্মান করছি না বা তাদের অবদানকে খাটো করে দেখছি না। কোটা একটা সহনীয় পর্যায়ে আনা এখন সময়ের দাবি।

কোটা সংস্কারের দাবিতে গত দু’দিনের মত বুধবারও দিনাজপুর হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।

এছাড়া কোটা সংস্কারের দাবিতে চট্টগামের ষোলশহরে শাটল ট্রেন আটকে দিয়ে বিক্ষোভ করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বুধবার সকাল থেকেই ষোলশহর স্টেশনে শত শত আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জড়ো হয় সেখানে বিক্ষোভ করছেন।

এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বর্জন করে রাস্তায় নেমে এসেছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অন্দোলনকারীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন করারও ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি নগরীর ষোলশহরে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করছে আন্দোলনকারীরা।

মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. আরজু জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন। সকাল থেকে প্রত্যেক বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেছে। আমাদের সঙ্গে অনেক শিক্ষকও যোগ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- কোটা সংস্কার করে ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা, কোটা প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া, চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া এবং চাকরি ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্ক ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা।

এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত রবিবার দুপুরে কোটা সংস্কার দাবিতে শাহবাগে জড়ো হয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের অবস্থানে রাত আটটার দিকে পুলিশ চড়াও হলে সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে এই সংঘর্ষ পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে পুলিশসহ দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। অনেককে আটক করে পুলিশ।

এরপর গতকাল সোমবারও দিনভর বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকালে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জাসান খান কামালের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি বৈঠক করেন।

বৈঠকের পর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তারা সরকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করছেন। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হওয়া সবাইকে মুক্তি দেওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন