ঢাবি ক্যাম্পাসে ফের সমাবেশ শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা

  11-04-2018 12:35PM


পিএনএস ডেস্ক: আজ বুধবারের মধ্যেই কোটা সংস্কারের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা।

বুধবার সকাল ১০টার আগে থেকেই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন।

মঙ্গলবার রাত ৮টায় বুধবারের কর্মসূচির ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা।

একই দাবিতে রাজধানীসহ দেশজুড়ে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও একই কর্মসূচি পালন করছেন।

এতে শামিল হয়ে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

বুধবার সকাল ১০টার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। আবাসিক হলগুলো থেকে ছাত্র ও ছাত্রীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে যোগ দিচ্ছেন।

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

রবিবার কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচি পালনকালে শাহবাগে পুলিশের বাধার মুখে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।

এর পর ওই রাত থেকে সোমবার বিকাল পর্যন্ত পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা দফা দফায় সংঘর্ষে জড়ান।

এর মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে কোটা সংস্কারের বিষয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তখন আগামী ৭ মের মধ্যে কোটা সংস্কারে দাবি পূরণ করা হবে বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেয়া হয়। তখন শিক্ষার্থীরা এ সময় পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন।

তবে আন্দোলনকারীদের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিরূপ মন্তব্য ও জুন মাসে বাজেটের পর কোটা সংস্কার করা হবে বলে অথর্মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যকে ঘিরে ফের মঙ্গলবার থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

এখন শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা আর ৭ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। কোটা সংস্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘোষণা আসতে হবে এবং গৃহীত সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

এ দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে মঙ্গলবারের পর আজও রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন।

আজ এ পর্যন্ত ধানমণ্ডিতে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা মিরপুর সড়ক ও ফার্মগেটে এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা গ্রিন রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস এবং পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করছেন।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগ সভাপতি ইসরাত জাহান এশা কর্তৃক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাম্পাস জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি হলের গেটে ছাত্রলীগের লাগিয়ে দেয়া তালা ভেঙ্গে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে ছাত্ররা। হলের বাইরে আসতে না পারলেও সবগুলোর ছাত্রী হলের ভেতরেও বিক্ষোভ চলে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে ঢাবির উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোরশেদা খানমকে ডেকে নিয়ে মারধর ও পায়ের রগ কেটে দেন ছাত্রলীগ নেত্রী সভাপতি ইসরাত জাহান এশা, এমন অভিযোগ করেন হলের ছাত্রীরা ।

মাঝরাতে ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে সাধারণ ছাত্রীদের ওপর হামলার ঘটনায় ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্রলীগের সভাপতি ইসরাত জাহান এশাকে হল থেকে বহিষ্কার করেন।

অপরদিকে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষর এক বিজ্ঞপ্তিতে এশাকে বহিষ্কার করা হয়।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইসরাত জাহান এশার ৩০৭ নম্বর রুমে মারধর চলছে। হলের এক শিক্ষার্থীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে বলেও তারা অভিযোগ জানায়। অপর একজনের মাথায় সেলাই দেয়া হয়েছে। হলের দুই ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত ছাত্রী মোরশেদা খানমকে চিকিৎসা শেষে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তাকে তার স্বজনেরা রাজধানীর মগবাজারের বাসায় নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

কবি সুফিয়া কামাল হলের সিনিয়র আবাসিক শিক্ষক শামীম বানু জানান, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেখানে যাই। আহত শিক্ষার্থীকে সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাকে স্বজনের সঙ্গে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, ‘ছাত্রীর সামান্য পা কেটে গেছে। তার আঘাত গুরুতর না। তবে এটা বড় অপরাধ। আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’

রগ কাটা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না না, এমন কিছু না।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর অন্য শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে সবাই হলের নিচে নেমে অবস্থান নেয়। তাদের বুঝিয়ে পরবর্তীতে রুমে নেওয়া হয়েছে।’

শামীম বানু বলেন, ‘অভিযুক্ত ছাত্রীকে প্রক্টর বডির হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি দেখছে।’

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন